আনলক পর্বে এখনও স্কুল বন্ধ প্রায় আট মাস। লোকাল ট্রেন চলছে না। দেশের বেশির ভাগ মানুষের হালৎ ভয়ঙ্কর খারাপ। শ্রমিক মজুর বেরোজকারী হয়ে বসে আছে। এসব নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নেই। মানুষের রুজিরুটি নিয়ে সরকারের কোনো কথা নেই অথচ মানুষের মুখে মাস্ক নেই কেন তা নিয়ে পাবলিককে নাজেহাল করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। অথচ প্রথম থেকেই মাস্ক নিয়ে ‘হু’ এবং ‘সরকারী স্বাস্থ্য দফতর’-এর নির্দিষ্ট কোন গাইড লাইন নেই। স্বাস্থ্য দফতর কখনো বলছে এন-৯৫ মাস্ক, কখনো গামছা, কখনো কাপড়। অথচ মাস্ক ব্যবহারকারীদের অনেকেরই শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এন-৯৫ মাস্কে ভাইরাস আটকায় এমন কোনো প্রমাণ নেই। আন্দোলনকারীদের অন্যতম জগদীশ চন্দ জানান – সরকারের দফতর থেকে তথ্য জানার অধিকার আইনে ‘মাস্ক বাধ্যতামূলক’ এরকম জানা যায়নি। আন্দোলনকারীদের মূল অভিযোগ মিডিয়ার বিরুদ্ধে। মেন স্ট্রিম মিডিয়াই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বেশি, তথ্য গোপন করছে-
এমন দিন আসছে, যখন আপনি মানিব্যাগ খুলে ভাড়া দিতে পারবেন না। ছিনতাই হয়ে যাবে।
সাধারণ মুদিখানার আয় ২৫-৩০ শতাংশ কমেছে।
মিস্টির দোকানের আয় ৫০ শতাংশ কমেছে।
সবজির দোকানের বেচাকেনা ভালো না। শতাংশ হিসেব জানা সম্ভব হয়নি। ভ্যান রিক্সার আয় অনিয়মিত। দিনে ১০০-১৫০ টাকা। নির্মাণ কর্মীদের মজুরির দাম ঠিক আছে। কাজ অনিয়মিত। মাছের বাজার ভালো না। খরিদ্দার কম। পোল্ট্রি মাংসের বাজার ভালো। মাছ মাংস বিক্রেতাদের আয় জানা সম্ভব হয়নি। কলা বিক্রেতাদের ব্যবসা খারাপ আমফানের কারণে।
সবারই আয় বুঝে খরচ। ধারদেনার কথা স্পষ্টভাবে কেউ বলতে চায়নি। যারা টাকা ধার দেওয়ার কারবার চালায়, তারা জানিয়েছে- ধার নেবার লোকের সংখ্যা কমেছে। লোক বুঝে ধার দেওয়া হচ্ছে। টাকা শোধ দেওয়া অনিয়মিত। সরকারের কাছ থেকে কেউ কেউ বার্ধক্যভাতা, বিধবা ভাতা, শিল্পীভাতা, আমফানের ক্ষতিপূরন বাবদ টাকা পাচ্ছে। চাল, গম পাওয়া যাচ্ছে। তা বিক্রি করে কিছু টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আগামীদিন কীভাবে চলবে কেউ স্পষ্ট কিছু জানেন না।
মাথার উপর থেকে ছাদটাই কেড়ে নিলে মাথা তুলে দাঁড়াবেন কোথায়?
অতিমারীর সময় যখন সরকার দেশের সমস্ত নাগরিকদের ঘরে থাকার নিদান দিচ্ছে প্রতিদিন, তখন দেশের কোথাও না কোথাও প্রতি ঘন্টায় ২৫ জন করে ঘর ছাড়া হচ্ছেন। উচ্ছেদ ও ঘরভাঙা হচ্ছে যথাক্রমে ৫২০ জন ও ১১০ টি। মহামারীর সময় জোর করে উচ্ছেদ হয়েছে মার্চ থেকে জুলাই মাসে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ২০১৭-১৯ সালে বাড়ি ভাঙা হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার। এই সময় পর্বে অর্থাৎ তিন বছরে প্রায় ছ’লাখ মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য দেশের গরীব, প্রান্তিক স্তরের মানুষ এই উচ্ছেদের শিকার।
সাম্প্রতিক মন্তব্য