সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ৩০ মে#
হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোহিত ভেমুলা এবং আরো চারজন দলিত গবেষক ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার পর তারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই শপিং কমপ্লেক্স বা বানিয়েছিল একটা তাঁবু, ৪ জানুয়ারি। সেই তাঁবুতেই তারা থাকছিল। তার নাম দিয়েছিল ‘ভেলিভাদা’ — কন্নড় ভাষায় যার অর্থ দলিত-বস্তি। ওই ঠাণ্ডার মধ্যে আম্বেদকরের একটা বড়ো ছবি নিয়ে তারা ওখানেই থাকছিল, পড়াশোনা করছিল। পনেরো দিন ওখানে থাকার পর আত্মহত্যা করে রোহিত। রোহিতের মৃত্যুর পর ওই তাঁবু হয়ে ওঠে রোহিতের মৃত্যুর ন্যায়বিচারের আন্দোলনের পীঠস্থান।
রোহিত ভেমুলার আবেদনে কর্ণপাত না করে তাকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেওয়ায় অভিযুক্ত হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আপ্পারাও পোডাইল। এসসি এসটি অ্যাট্রোসিটিস অ্যাক্ট, অর্থাৎ তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষদের ওপর অত্যাচার বিরোধী আইনের ধারাতেই তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই আইনের ধারা অনুযায়ী তার গ্রেপ্তার হওয়ার কথা। তা হয়নি। বরং আপ্পারাও বহাল তবিয়তে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশিত ‘ছুটি’ কাটিয়ে আসার পর হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আসীন হয়েছেন। তার ফিরে আসার সময় (মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখায়। সেই বিক্ষোভ কড়া হাতে দমন করে পুলিশ। ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে তাদের ওপর চলে চরম নিপীড়ন। রোহিতের মা থেকে শুরু করে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ছাত্রদের দাবি, আপ্পারাও হিন্দুত্ববাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী আরএসএস-এর লোক।
মে মাসের ২০ তারিখ উপাচার্য আপ্পারাও নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘ভেলিভাদা’ ভেঙে ফেলার। সেই নির্দেশনামার কপি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল ‘রোহিত ভেমুলার ন্যায়বিচারের জন্য যৌথ কমিটি’র সঙ্গে যুক্ত ছাত্রছাত্রীরা।
মে মাসের ২৭ তারিখ হঠাৎই একটি শিবলিঙ্গ এবং একটি নন্দীমূর্তির উদয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার গেট-এর পাশে। কে বসালো ওই প্রস্তরখণ্ডদুটি? ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ও দুটো নতুন নয়, ১৯৮২ সালের। কিন্তু কে বসালো? তারা বলে, যদি শ্রমিকরা বসিয়ে থাকে, তাতে আমরা কি করতে পারি? ছাত্ররা পাল্টা প্রশ্ন করে, কিন্তু একটি সেকুলার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে কি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের আইডল বসানো যায়?
২৭ মে শুক্রবার রাত্রিবেলা আনুমানিক ২টো নাগাদ বিশ্বদবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিরাপত্তা কর্মীরা ‘ভেলিভাদা’ তাঁবু, এবং বাঁশখুঁটি তুলে নিয়ে চলে যায়। আম্বেদকরের বয়ান, ছবি, ব্যানার, সংবিধানের ভূমিকা ইত্যাদির কিছু কিছু ছিঁড়ে ফেলে তারা। কিন্তু রোহিত ভেমুলার মর্মর মূর্তিটি, আম্বেদকরের মূর্তিটি অক্ষত থাকে। খবর পেয়েই ভোরবেলায় ছাত্রছাত্রীরা চলে আসে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেট-এ ধরনায় বসে। পাল্টা প্রতিবাদ দেখে নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁবু সরানোর কথা অস্বীকার করে।
এই ঘটনার পর থেকে আম্বেদকর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও রোহিত ভেমুলার ন্যায়বিচারের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ চলছে। সংখ্যায় খুব কম হলেও এই ছাত্রছাত্রীদের নাছোড় প্রতিবাদ হায়দ্রাবাদ বিশ্বদবিদ্যলয়ে রোহিতের মৃত্যুর ন্যায়বিচারের দাবি জাগরুক রেখেছে। শিক্ষকদের একাংশ ছাত্রছাত্রীদের সমর্থনে এবং উপাচার্য আপ্পারাও-এর গ্রেপ্তারির দাবিতে প্রেস বিবৃতি দেয়।
ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ ধর্নার স্লোগান ছিল — ‘আরএসএস কা এক হি জবাব, আম্বেদকর আম্বেদকর’। ‘হামলোগ শরমিন্দা হ্যায়, রোহিত তেরা কাতিল জিন্দা হ্যায়’।
২৯ মে প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রোহিতের জামা কাপড়ের অংশ দিয়ে, এবং ছাত্রছাত্রী গবেষক শিক্ষকদের পুরনো জামাকাপড়ের অংশ দিয়ে সেলাই করে আবার তাঁবু খাটাবে তারা। ৩০ মে বিকেল পাঁচটায় এই কার্যক্রম শুরু হবে।
Leave a Reply