সংবাদমন্থন প্রতিবেদন। ২৪ অগাস্ট, ২০২০।#
প্রশান্ত ভূষণ আজ সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমাপ্রার্থী নন।
টুইট বিতর্কে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত প্রশান্ত ভূষণের পক্ষে আইনজীবি কামিনী জয়সোয়াল ভূষণের সাপ্লিমেন্টারি বিবৃতি জমা দিলেন আজ।
এই বিবৃতির উপর আগামীকাল সুপ্রিম কোর্ট এর প্রভাব বিবেচনা করবে। এদিকে প্রবীণ আইনজীবি রাজীব ধাওয়ান লিখিত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছেন, এই রায় রিকল করা হোক। কারণ প্রশান্ত ভূষণ গুড ফেইথে সত্য ফ্যাক্টস এর ভিত্তিতে মন্তব্য করেছেন। একই মত অ্যাটর্নি জেনারেল, বিচারপতি লোকুর, কুয়েন জোসেফ, এ পি শাহ, অরুণ শৌরি এবং অন্যরা প্রকাশ্যে করেছেন এবং তা সংবাদপত্র ও টিভিতে খবর হয়েছে। তাহলে তো এরা সবাই আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে।
সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া প্রশান্ত ভূষণের বয়ান। বাংলা তর্জমা করেছেন পর্ণব।
গভীর আফসোসের সাথে আমি মহামান্য আদালতের ২০ অগাস্টের আদেশ পড়েছি। শুনানিতে আদালত আমায় বলেছিল দু’তিন দিন সময় নিয়ে আদালতে আমার দেওয়া বিবৃতিকে পুনর্বিবেচনা করতে। যাইহোক, আদেশের পরবর্তী অংশ জানায়, ‘আমরা অবমাননাকারীকে সময় দিয়েছি নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য, যদি তিনি সেভাবে চান।‘
আমি কখনোই এমন বাহ্য লৌকিকতার ওপর জোর দিইনি, যেখানে আমার তরফ থেকে কোনো ভুল বা কুকর্মের জন্য ক্ষমার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমার পক্ষে বিশেষ সুবিধার কারণ এই যে, এই প্রতিষ্ঠানটিতে আমি পরিষেবা দিয়েছি এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ এর আগেও তুলে ধরেছি। আমি এই বোঝাপড়া নিয়ে বাঁচি যে, এই প্রতিষ্ঠানকে আমার যা দেওয়ার সুযোগ ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি আমি এখান থেকে পেয়েছি। সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠানটির জন্য আমি সর্বোচ্চ বিবেচনা না রেখে পারিনা।
আমি বিশ্বাস করি যে সুপ্রিম কোর্টই মৌলিক অধিকার, প্রহরী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং স্বয়ং সাংবিধানিক গণতন্ত্র রক্ষার সর্বোচ্চ দুর্গ। যথার্থই বলা হয়ে থাকে যে এটি গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী ন্যায়ালয় এবং নিয়ত সারা দুনিয়ার বিচারালয়গুলির একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ। আজকের এই সমস্যাঘন সময়ে, ভারতের অধিবাসীরা তাদের প্রত্যাশা এই আদালতের পরে ন্যস্ত করে আইনের শাসন সুনিশ্চিত করতে, তার কার্যনির্বাহীদের অবাধ শাসনের উপর নয়।
এটাই একটা দায়িত্ব তৈরি করে, বিশেষত আমার মত এই আদালতে একজন আধিকারিকের জন্য, জোর গলায় বলতে, যখন আমার বিশ্বাসমতে এই সর্বোচ্চ আদালতের নিষ্কলুষ রেকর্ডে একটা চ্যুতি ঘটে। সুতরাং আমি আমার অভিপ্রায়ের অকপটতা থেকে নিজেকে প্রকাশ করেছি, সুপ্রিম কোর্ট বা কোনো বিশেষ প্রধান বিচারপতির মানহানির উদ্দেশ্যে নয়, বরং গঠনমূলক সমালোচনা তুলে ধরতে, যাতে করে আদালত মানুষের অধিকারের জিম্মাদারি এবং সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে দীর্ঘকালীন ভূমিকা থেকে তার ক্রম-অপসারণকে ধরতে পারে।
আমার টুইটগুলি এই আন্তরিক বিশ্বাসকেই উপস্থাপিত করেছিল, যা আমি বরাবর ধরে থাকি। আমি মনে করি, এই বিশ্বাসগুলির প্রকাশ্য উপস্থাপন ছিল একজন নগরিক এবং এই আদালতের একজন বিশ্বস্ত অফিসার হিসেবে আমার উচ্চতর দায়বদ্ধতার সূত্রে। সুতরাং এইসব বিশ্বাসের প্রকাশের জন্য শর্তসাপেক্ষে বা নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়া হবে ভন্ডামি। ক্ষমা চাওয়ার অর্থ নিছক মন্ত্র আওড়ানো হতে পারেনা, আদালত নিজেই যেমন বলে থাকে, কোনো ক্ষমাপ্রার্থনা হতে হবে অকপট। বিশেষত যখন আমি আমার বক্তব্য আন্তরিক ভাবেই ব্যক্ত করেছি এবং বিশদভাবে সত্যের পক্ষেই ওকালতি করেছি, যা আদালতে কখনোই বিবেচিত হয়নি। যদি আমি আমার বক্তব্য এই আদালতে প্রত্যাহার করে নিই, যে এটা আমি সরাসরি সত্য বলে বিশ্বাস করিনা বা একটা কপট ক্ষমাপ্রার্থনা করি, তা আমার বিবেচনায় আমার বিবেক অবমাননার সামিল হবে এবং একটি প্রতিষ্ঠানেরও, যাকে আমি সর্বোচ্চ মর্যাদায় ধারণ করি।
Leave a Reply