• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • ২০১২-র আগস্ট অব্দি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

ভোজপুরী রামলীলায়

March 17, 2013 admin Leave a Comment

সুকুমার হোড় রায়, কলকাতা#

গ্রীষ্মের দিন, সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হতে চলেছে। লোকজনও আসতে শুরু করেছে। একসাথে দু-জন থেকে চারজন ছজন করে দল বেঁধে এসে হাজির হচ্ছে। কারো হাতে ভুট্টা, ভুট্টার দানা ছাড়িয়ে খেতে খেতে, কারো হাতে বাদামের ঠোঙা, কারো শালপাতার তৈরি ঠোঙাতে লিট্টা, তার সাথে আদা, রসুন, ধনেপাতা ও আমলকী বা ওল বাটা দিয়ে চাটনি। সকলে এসে ঘাসহীন অপ্রশস্ত লম্বা জমিতে পেতে বিছানো শতরঞ্চি-ত্রিপলে এসে বসে পড়ছে। পরিচিত কেউ এসেছে কিনা, তা দেখে বার করার জন্য কেউ কেউ বসার আগে চারদিক ভালো করে দেখে নিচ্ছে। অনেকে আধবসা অবস্থায় গোড়ালি দুটো তুলে, দু-পায়ের আঙুলের ওপর দেহের ভর ও ভার রেখে এদিক-ওদিক, সামনে-পিছনে ভালো করে দেখে নিচ্ছে। কেউ কোমরে রাখা খৈনির ডিব্বা, ধুতির গোজ থেকে বার করে, খৈনি ডলতে শুরু করেছে। ভিড় বাড়ছে। আর তা দেখে চাওয়ালারাও এসে হাজির হচ্ছে, ণ্ণআইয়ে গরম চায়ে পিজিয়ে’ বলে হাঁক দিয়ে। ওই ভিড়ের মধ্যে লোহার পাতলা পাত দিয়ে তৈরি উনুনে, কাঠকয়লা বা গুল দিয়ে, তার ওপর সরু লম্বা টিনের তৈরি নল লাগানো পেতলের কলসি বসানো। সেই উনুন সমেত কলসি বয়ে নিয়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করার জন্য উনুনের দু-ধারে লোহার তার দিয়ে তৈরি করা হ্যান্ডেল, ধরার জন্য। এক হাতে উনুন সমেত দুধ আর জল মিশিয়ে ভরা পেতলের কলসি। আরেকহাতে বাঁশের তৈরি গোল লম্বা ঝুড়ি। ঝুড়িতে ভাঁড়, চা-পাতা, চিনি, কয়লা বা গুল রাখা। বাঁশের তৈরি লম্বা গোল হাতলওয়ালা ঝুড়ি ধরে এগোতে থাকে। কলসিতে দুধ আর জল গরম হচ্ছে। কেউ চা চাইলে পাতলা ধোয়া পরিষ্কার সাদা কাপড়ে কৌটো থেকে গুঁড়ো চা-পাতা দিয়ে, ওই দুধ মেশানো গরম জল দিয়ে চা তৈরি করে, চায়ের ভাঁড় ডান হাত দিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে পয়সা নিয়ে, ওই ভিড়ের মধ্যে পথ করে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে। সুর করে টেনে ণ্ণআইয়ে গরম চা’ বলে হাঁক দিয়ে ভিড়ের মধ্যে পথ করে এগোচ্ছে।
রামলীলা মঞ্চের সামান্য দূরে বসে আছে মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল, কালো লম্বা দশাসই চেহারার ছাপড়াইয়া ফল্গু। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটো থেকে যেন আলো ঠিকরে পড়ছে। হাঁটুর ওপর ধুতি তুলে পরা। মাথায় গামছা ফেট্টি বেঁধে মোটা কাপড়ের খাঁকি জামা পরা প্রতাপগড়িয়া গণপত রেলওয়ে খালাসিদের নেভি ব্লু জামা পরা বালিয়ার সুকালু একসাথে বসে আছে। এরা তিনজনে একই গ্যাঙয়ের রেলওয়ের গ্যাংম্যান। চাওয়ালা আসতে দেখে, চেঁচিয়ে ফল্গু বলল, ‘কাহো জিলা অবেধান্দা শুরু করলেবানি। কাল কামমে নেই খে যাবোকা, তোহার সবেরে ডিউটিবা, ক্যা আজ কাম মে গইলেবানি না ছুট্টি করল। যব তুহু এ ধান্দা শুরু করলেবানি, তব তোহরাকে আর কোনো চিন্তাবানি। মালামাল হোয়াইলে বানু, ক্ষেতীবাড়ি খাতির আউর ভীজমিনুয়া — ভইস মোললেবানি।’ চাওয়ালা রামলাল ফল্গুকে বলল, ‘আরে উ বাত নেই যে বানি, ইয়ে ধান্দা কিতনে দিন চললেবানি, মাহিনা ভরকা, যিতনে দিন রামলীলা বা উতনা এ ধান্দাবা।’ ‘চা কিতনে মে বেচত হো’ — গণপত রামলালকে জিজ্ঞেস করে। ‘চারে আনা’ — রামলাল বলতেই গণপত বললো, ণ্ণতোরে চায়ে বহুত মাহাঙ্গা বা, ইতনে কাহে হো? এক ভাঁড় চায়েমে চুয়ান্নি লেওত। জ্যাদা নেহি লেলেবানু। তোরা চা পাত্তি আচ্ছাবা, চা পাত্তি আগার তোর আচ্ছা বাটে, আচ্ছাসে চা পাত্তি মারকে তিন ভাড় চা দেওত।’ রামলাল বলল, ‘পিবো তো, আচ্ছাসে চা পাত্তি মারকে, চায়ে বানাকে দেলেবানি।’ — ‘তব দেওত তিনগো চায়ে।’ রামলাল ঝুড়ি থেকে স্টিলের মগ বার করে মগের ওপর পাতলা ধোয়া পরিস্কার সাদা কাপড় দিয়ে, কাপড়টা মুড়ে বাঁহাত দিয়ে ধরে রেখে, কৌটো থেকে চা পাতা বার করে ক-চামচ চা-পাতা দিল। তারপর কলসি থেকে দুধ মেশানো গরম জল ঢেলে, চা পাতা দেওয়া দেওয়া কাপড়টা পাকিয়ে চিমটা দিয়ে চেপে নিংড়ে, চা-পাতা সমেত কাপড়টা ঝুড়িতে রেখে দিয়ে, ভাঁড় বের করে, ভাঁড়ে চা ঢেলে ডান হাত দিয়ে ভাঁড় বাড়িয়ে দিতেই রামলছমন এসে হাজির হল। আর সুকালু বলে উঠল, ‘আগইলবানু রাম লছমনিউয়া, চা পিতে দেখকে হেনে আ গইলবানি।’
রামলছমন ডান হাত দিয়ে গোঁফের ডান দিকে একটা মোচড় দিয়ে সুকালুর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল, ‘হাম তোরে মাফিক হারাম নেহি পিওত। তু আপনা পয়সা পিওত কেয়া, তু হামোয়াকে কহত, চা নেহি মিলত। দেখে হো এগো চা দিওত’ — বলে লছমন ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল। ফল্গু বলল, ‘লছমন কো এগো চা দেলেবানি। কিতনা হোয়েত, এলেয়ত হো’ — বলে গণপত বুক পকেট থেকে এক টাকা বার করে রামলালকে দিল। চায়ে চুমুক দিতে দিতে ফল্গু রামলীলা মঞ্চের দিকে চেয়ে দেখতেই, জংবাহাদুরকে দেখতে পেয়ে বলল, ‘আর জংবাহাদুর হোনে খাড়া বা, বুলাও তানি ওকারাকে’, রামলছমন চেঁচিয়ে হাত নেড়ে এসে হাজির হয়ে বলল, ‘চা পি লেনে কা বাদ হামুয়াকো বুলাউবানি। হাম মনচ্‌কা সামনে খাড়া হোকর দেখলেবানি তুলোগ চা পিলেবানি, জব তু দেখত হামুয়া লোগ চা পিওত, তব ক্যাহে নেহী আওত’। গণপত বলতেই ফল্গু বলল, ‘আগে তোকে নেইযে দেখলেবানি, চা পিনে সময় তোহারা দেখলেনে সে, বুলাইবোনেহী ক্যায়া।’ রামলছমন জংবাহাদুরের দিকে বাঁ চোখটা বন্ধ করে ডান চোখে এক দৃষ্টি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল, ‘কাঁহি তোকে, কিসি হোটেল, চা-মিঠাই দুকান-মে চা পিওত নেহি, নেহি মিলত ক্যায়া, আওত হেলে আওত, হামারা কো পাশ বৈঠো হো’। জংবাহাদুর এগিয়ে এসে বসতেই, রামলছমন ওর ডান হাতটা জংবাহাদুরের মাথায় রেখে হাতের তালু  দিয়ে জংবাহাদুরের মাথার তালু চেপে ধরে বলল, ‘আজ কোনো হোটেল, চা-মিঠাই দুকানমে পানিয়া উঠায়ত, বর্তন মেলায়ত বাতা সারোয়া। কেয়া খানা মিলত, কিতনে ভাঁড়োয়া চা পিওত বাতা; হেনে রামলীলা শুনত। তোরে সারুভাই যাহারহত, ও বালগাছিয়া মে রামলীলা না হোয়ত কেয়া, হেনে দিহাতী লোগোকা রামলীলা দেখত‌’। জংবাহাদুর রামলছমনের কথায় সায় দিয়ে কথার রেশ ধরে বলে, ‘হ্যাঁ আপনা গাঁওসে নিকাল পড়ি, আব গাঁওমে রহকে কেয়া করি, কোই কাম ধান্দা নেহী, খেতি বাড়ি নেহী, খেতো সে আনাজ কাটকে উঠালেলেবানি। রামলীলা দল লেকর কলকাত্তা আউর বাঙ্গাল দোসরা শহর রামলীলা করোত’। রামলছমনের মাথার ওপর ডান হাতের তর্জনী কয়েকবার ঘুরিয়ে বলল, ‘এমে যো কামাই হোয়ত, খরচাপানি নিকালকর চলা যাওত’। বলে রামলছমণ, ফল্গু, গণপত, সুকালুর দিকে মুখ করে ফিরে চেঁচিয়ে বলে উঠল জংবাহাদুর, ‘ণকা সারুভাই, উহা যোলোগ রামলীলা করোত, সব্বোসারোয়া কালকাত্তিয়া বা, কালকাত্তা মে বসোরনেওয়ালে ছাপরা, আরা, ভোজপুরকাবা। এক্কই দিন তুলোগ সব্বো জংবাহাদুরুয়া কা সাথ হোনে যাওত, রামলীলা দেখে খাতির। কব্ব হোওত জংবাহাদুরুয়া সে পুছোত। জংবাহাদুরুয়া বাতোয়ত। হামুয়ো যাওত, উ রামলীলা দেখোত হো, যোনে রামবানি ও সারোয়া থানাকা হেড জমাদার বা। রাবনুয়া যো হুই, ওহ ওহ মোওগী থানামে ঝাড়ু লাগায়োত, সাফাই কা কাম করোত। বালগাছিয়াকা রামলীলা কেয়া দেখোত, কেয়া শুনোত, জানোত হো। রামুয়া লঙ্কামে রাবনুয়াসে ভেটোয়াকে কহোত, ইয়ে রাবণ তু সীতা মাঈকো দিবো কেয়া, নেই দিবো। রাবনুয়া জোর চিল্লাকে কহোত, নেই দিবো। তু যোকর সকত, করলেবানি। রামজী আপনা মোচায়া রগড়তে হুয়ে কহোত, তু নেহি জানোত, ম্যায় ইহাকে থানাকা হেড জমাদার বা। তু যব কাল সবের মে বাজার মে সবজি বেচবো করি, হাম তোকে পাকড়কর লক-আপ কর দেলেবানু।’ হো হো করে সকলে প্রাণ খুলে হাসতে শুরু করল। হাসতে হাসতে ফল্গু বলল, ‘এ রামলছমন, তু জংবাহাদুরকা সারুভাই কা হোনে। রামলীলা দেখে খাতির হইলবানি কেয়া। তোহরা কুছ খিলাইছে কেয়া। চা-নাস্তা করাইলে কেয়া।’ ‘ণনেহি কুচ্ছ নেহি, উতনে রাতিয়া ভুখে আপন ঘর লট আওত।’ রামলছমন বলতেই ফল্গু রসিকতা করে বলল, ‘জংবাহাদুর তোকে সাথ লেগইলবানু। জংবাহাদুর তোহারাকো কুছ না খিলাইবো করি কচৌরী-ভাজাপুরি, জালেবি, চাউয়া, না পিলাউবোবানি। ও সারোয়া কেয়া খিলাইবো, ওকার পাস কব্বো পয়সা না রহোত। কাঙালি তরহ ইধার উধার ইসসে উসসে মাংগকে খাওত।’ জংবাহাদুর রামলছমনের কথার প্রতিবাদ করে বলল, ণ্ণইয়ে ঝুট বললেতানি, একার ঝুট বলনেকা আদতবা।’ গণপত, সুকালু দু-জনের ব্যাপার স্যাপার দেখে, কথা শুনে, মৃদু হেসে ওদের মুখের দিকে তাকালো। ফল্গু জংবাহাদুরকে বলল, ‘আরে জংবাহাদুর কালসে তোহার রাতমে ডিউটি বা, তু ক্যায়সন রামলীলা দেখবোকরি। উসারোয়া কেয়া ডিউটি করোত। কাম কুচ্ছ নেহি করোত, ইধার উধার ঘুমোত, এ হোটেলসে, উ চায়ে মিঠাই দুকানসে মাঙ্গকে খাওত, হারাম মাঙ্গকে নেহিতো পানিয়া উঠাকে, বর্তানুয়া মোওলাকে খানা খাওত। ওকার চাহে রাত চাহে দিনমে ডিউটি হো’। গণপত ও সুকালি এক সঙ্গে বলে উঠলো, ‘ণহেনে আনে কা পহলে কে কার হোটেল সে খানা খাকর আইলে।’ জংবাহাদুর বলল, ‘কেকরা নেইযে, ভুখ লাগলবারো, খাওলবিনা হাম হেনে চল আইলেবানু।’ জংবাহাদুরের ‘ভুখ লাগলবানি’ শুনে রামলছমন বলল, ‘ভুখ লাগল, তো এক্ক কাম করোত, হনুমানজী যব সীতামাঈ পাস আওত, সীতা মাঈ হনুমানজী কো কেলা খানে দেওত। তু হনুমানজীসে কেলা মাঙ্গকে খাওলেওত। হনুমানজীসে কহত একেলে সব্ব কেলা না খাওত, হনুমানজী হামে কুছ দেওত, হামারা ভুখ লাগোত। আরে তোরা পুছ কা হোয়ত, কোন কাটলেতত।’ ফল্গু, গণপত, সুকালুর উদ্দেশ্যে রামলছমন চেঁচিয়ে বলতে থাকে, ‘দেখো জংবাহাদুরুয়া পিছে পুছ নেহি, কোন কাট দেওতহো।’ রামলছমনের কথা শুনে ওরা সকলে হো হো করে হেসে উঠল।

মিঠঠরাম একপ্রকার প্রায় দৌড়তে দৌড়তে এসে পৌঁছতেই শ্যামলাল দেখতে পেয়ে বলল, ‘আরে মিঠঠুরাম আগইল, আবো মিঠঠুরাম আবোইছে। মিঠঠুরাম  গামছা দিয়ে দু-হাত ও মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, আভিতক শুরু না হোবাইছে। ছে তো বাজ গইছে, হাম সমখইছে শুরু হো গইছে।’ গামছাটাকে দু-হাতের দু-দিকে পাখা দিয়ে বাতাস করে মাছি তাড়ানোর মতো করে, হাতের দুদিকে দুবার করে ঝেড়ে নিল।

ছোটেলাল মঞ্চের সামনে এসে পৌঁছে চারদিক একবার ভালো করে দেখে নিল। জানকীপ্রসাদকে দেখতে না পেয়ে দুপায়ের গোড়ালি দুটি উঁচু করে খুঁজে দেখতে শুরু করতেই, ‘আরে ছোটেলাল হাম হেনে বা, হেনে আও’ — জানকীপ্রসাদ হাত নেড়ে চীৎকার করে ডাকতেই, দেখতে পেয়ে ছোটেলাল ভিড়ের মধ্যে দিয়ে রাস্তা করে নিয়ে এগিয়ে এসে জানকীপ্রসাদের কাছে এসে বসে পড়ে বলল, ‘হাম বলে, ক্যা জানে শুরু হো হইলবানি। হামরা পহুচনে দের ভইল। এগো সওয়ারি পহুচাকে, মালিক কো রিক্সা আউর রুপিয়া জমা করকে দৌড়তে দৌড়তে আগইলবানি।’ ছোটেলাল ভালো করে গামছা দিয়ে মুখ ও দুহাতের ঘাম মুছে নিয়ে বসতেই জানকীপ্রসাদ জিজ্ঞাসা করল, ‘কুছ খাকে আইলেবানু।’ ছোটেলাল বলল, ‘নেইয়ে, সময় কাঁহা মিললেবারো। আব রাতিয়া খাইবোকরি, ফো-চার ঘনতা কা বাতবা ফিলহাল রামলীলা দেখলেবানি। যাতে ওয়াক্ত কাহীভি কুছ হোটেলুয়াবা, উসি হোটেলুয়ামে কিসি হোটেলমে সবজি রোটি দহি নেহিতে। রোটি খা লেলেবানি।’ — ‘ছোড় দে উসব, আজ তু হামার হেনে খা লেনেবানি। হাম তোরে খাতির জাদা সবজি, রোটি বানাকে রাখলেবানি।’
জানকীপ্রসাদ ইউনিয়ন জুটমিলের দারোয়ান। জুটমিল-অ্যাসফাল্টম কারখানার সামনে, কলকাতা পুরসভার ধাপায় রেলওয়ে লাইনের মাঝখানে একপ্রস্থ লম্বা লম্বা ঘাসহীন মাঠের মতো জমিতে এই রামলীলা হচ্ছে। এই ঘাসহীন জমিতে বাঁশ, ত্রিপল দিয়ে ঘিরে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে শামিয়ানা টাঙানো পুরসভার রেলওয়ে লাইনের ধারে ব্রিজের সামনে কলকাতা পুরসভার আলোকস্তম্ভের হ্যালোজেন, মার্কারির আলো। জুটমিল ও অ্যাসফল্টম কারখানার প্রাচীরের ওপর দিকে কাঁটাতারের বেড়ায় দুটো অ্যাঙ্গেল রডের ভেতরে প্রাচীরের ধারে ল্যাম্প পোস্টের আলোতে এই ঘাসহীন ফাঁকা জমিটা আলোয় আলোকিত হয়ে থাকে। সেই আলো খুব তীব্র না হলেও রাতে দর্শকদের দেখতে কোনো অসুবিধা হয় না। সন্ধ্যের পর কলকাতা পুরসভার রেল কাঠের বগিতে জঞ্জাল নিয়ে ধাপায় যাওয়া বন্ধ থাকে । শুধু ব্রিজের ওপর মানুষের যাতায়াত ও যানবাহন চলাচল ছাড়া পুরো এলাকাটা একরকম শান্ত নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এই রামলীলা চলাকালীন দর্শকরা অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্য্য হারিয়ে অস্থির হয়ে ওঠার মতো হয়। অস্থির হয়ে উঠছে, এমন সময় শোনা গেল, — ‘প্রভু রামজী কা সন্দেশ লেকর জানকী পাস চলে মহাবীর হনুমান।’ দু-দিক থেকে হাত দিয়ে টেনে মঞ্চের পর্দা সরিয়ে দেওয়া হল। মঞ্চে ঢোল, সারেঙ্গী, বাঁশি, মন্দিরা, খঞ্জনী, জগঝম্প নিয়ে বসে বাজিয়ের দল গানের সাথে বাদ্য সঙ্গত করে। মঞ্চের ডানদিক থেকে গদা কাঁধে নিয়ে হনুমান প্রবেশ করল। মঞ্চের ডান ও বামদিকে কাঠের বাটাম দিয়ে তৈরি করা ফ্রেমে মেরিন ব্লু কাপড় লাগিয়ে, মঞ্চের ডান ও বাম দুদিকে তিনটি করে কাঠের বাটামের তৈরি ফ্রেম দাঁড় করিয়ে ছ-টি উইংস তৈরি করা হয়েছে। সাজঘরের সামনে ডান-বাঁদিকের উইংস দুটো মঞ্চে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাকি দুদিকে দুটো উইংসের ধারে বাজিয়েরা বসে আছে। চিত্রকূট থেকে হনুমান অশোক কাননে এসে পৌঁছল। অশোক কাননে পৌঁছে চারদিকে উঁকি মেরে ভালো করে দেখে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে রাবণের প্রহরীদের সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে, তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বন্দিনী সীতার কাছে যাবার জন্য এগোতে শুরু করল। এই দৃশ্য দিয়ে আজকের রামলীলার পালা শুরু হল। পালা চলতে চলতে রাত বেড়ে যায়, অনেক রাতে শেষ হয় পালা প্রতিদিন। গ্রীষ্মের রাতে মুক্ত আকাশের নিচে, মুক্ত প্রান্তরে এভাবে রামলীলা চলে।

সংস্কৃতি ভোজপুরী, রামলীলা

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

সম্পাদকীয়

নীমা তেনজিনদের স্বপ্ন কি সার্থক হবে ?

একটি রাজনৈতিক সুইসাইড নোট

এই বিভাগের আরও

দেশের খবর

নিজেদের চাষের খবর দিলেন, দিল্লির আন্দোলনের খবর নিলেন সরবেড়িয়ার চাষিরা

গ্রামে বাড়ছে অভাবী বিক্রি। কৃষক মান্ডির হ্যাপার চাইতে চাষির ভরসা কাছের আড়ৎ।

এই বিভাগের আরও

সংস্কৃতির হাল

মরজীবনের গান গাইতে মিলনের অপেক্ষায় থাকে আজাহার ফকিরের অমর মেলা

ঘরে রাখা শস্যের বীজ ভালো আছে কিনা দেখে নেওয়া হয় ‘শস’ পাতার মধ্যে দিয়ে

এই বিভাগের আরও

খবরে দুনিয়া

‘গান গাইবি না, খাবারও পাবি না’// ফ্রান্সের মেনিল আমেলো’র ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অভিবাসীদের এজাহার

মার্কিন মুলুকে নির্বাচন : বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের একজন সমর্থকের সঙ্গে কিছু আলাপ, কয়েক মাস আগে

এই বিভাগের আরও

পথের খবর

সকালের ডাউন রানাঘাট লোকালে ‘জয় শ্রীরাম’ / ‘ভারতমাতা কী জয়’ গর্জন আর শোনা যাচ্ছে না

জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়েছে লালকেল্লা থেকে, আপনি দেখেছেন?

এই বিভাগের আরও

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • Soumitra Seth on ময়দা কালীবাড়ি, বহরু
  • Suman mondal on চীনের সাথে চুলের ব্যবসা। বেলডাঙার বিদেশ-ব্যাপারী
  • রাজেশ মাহাতে on আদিবাসী কুড়মি সমাজের তিন জেলায় একদিনের অনশন
  • Dipanjan Das on নতুনহাটের মেছুড়ে জয়নালের কীর্তি

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in