সোমনাথ হোড় রায়, কলকাতা ২১ এপ্রিল#
ূর দূরান্ত থেকে ওরা এসেছে হাতে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে মিছিল করে ৮ দফা দাবি নিয়ে। ২০ থেকে ৪০ বছরের এক হাজারের বেশি পুরুষ মহিলা, সঙ্গে কিছু বাচ্চাও আছে, যাদের বয়স দশ থেকে বারো। এরা সকলে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত। এইডস নিয়ে তারা বেঁচে আছে চিকিৎসার অবহেলায়। এই রোগ সম্পর্কে মানুষের মনে যে ভীতি ও আতঙ্ক আছে, তার জেরে এদের অবজ্ঞা করা, এদের সংস্রব এড়িয়ে চলার মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে, কুষ্ঠ রোগীদের মতো অভিশপ্ত জীবন নিয়ে, অস্পৃশ্য হয়ে এরা বেঁচে থাকে। এরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীরা এদের চিকিৎসা করতে চায় না। কোনো কারণ, অজুহাত দেখিয়ে এদের উপেক্ষা করা হয়। অথচ সংক্রামক রোগ বলতে যা বোঝায়, এইচআইভি এইডস সেরকম কোনো সংক্রামক রোগ নয়
এইডস রোগী যারা এসেছিল, তাদের দেখলে বোঝার উপায়ই নেই যে তারা আক্রান্ত। বেশভূষা, পোশাক পরিচ্ছদ, শ্রী-সৌষ্ঠব অন্যান্য সব স্বাভাবিক মানুষের মতো। ওরা এসেছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলা এবং উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে দল বেঁধে, মিছিল করে, বৈশাখের নিদাঘ দিনে। সেদিন ২০ এপ্রিল রোদের তেজ একটু কম ছিল, তাপমাত্রা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। ওরা জড়ো হয়েছিল কলকাতার ধর্মতলার এসপ্ল্যানেড ইস্টের ট্রাম টার্মিনাসে — রানি রাসমণি রোড থেকে সমাবেশের স্থান পরিবর্তিত হওয়ায়। সকাল দশটা থেকে ওরা এসে উপস্থিত হতে শুরু করে। প্রথম থেকেই পাঁচটি দাবি ছিল :
১) সংসদে এইচআইভি বিল পেশ করতে হবে ২) প্রতিবন্ধীদের মতো চিকিৎসার জন্য ট্রেনে, ট্রামে, বাসে বিনামূল্যে যাতায়াতের জন্য পাসবই দিতে হবে। ৩) প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে এই এইডস আক্রান্তদের প্যাথলজিকাল পরীক্ষা সহ অন্যান্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, বিনামূল্যে ওষুধ দিতে হবে। ৪) প্রতিটি এইচআইভি আক্রান্ত মানুষকে বিপিএল তালিকাভূক্ত করতে হবে। ৫) এইচআইভি আক্রান্ত অনাথ শিশুদের শিক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা সরকারি হোমে করতে হবে। এই পাঁচটি দাবির সাথে নতুন তিনটি দাবি যোগ হয়েছে,
৬) সরকারি সংস্থাগুলিতে এদের সংরক্ষণ দিতে হবে। ৭) অন্যান্য বেকারদের মতো এইচআইভি আক্রান্তদের বেকার ভাতা দিতে হবে। ৮) এইচআইভি আক্রান্ত শিশু মহিলা পুরুষ সবাইকে বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে।
২০০৪ সালে ওদের এই সংগঠন ণ্ণবেঙ্গল নেটওয়ার্ক অফ পিপলস লিভিং উইথ এইচআইভি এইডস’ গড়ে ওঠে। তারপর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই দাবি নিয়ে ওরা চারবার সমবেত হল। ওদের সমাবেশে অনেককে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ আসেনি বা আসতে পারেনি, এই রাজ্যের এসইউসিআই সাংসদ তরুণ মণ্ডল ছাড়া। তরুণ মণ্ডল তাঁর সাংসদ কোটায় পাওয়া টাকা থেকে ওদের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে হোম-আবাসন তৈরি করে দিচ্ছেন। ওদের জন্য সংসদের ভেতরে ও বাইরে লড়াইও করছেন বলে জানালেন।
Leave a Reply