‘সুমঙ্গল সবকা মঙ্গল’। টিভিতে প্রায়ই শোনা যায় বিজ্ঞাপনের এই বাণী। এর স্বরূপ বোঝা গেল হালফিল সুমঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একটি বিজ্ঞাপনে। বড়ো দৈনিক পত্রিকার এই ঢাউশ বিজ্ঞাপন ঘোষণা করেছে, আলুতে যত খুশি বিনিয়োগ করুন। দুটো স্কিম, একটাতে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে ১৫ মাস পরে ১ লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার ওপরে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে; অন্য স্কিমে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে ওই সময়ের মধ্যে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। এত বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে? সুমঙ্গল বলছে, চড়া দামে আলু বিক্রি করে, দরকার হলে বিদেশে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করা হবে। সেই টাকা আলুর বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
ওই খবরের কাগজ থেকে পাওয়া অন্য একটি সংবাদে জানা যাচ্ছে, এবছর আলুর চাষ আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে, ফলনও কমেছে। অন্য রাজ্যেও ফলন ভালো নয়। আমি নিজেই দেখেছি, মাঠ থেকে আলু যখন উঠছে, তখনই আলু চাষের অঞ্চল হুগলি-বর্ধমানে খুচরো বাজারে আলুর দর ৯-১০ টাকা কেজি। অবশ্য একথা ঠিক, এবছর ফলন কম হওয়ায় আলুচাষি এখন ভালো দর পাচ্ছে।
কিন্তু সুমঙ্গল সকলের কী মঙ্গল করতে চায়? তারা বলছে, বাজারে যখন আলুর চাহিদা বাড়বে, তারা বেশি দামে আলু বিক্রি করে অনেক লাভ করবে। তাতে আলুচাষির কী লাভ? যাদের ভাতের পাতে আলু বা আলুর তরকারি না হলে চলে না, সেই খুচরো ক্রেতাদের কী লাভ? লাভ তো শুধু তাদের, যারা আলুতে লক্ষ-কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারে সেই বড়োলোকেদের। সুমঙ্গল তাদেরই মঙ্গল চায় আর সেই সুবাদে নিজের পকেটেও কিছুটা ভরে নিতে চায়। সেটাই তো যুগের ধর্ম!
কিন্তু সেই কাজটা সকলের মঙ্গলের কাজ মোটেই নয়। চলতি ভাষায় সুমঙ্গলের এই কাজটার নাম ফাটকাবাজি। এটা আজ সমাজে একটা চালু পেশা। এতে কিছু লোকের পকেটে টাকা আসে বটে, কিন্তু সমাজের অধিকাংশের অমঙ্গলও বেশ কিছুটা হয়। যেমন, এইভাবে আলু নামক একটা সবজিকে মাঝখানে রেখে ফাটকাবাজির খেলায় বাজারে আলুর দর বেড়ে যায়। আমরা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হাহুতাশ করি। রাজনৈতিক দলগুলো ময়দান কাঁপায়। টিভিতে বুদ্ধিজীবীরা টক শো’তে বসে তর্ক করে। সাধারণ মানুষ ১ কেজি আলু কিনতে গিয়ে দামের চোটে ঘায়েল হয়ে আড়াইশো গ্রাম কিনে নিয়ে ঘরে ফেরে।
Leave a Reply