• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • ২০১২-র আগস্ট অব্দি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

এ নৌকা যাত্রীসহ কোনোদিন ডোবেনি, বলে দামোদরের মাঝি ফরিদা

July 2, 2013 admin Leave a Comment

কামরুজ্জামান, বাগনান, ২৮ জুন। কল্পিত স্কেচ শমীক সরকার#

farida-sketchLR

হাওড়া জেলার বাগনান এক নম্বর ব্লকের বাইনান অঞ্চলের পূর্ব বাইনান গ্রামের মেয়ে ফরিদা খাতুন সকাল ছ-টার সময় হাজির দামোদর নদীর ধর্মঘাটার ঘাটে। নিজের ছোট্ট নৌকো নিয়ে। সকাল থেকে একটি দুটি চারটি লোক এবং সাইকেল নিয়ে আরোহীদের নৌকায় করে ধর্মঘাটার ঘাট থেকে দামোদরের ওপারে বাঙালপুরের পারে পৌঁছে দেয়। আবার ওপার থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে ধর্মঘাটার ঘাটে ফিরে আসে। সারাদিন ফরিদা খাতুন এই কাজ করে চলে। তারপর সন্ধ্যের সময় বাড়ি ফেরে।
একদিন নয়, দু-দিন নয়, একইভাবে মাঝির কাজ সে করে চলেছে প্রায় সাত বছর। তার বিনিময়ে প্রতি যাত্রী এবং সাইকেল পিছু দু-টাকা করে পায়। এখন বর্ষার জন্য লোক চলাচল খুব বেশি নয়। প্রতিদিন পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ জন যাত্রী অথবা সাইকেল। তাই প্রতিদিনের গড় রোজগার সত্তর থেকে আশি টাকা। ওই টাকা ফরিদা দিয়ে দেয় তার অসুস্থ বিধবা মায়ের হাতে। তাতে কোনোমতে তাদের দিন গুজরান হয়।
প্রায় ২০ বছর বয়সি চনমনে হাসিখুশি ফরিদা সেভেন পর্যন্ত পড়েছে স্থানীয় বাইনান গ্রাম হাইস্কুলে। অভাবের সংসারে আর পড়াশুনা করতে পারেনি। তেরো বছর বয়স থেকে মাঝির কাজ করে হাল ধরেছে সংসারের। ভরা বর্ষার সময় দুই মাস বন্ধ থাকে এই খাল। তখন সংসার চালাতে কষ্ট হয়।
ফরিদা তার হাত দুটো দেখাতে দেখাতে বলে, কেমন কড়া পড়ে গেছে হাতে। ‘দিন দিন যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তবে শীতকালে একটু বেশি আয় হয়। তখন ষাট থেকে আশিজন যাত্রী পারাপার করে। কিছু সাধারণ মানুষও নৌকায় করে বেড়ায়। ফলে রোজগার একটু বেশি হয়। … কোনো উপায় নেই, তাই মাঝির কাজ করে চলেছি।’ নদীর দ্রুত বয়ে চলার স্রোতের দিকে তাকিয়ে বলে ফরিদা।
এখন এমনিতেই বর্ষা। তার ওপর ডিভিসি প্রচুর জল ছেড়েছে। তাই জলে এত কারেন্ট। ততক্ষণে ওপার থেকে জনা তিনেক যাত্রী ডাকছে আসবে বলে। ফরিদা নৌকার দড়িটা খুলল। আমিও আমার বাচ্চা ছেলেদুটোকে নিয়ে নৌকায় চড়ে বসলাম। এপার-ওপার করে বাঁধা দড়ি ধরে ধরে ফরিদা নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগল ওপারের দিকে। সেখানে দড়িটা গিয়ে বাঁধা পড়েছে একটা শক্ত বড়ো খুঁটায়। তারপর আবার একটা ছোট্ট খুঁটায় বাঁধা। অর্থাৎ অনেকটা রোপওয়ের মতো। সত্যিই মাঝনদীতে স্রোত প্রচণ্ড। নৌকা পারে ভিড়তেই জনাতিনেক লোক, একটি বাচ্চা এবং একটি সাইকেল উঠল নৌকায়। ধীরে ধীরে নৌকা মাঝ নদী পেরিয়ে চলেছে। দূরন্ত বাচ্চাটা নৌকায় বসে জল ছিটোচ্ছে। এমন সময় এক যাত্রী বলল, তোমার নৌকা তো ফুটো, জল ওঠে। তাড়াতাড়ি চলো, নইলে ডুবে যাবে। ফরিদা একটু বিরক্ত বোধ করে। তারপর বলে, ‘একবার ফুটো হয়েছিল বলে সবসময় ফুটো হয় নাকি?’
এতক্ষণে নৌকা পারে লেগে গেছে। এক এক করে সবাই নেমে পড়েছে। আমার বাচ্চারাও খুব ছটফট করছিল নৌকায়। খুব সাবধানে তাদের পারে তুলল ফরিদার এক বন্ধু। ফরিদা নৌকাকে ঘাটে বেঁধে দিল। আজকের মতো কাজ শেষ। সন্ধে হয়ে এসেছে। বাড়ি ফেরার পালা এখন। ফরিদার মা-ও এসেছে ঘাটে। সঙ্গে কয়েকজন প্রতিবেশী। একসঙ্গে বসে গল্প করছে। ফরিদাকে জিজ্ঞেস করলাম, এতদিন নৌকা চালানোর সময়ে যদি কোনো ঘটনা থাকে তাহলে বলার জন্য। ফরিদা দূর নদীর দিকে এক পলক চাইল। তারপর বলতে শুরু করল —
‘প্রায় এক দেড় বছর আগে, এক বিকেলে কয়েকজন বাচ্চা নৌকায় করে বেড়াচ্ছিল। তখন নদীতে ভাঁটার টান চলছে। নৌকা ঘাটে লেগে গিয়েছে। কয়েকজন নেমে গেছে। জনা চারেক বাচ্চা সহ নৌকাটা হাতছাড়া হয়ে যায়। দ্রুত নৌকা ভাটার টানে বইতে থাকে মাঝনদীর দিকে। বাচ্চারা এবং বাচ্চার গার্জেনরা চিৎকার করতে থাকে। আমরা পার থেকে সবাইকে বলি নৌকায় বসে থাকতে। বসলে নৌকা উল্টাবে না। ফলে কোনো বিপদ ঘটবে না। কিছুদূর যাওয়ার পর স্থানীয় জেলেরা তাদের নৌকা নিয়ে আমার নৌকাকে ধরে পারে আনে। তখন একবার ভয় হয়েছিল। বাচ্চারা যদি এদিক ওদিক করে তবে নৌকা উল্টে যেতে পারত। দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু আমি ঘাবড়াইনি। তীর বরাবর দৌড়ে বাচ্চাদের কী করতে হবে বলে যাচ্ছিলাম সমানে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আমার নৌকা যাত্রীসহ কোনোদিন ডোবেনি। আজও ডুববে না। বাচ্চা ঠিক পারে উঠে আসবে।’ একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে ফরিদা।

ফরিদার মা আনসুরা বেগম বলেন, ‘এই ঘাটটা আমরা পঁয়ষট্টি বছর ধরে চালাচ্ছি। ষোলো বছর আগে ছোট্ট ছোট্ট চারটি বাচ্চা মেয়ে রেখে ফরিদার বাবা মারা যায়। তারপর কী করব ভেবে উঠতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে সংসার চালানোর জন্যই আমার মেয়েরা নৌকার মাঝি হয়েছে। আমার মেয়ে নাজিমা, সোফিয়া, শাকিলা-রা এইভাবেই নৌকা চালিয়ে সংসার চালিয়ে এসেছে। ষোলো বছর ধরে। এখন নৌকা চালাচ্ছে ফরিদা। যা জমিজমা ছিল, বিক্রি করে পরপর তিন মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন অসহায় অবস্থায় আছি। আমার প্রতিবেশীরা আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করে। তাতে কোনওমতে সংসার চলে যায়। তবে নৌকা ফুটো বা খারাপ হলে সারানোর টাকা থাকে না। কখনও কোনও কারণে নৌকা যদি রাত্রে ডুবে যায়, তখন প্রতিবেশি শেফালি সাউ দুর্গা রায় রূপা বাগ বাসন্তী হালদার বিথিকা সাউ-রা মিলে নৌকা তুলে দেয়।’
আনসুরা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ষোলো বছর ধরে কষ্টে আছি আমরা। অথচ বাইনান অঞ্চল থেকে আমার এখনও কোনো বিপিএল কার্ড হয়নি। কত অনুনয় বিনয় করেছি পঞ্চায়েতে তবু বিধবা ভাতা পাইনি। কোনো জিআর (পঞ্চায়েত থেকে এককালীন চাল-গম সাহায্য) এবং ত্রিপল পর্যন্ত পাইনি। আগে অঞ্চল সিপিআইএম চালাত। এখন কংগ্রেস চালায়। কেউ কিন্তু আমাদের দেখেনি। আমার মেয়েরা কত কষ্ট করে ষোলো বছর ধরে সংসার চালাচ্ছে। আমার শরীরে অনেক অসুখ আছে। সব জেনেও আমাদের জন্য কিছু করেনি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং প্রধানরা। তাই এইবার আমি পঞ্চায়েত ভোটে ভোট দেব না।’ তখনও দামোদর নদীর স্রোতের দিকে আনমনে চেয়ে ফরিদা। সূর্য পশ্চিমে ডুবছে। আবছা অন্ধকার গ্রাস করেছে চারিদিক। দ্রুত বয়ে যাওয়া নদীর জলে চাঁদের আলো ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। হয়তো ফরিদাদের জীবনের বিষাদের পার ভাঙার শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে দুরন্ত জলের স্রোতের তোড়ে।

কৃষি ও গ্রাম দামোদর, নারী, মাঝি

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

সম্পাদকীয়

নীমা তেনজিনদের স্বপ্ন কি সার্থক হবে ?

একটি রাজনৈতিক সুইসাইড নোট

এই বিভাগের আরও

দেশের খবর

নিজেদের চাষের খবর দিলেন, দিল্লির আন্দোলনের খবর নিলেন সরবেড়িয়ার চাষিরা

গ্রামে বাড়ছে অভাবী বিক্রি। কৃষক মান্ডির হ্যাপার চাইতে চাষির ভরসা কাছের আড়ৎ।

এই বিভাগের আরও

সংস্কৃতির হাল

মরজীবনের গান গাইতে মিলনের অপেক্ষায় থাকে আজাহার ফকিরের অমর মেলা

ঘরে রাখা শস্যের বীজ ভালো আছে কিনা দেখে নেওয়া হয় ‘শস’ পাতার মধ্যে দিয়ে

এই বিভাগের আরও

খবরে দুনিয়া

‘গান গাইবি না, খাবারও পাবি না’// ফ্রান্সের মেনিল আমেলো’র ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অভিবাসীদের এজাহার

মার্কিন মুলুকে নির্বাচন : বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের একজন সমর্থকের সঙ্গে কিছু আলাপ, কয়েক মাস আগে

এই বিভাগের আরও

পথের খবর

সকালের ডাউন রানাঘাট লোকালে ‘জয় শ্রীরাম’ / ‘ভারতমাতা কী জয়’ গর্জন আর শোনা যাচ্ছে না

জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়েছে লালকেল্লা থেকে, আপনি দেখেছেন?

এই বিভাগের আরও

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • Soumitra Seth on ময়দা কালীবাড়ি, বহরু
  • Suman mondal on চীনের সাথে চুলের ব্যবসা। বেলডাঙার বিদেশ-ব্যাপারী
  • রাজেশ মাহাতে on আদিবাসী কুড়মি সমাজের তিন জেলায় একদিনের অনশন
  • Dipanjan Das on নতুনহাটের মেছুড়ে জয়নালের কীর্তি

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in