জয়নাল আবেদিন, মশালডাঙ্গা, কোচবিহার, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৫#
কেনাকাটা আর পড়াশোনা এই ধরনের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ছিটবাসীদের বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ প্রায় ছিল না বললেই চলে। ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুচ্ছতম ছিট মশালডাঙ্গা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মধ্য মশালডাঙ্গা যার আয়তন ১৩৭ একর, আর জনসংখ্যা ৪৫৭ জন। আর এই ছিটমহল থেকেই শুরু হয় দীঁপক সেনগুপ্তের ছিট বিনিময় আন্দোলন। কমিটির নাম দেন – ‘ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’। এই আন্দোলন ১৯৯৪ সালে শুরু হয় তখন আজগর আলির মত প্রবীন মানুষ যোগ দিলেও সব বয়েসের মানুষ স্বতস্ফুর্ত ভাবে যোগদান করেননি। ৫-৬ জন প্রাথমিকভাবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন। ক্রমে সেই আন্দোলন মশালডাঙ্গা, বত্রিগাছ, আর বাংলাদেশের ভেতরে দাশিয়ারছড়া, গতামারি, বাঁশকাটা সহ অন্যান্য ছিটগুলিতে ছড়িয়ে পরে। মধ্যমশালডাঙ্গার তোতা মিঞা (৭৫) তাঁর দুটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ভারতে। এক মেয়ের শ্বশুরের বাড়ি অবস্থাপন্ন, জামাই ব্যবসা করেন। কিন্তু যৌতুক হিসেবে গুনতে হয়েছিল ৯৫ হাজার টাকা। তবু জামাইয়ের দাবি ছিল রেশন কার্ড। “বাবা রেশন কার্ড পামু কুন, আমরা যে ছিটের মানুষ”- কেঁদে পরেছিলেন তোতা মিঞা। দু-এক হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে মিথ্যে তথ্যের ভিত্তিতে রেশন কার্ডও করা হত। ভারতের বাবারা ছিটের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাননি। বেল্লাল হোসেন বলেন ‘ধরুন, যে সব মেয়ের কোনও গতি হচ্ছে না শুধু তাদের বাবারাই ছিটের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। তাই নিকট আত্মীয়দের মধ্যেই বিয়ে দিয়েছে। দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে সংসার করছে বানি শেখ ও হনুপা বিবি। এরা সম্পর্কে বোন। এইসব বলতে লজ্জা করে’।
এখন হয়েছে উলটো চিত্র। দীর্ঘ ৬৯ বছরের যন্ত্রনার মুক্তি ঘটল ৩১শে জুলাই ২০১৫ মধ্যরাতে। দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে নো ম্যানস্ ল্যান্ড তৈরী করেছিল যন্ত্রনার দাবানল। সেই আগুন আজ নিভেছে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই কিন্তু এখন ছিটমহল অঞ্চলের ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে করতে কোনও অসুবিধে নেই। তাই একসঙ্গে হল দুটি বিয়ে। ছোরাকা আলী তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দুজনকে বিয়ে দিলেন ভারতীয় গ্রামে। ছিটমহলে আজিজুল হক বলেন যে তাঁর ভাই মজিবরের জন্যে এখন দিনহাটা, তুফানগঞ্জ বিভিন্ন জায়গা থেকে এখন বিয়ের সম্বন্ধ আসছে।
কি ছিল আর কি হল। মনে হয়নি এমন কোনওদিন হবে। বাতাসে এখন মুক্তির ঘ্রাণ।
Leave a Reply