কৃষ্ণা রায়, কলকাতা, ২৫ সেপ্টেম্বর#
সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে কেরালার মুন্নার এলাকায় চা-বাগানের সাত হাজার নারী-শ্রমিক, যাঁরা বাগানে পাতা তোলার কাজ করেন তাঁরা টানা ৯ দিন ধর্মঘট করেছেন। এঁরা সবাই দি কান্নান দেভন হিলস প্ল্যান্টেসন কোম্পানির শ্রমিক (কে ডি এইচ পি)।
নারী শ্রমিকদের প্রধান দাবি ছিল ১) ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি ২) ২০ শতাংশ হারে বোনাস
এর সাথে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ ও অন্যান্য দাবিও ছিল।
এই ধর্মঘটের ফলে কে ডি এইচ পি কোম্পানির ১৬ টি কারখানা ৯ দিনের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়। কান্নান দেভন- র চা বিক্রির বিভিন্ন কেন্দ্র ধর্মঘটী শ্রমিকরা বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে। কোম্পানি থেকে জানানো হয় যে এই ধর্মঘটের ফলে তাদের বহুল পরিমান ক্ষতি হয়েছে।
মুন্নার ট্যুরিজমও এই ধর্মঘটের জন্য বড় ধাক্কা খেয়েছে। রাস্তা অবরোধের জন্য অনেক ট্যুরিস্টকে অন্য পরিকল্পনা করতে হয়েছে। অনেকে খাবার যানবাহন না পেয়ে রাস্তার উপর আটকে পড়েছেন।
কেরালা ট্যুরিজিমের প্রচার পুস্তিকায় ছবির মত সুন্দর চা-বাগানে পিঠে বেতের ঝুড়ি নিয়ে হাসি হাসি মুখে যাঁদের চায়ের পাতা তুলতে দেখা যায় সেই নারী শ্রমিকদের ধর্মঘট চলাকালীন চেহারা দেখে ট্যুরিস্টরা অবাক হয়ে গেছেন।
এককথায় এই ধর্মঘটের প্রভাবে মুন্নার অচল হয়ে পড়ে এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্ডি এই ধর্মঘট মিটমাট করার জন্য হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন।
সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে কোম্পানি ৮ .৩৩ শতাংশ হারে বোনাস এবং ১১. ৬৭ শতাংশ এককালীন বাড়তি ভাতা দেবার দাবি মেনে নেয় এবং ২১ সেপ্টম্বর এই টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। বর্ধিত মজুরি দেওয়ার বিষয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর চা-বাগানের লেবার কমিটি আলোচনা করবে বলে স্থির হয়।
এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য
ধর্মঘটী নারী শ্রমিকরা আওয়াজ তোলেন;
‘কোন পুরুষ শ্রমিক নয়, কোন ইউনিয়ন নয়।’
আই এন টি ইউ সি, সিটু, এ আই টি ইউ সি – এই তিনটি ইউনিয়নই মুন্নার চা-বাগান এলাকায় সক্রিয়, কিন্তু ধর্মঘটী শ্রমিকরা কোন ইউনিয়নকেই আন্দোলনে ঢুকতে দেন নি।
পুরুষ শ্রমিকদের সম্বন্ধে তাদের বক্তব্য- ‘ওদের মদ খাইয়ে সহজেই প্রভাবিত করে ফেলা যায়।’
সিপিএম পার্টির বর্ষীয়ান নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দ যখন ধর্ণায় যোগ দিতে আসেন তখন একমাত্র তাঁকেই শ্রমিকরা স্বাগত জানায়।
রাজনৈতিক নেতা থেকে আমলা, সবাই এই আন্দোলন দেখে হতবুদ্ধি।
ট্রেডইউনিয়ন নেতারা বলছেন – ‘ আমরা নারী শ্রমিকদের প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমরা তো সব সময় এঁদের সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং তা করেও যাব। এটা খুব দুঃখের বিষয় যে তাঁরা এখন আমাদের বিশ্বাস করতে রাজী হচ্ছেন না।’
প্রভাব
এই আন্দোলন শুধু কেরালা নয়, তামিলনাড়ু, আসাম, দার্জ্জিলিংসহ সব চা-বাগানের শ্রমিকদের শোচনীয় জীবনধারণের চিত্র সামনে নিয়ে এসেছে।
অন্যদিকে এই সফল আন্দোলন, ইউনিয়ন নেতৃত্বের খবরদারির বাইরে আরও অনেক আন্দোলনের জন্ম দিচ্ছে।
টি এস্টেটস অব হ্যারিসন মালায়ালম লিমিটেড দক্ষিণ ভারতে বড় চা উৎপাদক সংস্থার মধ্যে অন্যতম। এখানকার নারী শ্রমিকরাও একই দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছেন।
এড্ডুকি জেলার দুটি টাটা-চা ইউনিটের বহু শ্রমিক একই দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছেন।
ইড্ডুকি আর ওয়ানাল এলাকায় ছোট ছোট চা-বাগানেও ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
কুঁচোচিংড়ির খোসাছাড়ানোর কাজে নিযুক্ত ৩০০জন নারী শ্রমিক এম আর এফ স্রিমপ পিলিং শেডে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছেন। এঁরা এক কেজি চিংড়ির খোসা ছাড়ালে মাত্র ১৪ টাকা পান। এঁদেরও ইউনিয়নের উপর আস্থা নেই। এঁরা বলছেন মুন্নার চা-বাগানের নারী শ্রমিকরা আমাদের পথ দেখিয়েছেন।
আরালাম ফার্মিং কর্পোরেশন (কেরালা) লিমিটেড, একটি সরকারি উদ্যোগ। এই কর্পোরেশন কুন্নুর জেলার আদিবাসীদের পুনর্বাসনের কাজে নিযুক্ত। এই কর্পোরেশনের নারী কর্মচারীরা ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এঁদের দাবি — ১)বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি কার্যকর করা ২) অনিয়মিত কাজের নিয়মিতকরণ।
তথ্যসূত্র
টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং ইন্টারনেট লিংক
Leave a Reply