যোগীন-এর পাঠানো ণ্ণদি হিন্দু’ পত্রিকার রিপোর্ট থেকে, ২২ ফেব্রুয়ারি #
তথ্য ফাঁস যারা করে, তাদের ইংরেজিতে বলে হুইসল ব্লোয়ার। এই তথ্য ফাঁসকারীদের ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষের সামনে পড়তে হয়, কী দশা হয় তা বোঝা যায় এডওয়ার্ড স্নোডেন বা চেলসি ম্যানিং-এর ঘটনাক্রমের দিকে নজর দিলে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ তো বটেই, এর পর আসে ব্যক্তিগত অসুবিধা, বন্ধুবিচ্ছেদ, আর্থিক অনটন, বেকারত্বের আশঙ্কা এবং আইনি লড়াইয়ের খরচখরচা। সংক্ষেপে গোটা জীবনের ধারাটাই ওলটপালোট হয়ে যায়।
সারা পৃথিবীতেই যারা তথ্য ফাঁস করছে, তাদের এইসব ক্ষেত্রে ‘সহানুভূতি এবং আইনি সহায়তা’ দিতে চেয়ে লন্ডনে তৈরি হয়েছে একটি সংগঠন, ‘হুইসলার ফেলোশিপ অ্যালায়েন্স’। এর উদ্যোক্তা গাভিন ম্যাকফাদেন, লন্ডনের সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের ডিরেক্টর এবং এইলিন চুব, প্রাক্তন স্বাস্থ্যকর্মী, যিনি ইংলন্ডের হসপিটালগুলোতে বয়স্ক রোগীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন।
‘তুমি যদি দুর্ব্যবহারের কথাগুলো প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই তুলে ধরো, তাহলে তোমার মালিক কোনো ব্যবস্থা নেবে না। আর যদি লোক জানাজানি করো, তাহলে তোমার চাকরিটা নাও থাকতে পারে। এই ঘটনায় ঘটছে বিপুল সংখ্যায়।’ — এরকমই বললেন মিস চুব, সংগঠনের প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে, ১৮ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে। মিস চুব নিজের চাকরিটা হারিয়েছিলেন, আইনি লড়াইতেও হেরে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি তৈরি করেছিলেন একটি ট্রাস্ট, ‘কমপ্যাশন ইন কেয়ার’ নামে, তাঁর মতো যাদের দশা তাদের সহায়তা করার জন্য।
‘যখন আমি সরকারের চাকরি ছেড়ে দিলাম, কেবল তখনই আমি বুঝতে পারলাম, কীভাবে আমার প্রাক্তন সহকর্মীরা ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ঝুটা প্রমাণ তৈরি করেছে’ — বললেন, রে ম্যাকগোভের্ন, সিআইএ থেকে অবসর নেওয়া, বর্তমানে যিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী। ইনি ২০০৬ সালে বন্দিদের অত্যাচারে সিআইএ যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁর ণ্ণইন্টেলিজেন্স কমেন্ডেশন’ পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি বা এনএসএ-র বর্ষীয়ান কর্মকর্তা থমাস ড্রেক ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১-এর পরের ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা মনে করালেন, ণ্ণজাতীয় নিরাপত্তার দোহাই পেড়ে আমাদের শপথ নেওয়া সংবিধানের ধারাগুলোকে ভাঙা হচ্ছিল। আমি তখন বুঝতে পারিনি, ভবিষ্যতে আমাকে ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’ তাঁর মতে, মার্কিন সরকারের কাছে এমন কিছু তথ্য ছিল, যা লোক জানাজানি হলে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাটা এড়ানো যেত। তিনি ঠিক করেছিলেন, ণ্ণযতদিন পারা যায়, ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই লড়াই চালাবেন’, কিন্তু তার মাধ্যমে তিনি পরপর প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে লাগলেন। কংগ্রেশনাল কমিটির সামনেও তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছিলেন সেই নোংরা গোপন তথ্য — কীভাবে রাষ্ট্র তথ্য গোপন করেছে ১১ সেপ্টেম্বর সম্পর্কে।
‘আমি তেজস্ক্রিয় হয়ে উঠেছিলাম’, বললেন ড্রেক। তিনি মিডিয়ার শরণাপন্ন হন ২০০৫ সালে। গুপ্তচরবৃত্তি আইনে ২০১০ সালে তাঁর ৩৫ বছরের হাজতবাসের সাজা হয়। তিনি আইনি লড়াইয়ের ফি না দিতে পারায় তাঁকে বেয়াড়া বলে ঘোষণা করা হয়। তাঁর হয়ে লড়াই করেন জেসলিন রাডাক, মার্কিন জাস্টিস বিভাগের এক প্রাক্তন পরামর্শদাতা। ক্রমে, তাঁর ওপর আনা ১০টি অভিযোগই উঠে যায়।
জেসলিন রাডাক, যিনি এডওয়ার্ড স্নোডেন-এর আইনি পরামর্শদাতাও বটে, তিনি নিজেই ইরাকে পুনর্গঠনের কাজে বিশাল এক দুর্নীতি উন্মোচিত করার দায়ে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। মার্কিন সরকার তাঁর বিমান চড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ‘আমি আমার গোটা জীবনটা তথ্যফাঁসকারীদের সেবায় উৎসর্গ করেছি’, বললেন তিনি।
Leave a Reply