মারার আইন নেই। টাকাই বা নিচ্ছে কেন?
খুকু চক্রবর্তী। মহেশতলা। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০।#
গতকাল আমার স্বামী সন্তোষপুর রেলগেটের কাছে কাজে যাচ্ছিল সকাল আটটা নাগাদ। রেলগেটের মুখে পুলিশ ধরল। ও বলল, ‘স্যার আমি কাজে যাচ্ছি।’ সেইসময় রাস্তায় আরও লোক ছিল। পুলিশটা বলল, ‘কাজে যাবি না। সাইকেল রেখে গাড়িতে ওঠ।’ ও বলল, ‘স্যার আমার কাছে কিন্তু পয়সা নেই’ — ‘আগে ওঠ।’ — ‘অনেক লোক তো যাচ্ছে।’ ওকে টেনে তুলে নিল পুলিশ। সাইকেলে তালা-টালা কিছু দিতে পারেনি। সিভিক ট্রাফিক পুলিশগুলো তো ওকে চেনে, রোজ কাজে যায়, দেখে। ওরা বলল, ‘স্যার একে ছেড়ে দিন না, এ যায় এদিক দিয়ে রোজ।’
তারপর ভ্যানে করে থানায় নিয়ে আসতে আমার স্বামী বলল, ‘আমার কাছে একশো টাকা আছে, নিয়ে ছেড়ে দিন না’। ওরা বলল, ‘ঘরে ফোন কর, পয়সা নিয়ে আসতে বল।’ ও বলল, ‘আমার ঘরে তো এখন কেউ নেই’ আমি তো কাজে বেরিয়ে গেছি।’ ও তখন ঠিকাদারকে ফোন করল। ঠিকাদার বলল, ‘আমি গেলে আমাকেও তো ধরবে। তুমি বউদিকে বলো, থানায় গিয়ে তোমায় ছাড়িয়ে নিয়ে আসবে।’ আমার কাছে ফোন ছিল। আমি খবরটা পেতেই দশটা নাগাদ সোজা থানায় চলে গেছি। আমায় গেটের পুলিশটা বলল, ‘কী চাই?’ আমি বললাম, ‘সুবোধ চক্রবর্তীকে ধরেছেন কেন?’ বলছে, ‘কাজে গিয়েছিল কেন?’ — ‘রাস্তায় আপনারা তো ডিউটি করছেন। দেখেছেন, ভ্যান, রিকশা, বাইক, সাইকেল সবই চলছে। আর যারা গরিব মানুষ কাজে গেছে তাদের ধরে নিয়ে এসেছেন?’ কিছু উত্তর না দিয়ে পুলিশ বলল, ‘পয়সা নিয়ে এসেছেন?’ তারপর বরের হাতে পাঁচশো টাকা দিলাম। আমি বাইরে চলে এলাম। দেখি অনেককে ধরেছে। যারা মর্নিং ওয়াক করে, জগিং করছিল, তাদেরও ধরে নিয়ে এসেছে। কেউ গরু-মোষের ওষুধ কিনতে গেছে, ধরে নিয়ে এসেছে। এরপর বরকে ছেড়ে দিল।
আমি বলব, লকডাউনের দিনে বেরোনো ঠিক না। কিন্তু টাকাটা নিচ্ছে কেন? মারারও আইন নেই, অথচ লোককে রাস্তায় মারছে।
মিহিদানা দাদু অসম্ভব জনপ্রিয় ।দেখা হল কয়েদিন আগে । জানালেন লকডাউনের প্রথম চার মাস বেরোতে পারেননি। গত মাস থেকে মানে শ্রাবন থেকে মাস বা দেড় মাস বেরোচ্ছি ।টুকিটাকি বিক্রি হচ্ছে, ভালো নয়। প্রশ্ন করলাম তাহলে সংসার চালালেন কি করে । জমানো টাকা ছিল? বা ছেলেরা কাজ করে? বল্লেন, ছেলের কথা বলবেন না, বলে যেটা বললেন তা বললাম না এখানে। তবে? চারটে খিরীশ গাছ ছিল। বিক্রি করে দিলাম । কত পেলেন? মাত্র চার হাজার টাকা। বুঝতে পারছি প্রচুর গাছ পড়েছে ফলে দাম কমে গেছে গাছের। ৭০ উর্ধ মানুষটির অন্যতম সম্বল টুকুও গেল। এই হচ্ছে সাধারন মানুষের অবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকার এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন। রাজ্য সরকারও তাই। মানুষ কার কাছে যাবে?
লকডাউনের দিনে
লক্ষ্মী মণ্ডল। রবীন্দ্রনগর। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০।#
লোকনাথবাবা মন্দিরের উল্টোদিকে গলির ভিতর পল্টুদের ঘর। গতকাল সকাল আটটা-নটা হবে। ও সবে একটা বন্ধ চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছে, একটা পুলিশের গাড়ি এসে এগিয়ে গেছে। তারপর আর একটা পুলিশের গাড়ি আসতেই ও দৌড়িয়ে পালাতে গেছে। যদি ধরে এই ভেবে দৌড়িয়েছে। ওকে ধরে ভ্যানে তুলে নিয়ে গেল। পাড়ার মিলন বলে একটা ছেলে, আর একজন থানায় গিয়ে চারশো টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে এল।
আমি বারোটা নাগাদ কাজে আসছিলাম এই পাড়ায়। তখন খবরটা পেলাম। আমার দিদির ছেলে বাবুকেও ধরেছিল, ও মাস্ক পরেনি বলে ধরল। ও শনিমন্দিরের পিছনে থাকে। ও গাছতলায় এসেছিল মাস্ক না পরে। তাইজন্য ধরে নিয়ে গেছে। চেনাশোনা লোক একজন ছিল ওখানে। সে অফিসারকে ফোন করল। অফিসার ছেড়ে দিল। ওর টাকা লাগেনি।
Leave a Reply