আশায় বাঁচে চাষা। কত যত্নআত্তি করেই না নিজের জমির ফসলকে রক্ষা করতে চায় চাষি। খরা-বন্যা, পোকামাকড়, আগাছার আক্রমণ তো আছেই, তার ওপর আছে বাজারের অনিশ্চয়তা। প্রত্যেক চাষির জীবনে অনেকরকম বিপদ আসে, ফসল নষ্ট হয়, ফসল ফলিয়েও দর পাওয়া যায় না, তবু আশায় বাঁচতে গিয়ে মরে চাষা।
গণতন্ত্র নিয়েও ভারতবাসীর অভিজ্ঞতা অনেকটা পোড়খাওয়া চাষির মতোই। বহু সরকার, বহু নেতা, বহু দল আর জোট তার দেখা হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর ষোলোটা লোকসভা নির্বাচন তার দেখা হয়ে গেছে। অভিজ্ঞতাটা সবমিলিয়ে তেমন সুখকর নয়, তবু আশায় বাঁচে ভারতবর্ষের মানুষ।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগের দিন। বাসের ভিতর কাঁপাকাঁপা হাতে হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে টাল সামলাতে সামলাতে এক প্রবীণ বলে ওঠেন, ণ্ণআর মিলিজুলি সরকার দেখতে চাই না। মোদি এসে একলা হাতে যদি কিছু কাজ করতে পারে তো করুক।’ তাঁর যা বয়স, তাতে মনে হয়, তিনি পঞ্চাশ-ষাটের দশকের কংগ্রেস সরকার দেখেছেন, চৌত্রিশ বছরের বাম সরকার দেখেছেন, নব্বই দশক থেকে হরেক কিসিমের মিলিজুলি সরকারও দেখেছেন। দেখে তিনি নিশ্চয় আপ্লুত নন, তবু আরও কিছুটা দেখতে চান। কিছু কাজ চান তিনি — রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে কাজগুলো আশা করে এবং দাবিও করে মানুষ — সেই কাজগুলো হোক এবার।
বিজেপি দল গঠন হওয়ার পর প্রথম ভোটে দাঁড়িয়ে একটা নাড়া উঠেছিল, ‘সবকো দেখা সবকো পরখা, অবকি দো ভাজপাকো মওকা’। এবারে ভাজপা বা বিজেপি অর্থাৎ দলের প্রসঙ্গ ছাপিয়ে উঠে এসেছে এক ব্যক্তির আবাহন, মোদিকে চাই। কাজ চাই।
কাজ মানে জল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি …। কাজ মানে স্কুল, হাসপাতাল, যানবাহন …। কাজ মানে প্রত্যেক শক্তসমর্থ যুবক-যুবতীর উপার্জনযোগ্য কাজ। কাজ মানে বেঁচে থাকার সম্বল, জীবনের রসদ। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও জীবনের আশা ছাড়ে না যে, তার নাম মানুষ। নিজের স্বপ্ন আর সামর্থ্য দিয়েই সে বারবার গড়েপিটে তোলে ক্ষমতার হাজারো কিসিম। আপাতত — মোদি।
Leave a Reply