২৫ অক্টোবর, মুহাম্মাদ হেলালউদ্দিন ও জিতেন নন্দী, কলকাতা#
কলিম খানের দোকানে আজ খুচরো আলুর দর ১৮ টাকা/কেজি। এই মুদির দোকানে শুধু জ্যোতি আলুটাই পাওয়া যায়। সামনের জয়দেব পালের দোকানেও তাই। জানবাজারের ফুটপাতে চন্দ্রমুখী আলুও বিক্রি হচ্ছে, ২০ টাকা/কেজি। একটা খারাপ জ্যোতি আলুও পাওয়া যাচ্ছে ১৬ টাকায়।
গত ক-দিন কেজিতে রোজ ২ টাকা করে আলুর দাম বেড়েছে। এঁদের দিনে এক থেকে দুই বস্তা আলু বিক্রি হয়। কিন্তু এখন বিক্রি কমছে। অন্য সবজির দর আরও চড়া। তাই এ তল্লাটের হোটেলওয়ালারা রান্নায় আলুটা বেশি খরচ করছিল। তরকারিতে অন্য সবজি কম দিয়ে আলুটা বেশি করে দিয়ে ম্যানেজ করা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন তাদেরও চিন্তা — আলুও তো চড়তে শুরু করেছে!
আপনারা কেন দাম বাড়ালেন? কলিম খান আর জয়দেব পাল একবাক্যে বললেন, ‘বা! রোজ পঞ্চাশ কেজির বস্তায় পঞ্চাশ টাকা করে দাম বাড়ছে। তাও আলুপট্টিতে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। বলছে, আলু উড়িষ্যায় চলে গেছে। পুজো গেল, বকরিদ গেল, তার আগে আলুর দর ছিল ১০-১২ টাকা। বস্তা ছিল ৩৫০ টাকা। আর আজ ৭৫০ টাকায় আলু কিনেছি।’
আমরা গেলাম পাশেই আলুপট্টিতে। পরপর ১৬ খানা গোডাউন। শম্ভু গুপ্তা বললেন, ‘দাম বাড়ুক আর কমুক তাতে আমাদের লাভও নেই, লোকসানও নেই। আমরা কমিশনে কাজ করি। বস্তায় ৯ টাকা কমিশন। এখানে ডেলি ২০০০ থেকে ২৫০০ বস্তা আলু আসে। এই সপ্তাহে এসেছে ১৫০০ বস্তা। স্টোর থেকে আলু ছাড়ছে না।’
স্টোরে কি আলু যথেষ্ট নেই? যার কাছেই গেছি, সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছে, এ রাজ্যের জন্য আলুর কোনো ঘাটতি নেই। এখন বাঙালোরের একটা নতুন আলু এসেছে, নামমাত্র পরিমাণে। ডিসেম্বরে আসবে পাঞ্জাবের নতুন আলু। জানুয়ারিতে বাংলার নতুন (কাঁচা) আলু উঠবে। তার আগে ১৫ ডিসেম্বর স্টোর বন্ধ হয়ে যাবে। মাঝের দুমাসের আলু স্টোরে মজুত আছে।
তাহলে জানবাজার বা কলকাতা শহরে আলুর জোগানে টান পড়ল কেন? কেনই বা দাম বাড়ল?
জানবাজার আলুপট্টি থেকে আমরা টেলিফোনে যোগাযোগ করলাম হুগলির মণিপুরে। মনোজ কুমার পাল বললেন, ‘আমরা হলাম ফড়ে। ট্রেডিংয়ের ব্যবসা করি, কমিশনে কাজ। আলু সব চলে যাচ্ছে আসাম, বিহারে। আজ মাত্র ৭০ খানা আলু পেয়েছি। কী করব বলুন? এখন দিদি যদি বর্ডার সিল করে দেন, তবে আমরা আলুটা পাব।’
আর এক বড়ো ব্যবসায়ী বলরাম পোরেল বললেন, ‘গড় আলুটা চলে যাচ্ছে বিহার, উড়িষ্যা, অন্ধ্রে। ওদের আলু নেই। ইউপি-তে তো আর ৫-৭ দিনের আলু আছে। তারপর?’ বুঝলাম, অন্য রাজ্যের তুলনায় এখানে আলুর স্টকটা ভালো। তাই অন্য রাজ্যে এখানকার আলুর চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বেশি দামে আলু কিনতে হবে কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা বাঁকাভঙ্গিতে বলরাম পোরেল বললেন, ‘দেখুন এখানে তো আলুচাষি আর ব্যবসায়ীরা বিশাল লস খাচ্ছে। তার ওপর দিদি যদি বাইরে আলু যাওয়া পুরো বন্ধ করে দেন, তাহলে তো আমরা দাম পাব না। হ্যাঁ, একটু-আধটু নিয়ন্ত্রণ করুন। কিন্তু বেশি বেশি করলে দামটা তো বাড়বে না।’ অর্থাৎ আলুর বড়ো ব্যবসায়ীরা যে কোনো উপায়ে দাম বাড়াতে চাইছে। সরকার আর মিডিয়া প্রথমে চুপ করে দেখছিল। এখন ‘ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরা’র ভঙ্গি করছে!
‘গড়’ আলুটা কী? যতদূর জানা গেল, বাইরের রাজ্যের জন্য যে আলুটা বস্তা বোঝাই হয়, সেখানে কোনো পচা-কাটা বাছাই করা হয় না। অথচ সেখানে দামটা ভালো পাওয়া যায়। তাই শেষের এই দু-মাসে চড়া দরে ওই গড় আলু বিক্রি করে স্টোর খালি করতে পারলে স্টোরে যারা আলু রেখেছে তাদের লাভ।
বৃষ্টির জন্য আলু লাগাতে দেরি হচ্ছে
২৮ অক্টোবর, মুহাম্মাদ হেলালউদ্দিন, খড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ#
আমাদের খড়গ্রাম থানায় পুজোর সময় আলু ছিল ৮ টাকা/কেজি। এখন ১৫ টাকা। আমাদের পাশের বড়ঞা থানা ময়ূরাক্ষীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় আলুর ফলন ভালো হয়। ওখানকার ডাকবাংলার মোড়ে তিনটে কোল্ড স্টোরেজ আছে। এখন দর যাচ্ছে ৫৫০ টাকা বস্তা, খোলাবাজারে খুচরো দর ১৪ টাকা। গতকাল বহরমপুর দিয়ে আসার সময় দেখেছি দর ছিল ১৮ টাকা।
বৃষ্টির জন্য আলু লাগাতে দেরি হচ্ছে। ফলে আলু উঠতেও দেরি হয়ে যেতে পারে।
আজকে বাজারে গিয়েছিলাম, সাদা আলু- ২০ টাকা, লাল দেশী আলু- ২২ টাকা, ভূটান আলু- ৩২ টাকা , গত সপ্তাহে এই দাম ছিল যথাক্রমে ১২ টাকা ১৪ টাকা আর ২২ টাকা এখানকার বিক্রেতারা এই দাম বৃদ্ধির কারন হিসেবে যোগানের অপ্রতুলতার কথা বলছেন, আর এক পুরোন ব্যবসায়ী ছদ্ম সঙ্কট সৃষ্টির কথাও বললেন, কিন্তু দাম বৃদ্ধির কোন সন্তোষজনক কারন এখনো খুঁজে পেলাম না।
ছদ্ম সংকট ব্যাপারটা কী? ভালোভাবে বোঝা দরকার।