• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

দিনের শেষে চাষি তার ফসলের দাম বলতে পারবে না বুক ঠুকে। ব্যবসাদারই সব ঠিক করবে

December 14, 2020 admin Leave a Comment

পর্ণব। জৌগ্রাম। ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০।#

জৌগ্রাম স্টেশনে ঢোকার মুখেই যে চা মিস্টির দোকান, রাত ন’টাতেও সেখানে জড়ো হওয়া গোটা পাঁচেক বন্ধুর মুখে একটাই কথা। বাজারে আলুর রেট কী যাচ্ছে। হঠাৎ করে চল্লিশ পঞ্চাশ টাকা কেজির আলু কুড়ির ঘরে নেমে এল কী করে। অনিমেষদার বন্ধু বললেন, সামনের বার আলুচাষিকে কাঁদতে হবে। রাস্তায় আলু ছড়িয়ে বসতে হবে। রাজু নায়েক বলছিলেন, এখন ব্যাঙ্ক যদি বলে দেয়, একবছরের মধ্যে সব লোন শোধ করতে হবে, চাষির অবস্থা শেষ। কিচ্ছু করার নেই ওদের। এদের সকলেরই আট দশ বিঘা জমি আছে। জলা, পুকুর সবকিছু অনুযায়ী মোট জমির সত্তর-আশি শতাংশে এরা সকলেই আলুচাষ করেন। আমন ধান তোলার এই মরশুমে। আলুটা তুলে তিল দেন। তারপর ধান। কেউ কেউ কিছু সবজি করেন, অল্পবিস্তর সর্ষেও।

উত্তুরে হাওয়ায় কুয়াশার চাদর নেমে আসছে আলু লাগানো হাজার হাজার একর জমির উপর। উনুনের আঁচ কমে আসছে দেখে দোকান গুছাতে গুছাতে চা-দোকানি নীরবে শুনছেন সকলের কথাবার্তা। একজন এসে খবর দিলেন ডিক্লেয়ার্ড মার্কেটে এগারশ পঁয়ত্রিশ। অথচ আন্ডাররেটে আলু বের করছে শালারা। ডালা পার্টি ঢেলে কামাচ্ছে। ডালা পার্টি মানে রিটেলার।

 


নদিয়ার কালাবাগা গ্রামে একাঙ্গী চাষ। মাছের চার বা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মশলা-বাজারে বেশ চাহিদা এই একাঙ্গীর। সার-বিষ-সেচ কিছুই দরকার লাগে না। ফাল্গুন চৈত্রের দিকে ওঠে। আদা বা হলুদের মত কন্দ হয় মাটির তলায়। বাঁদিকের ছবিতে একটা কাঁঠাল গাছের গুঁড়িতে ডালপাতাকাঁটা জড়ানো। চাষিরা বললেন, এতে গাছে ওম তৈরি হয়। ভালো ‘মোচ’ আসে। – ছবি : প্রতিবেদক

— কিছুদিন আগে দামটা উঠল কী করে? কারো ঘরে ধরেন নাইন্টি পার্সেন্ট আছে। জানে, নভেম্বরের শেষে স্টোর খালি করতে হবে। জানতে গেলে দেখাল, সেভেন্টি পার্সেন্ট আছে। ওই কুড়ি পার্সেন্ট আলু জমে গেল। এইভাবে কৃত্রিম ক্রাইসিস তৈরি করে মাসখানেক হাইরেটে আলু বের করে কামিয়ে নিল।… যে পাঁচ পয়সার লজেন্স বানায়, সেও তার লজেন্সের দামটা নিজে বসাতে পারে। কিন্তু চাষি পারে না। রাতে বাড়িতে শুয়েও সে জানলা খুলে একবার আকাশটা দেখে। এই রে জলে বীজটা পচে যাবে না তো? ঝড়ে গাছগুলো পেটিয়ে যাবে না তো? শিল হবে না তো? জোলটা ভাসিয়ে দেবে না তো? – তার ধান নষ্ট হবে। আবার পরের বার ধানই করবে। তাকে করতেই হবে। তবু দিনের শেষে সে তার ফসলের দাম বলতে পারবে না বুক ঠুকে। ব্যবসাদারই সব ঠিক করবে।  রাজু নায়েকের উত্তেজনাকে সমর্থন করে একজন বললেন, দিল্লীতে চাষীরা তালে ঠিকই অবস্থান নিয়েছে। ঠিক বুঝেছে চাষার ব্যাটারা। রাজু নায়েক বলে যাচ্ছিলেন, কোম্পানির চাষ চলে এলে পুরোটাই তাদের হাতে চলে যাবে। এই যে পেপসি আলু, খেয়ে দেখেছেন? ওরা তো একটা নির্দিষ্ট সাইজ নেয়। বাকিটা চাষি কী করবে? আমি একদিন খেয়ে দেখেছিলেম। এত বিস্বাদ, খাওয়া যায় না। ওই প্যাকেটের চিপস হয় যখন, তখন ভাল্লাগে। একজন বললেন, হ্যাঁ, মদের সাথে। অমনি কথাবার্তার মোড় ঘুরে গেল মদের প্রসঙ্গে। চারশ চল্লিশ টাকার মদ স্টিকার মেরে নতুন দামে সাতশ সত্তর টাকায় বিক্রি করছে। তলার পুরোনো প্রিন্ট দেখে ফেলায় কে কোন কাউন্টারে গিয়ে হুজ্জুতি করেছে…এইসব। কথা চলতেই থাকে।

কুয়াশায় ঢাকা রেললাইন পেরতে গিয়ে অনিমেষদা বলছিলেন, ‘এই কুয়াশাটায় আলুগাছ ঝাড়া দিয়ে বাড়তে পারেনা। আবার ঠান্ডা গরম ওঠানামা করলে গাছে ধসা রোগ লেগে যায়। আলু খুব যত্নের গাছ তো। একটা জমিতে ধসা লাগলে আশেপাশের সব জমিতে ছড়িয়ে যায়। করোনার মত। ওষুধের খরচাটা বিশাল। এমনিতেই এবার আলুবীজের দাম চড়া। ফার্স্ট-কাট চার-পাঁচ হাজার টাকা বস্তা। বিঘাতে আড়াইটা থেকে তিনটে লাগে। সার বিষ সব কিছু দিয়ে এবছর বিঘাপ্রতি খরচ তিরিশ হাজার টাকা। গতবছর যেটা ছিল কুড়ি-বাইশ হাজারের মধ্যে। এবার সবাই এত আলুর দিকে মন দিয়েছে, যে অন্যান্য সবজির দামও বাড়বে। আর সামনের বার আলুর প্রোডাকশানও বেশি হবে। ফলে চাষি দাম পাবে না। সাধারণ মানুষেরও ফাটবে বাজারে গিয়ে।

বাকি পথটুকু সাবধানে সাইকেল চালাতে চালাতে কানে বাজছিল চা দোকানের আরো নানারকম ছেঁড়া ছেঁড়া কথাবার্তা।      — চাষ কারা করে বলুন তো?—হয় যাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তারা; নয়তো বোকারা। রাজু নায়েক চেনাজানা স্থানীয় এক আড়ৎদারের কাছেই বীজ নেন। বীজ পঞ্জাব থেকে আসে।

— এবছর শুধু এখানে নয়, গোটা দেশেই আলুটা নিয়ে এরকম খেলেছে ব্যবসায়ীরা। হয়তো কৃষি বিলে আলুকে অত্যাবশ্যক পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায়। নয়তো লাগামছাড়া মজুতের অনুমতি দেওয়ায়। আচ্ছা, মোবিল বা পেট্রোলটা কি অত্যাবশ্যক পণ্য? তার দাম তো সরকার ঠিক করে দেয়। আমাদের ফসলের বেলায় তো হয় না। এই সময়টা ব্যবসাদাররা কী করত জানেন? গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ত। বাঁকুড়ার পোখরাজটা কেমন হয়েছে – হুগলির আলুটা এবার রোগ লেগেছে কিনা। চারদিক দেখে ওরা দাম ঠিক করত। এখন চাষিরাও একটু একটু বুঝে গেছে। নেটে খবর নেয়। হয়তো শুনল, ইউপি তে সতের দিন সূর্য ওঠেনি কি পঞ্জাবের আলুটা হয়নি, ব্যস বুঝে গেল, বাজার কেমন যাবে…।

বীজটা এখানে তৈরি হয়না কেন? পঞ্জাব থেকে আনতে হয় কেন? উত্তরে চয়ন বিশ্বাস বললেন, এখানকার এগ্রিকালচার অফিসাররা পার্ট টাইমে এল.আই.সি.র এজেন্ট; কী করে হবে বলুন? অনিমেষদাও বলছিলেন, কো-অপারেটিভ আন্দোলনটা এখানে ঠিক করে হল না। কো-অপারেটিভ হস্তক্ষেপ করলে বীজের কালোবাজারিটা হত না।

রাজুদা তার চেনা আড়ৎ থেকে বীজ নিয়েছেন, পুরোটাই ধারে। আট বিঘা জমির জন্য বীজের দামই প্রায় নব্বই হাজার টাকা। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় লোনও করেছে চাষের জন্য। আলুটা উঠলে ওই আড়তেই বেচবেন।

— স্টোরের সাথে আড়ৎদারের বোঝাপড়া ভালো। চাষী যদি ধরেন আলুটা নিজে নিয়ে গেল স্টোরে, গিয়ে শুনল ওদের চাতালের যে ক্যাপাসিটি, সেটা সেদিনের মত ভরে গেছে, তখন চাষির মাল নিয়ে যাওয়া-আসার খরচটা মাটি হল। –  বোঝালেন রাজু নায়েক। স্টেশনের ধারে ওর একটা সব্জির পাইকারি কারবারও আছে। কলকাতায়, বর্ধমানে মাল যায়। আগে ট্রেনেই যেত। অথচ চা দোকানের আড্ডায় অনিমেষদাকে বলছিল, তোমার তো পেনশন আছে, তাই চাষটা তুমি করতে পারবে।

স্বেচ্ছাবসর নেওয়া বায়ুসেনার প্রাক্তন ফৌজি, অনিমেষদা বাপকাকাদের সম্পত্তি দুই ভাই মিলে আগলে রেখেছেন যতটা পেরেছেন। ওনার সাথে পরদিন মাঠে গিয়ে দেখছিলাম কারো দিন কুড়ি, কারো মাসখানেক আগে লাগানো আলুর চারা। বিঘাতে  ৭৫-৮৫ বস্তা আলু ওঠে। ফলন খুব ভালো হলে কখনো তা ৯০-৯৫ ও হয়। পঞ্চাশ কেজির বস্তা। গতবার চারশ টাকা বস্তা ছিল আলু তোলার সময়। স্টোরের ভাড়া আর বস্তার দাম, যাওয়া-আসা মিলিয়ে খরচা বছরে একশ টাকার একটু বেশি। লাভের অঙ্কটা বোঝাই যাচ্ছে। পাশের একটা জমিতে এই সকালে বাপ ছেলে মিলে ডাঁরা কেটে জল ছেঁচার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নব্বই দিনের চাষে সত্তর-পঁচাত্তর দিন অবধি জল দিতে হয়। ধানের মত নিরেন দিতে হয় না ঠিকই। কিন্তু দু’তিনবার কানি টেনে ভেলি তৈরি করতে হয়। ওই উঁচু করা মাটির সারি বা ভেলির মধ্যেই আলু হয়। গাছপ্রতি সাত আটটা আলু। আলু দেওয়া থেকে তোলা অবধি দক্ষ অদক্ষ নানারকম শ্রমিক লাগে। অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে ভূমিহীন আদিবাসী পরিবারের শিশুরাও যোগ দেয়। দুশ’ টাকা মজুরি কিষানের আর দু’কেজি চাল। স্কুল খোলা থাকলে এইসময় ছাত্রছাত্রী কম আসে। এখানে টাকাপয়সায় জমি ভাগে দেওয়া হয় না। ফসলের ভাগ দিতে হয়।

— চাষির ছেলে আর চাষ করেনা। আগের মত মানুষ আর ঘরকুনো না, বাইরের রাজ্যে শ্রমিক হয়ে চলে যাচ্ছে সবাই, তাদের ছেলেরাও আর চাষ করতে পারবে না। সামনে টেকনোলজি ছাড়া চাষ করা সম্ভব হবে না। অনিমেষদা বলে যাচ্ছিলেন, চাষটা পুরো কর্পোরেটের হাতে চলে গেলে আর লৌকিকতার জায়গাটা থাকবেনা। (কথাটা ঠিক বুঝতে পারিনি যদিও। শুনছিলাম চুপচাপ) ওই যে ছোট্ট জমিটা দেখছেন, চাষ দেয়নি এখনো, হয়তো কোনো সমস্যায় আছে। ওর মনের অবস্থাটা ভাবুন। – এবার বুঝিয়ে বললেন অনিমেষদা, লৌকিকতা মানে কো-অপারেশন।

ফিরে আসতে আসতে হুগলি বর্ধমানের গ্রামগুলোয় দেখছিলাম ছোট ছোট আড়তে জ্যোতি আলুর বস্তা লোড করছে ডালা পার্টি। দাম নেমে এসেছে আটশ টাকা বস্তায়। লেবারাররা বলছিলেন, স্টোরে আলু এখনো আছে। সরকার আগে চাষির কাছ থেকে আলু নিত, বামফ্রন্টের জামানায়। কিন্তু তলা থেকে ওপর- সবাই তো চোর। বের করার সময় আর আলু দিতে পারত না চাষি। সরকার এখন তাই স্টোরের সাথেই সরাসরি চুক্তি করে।

আমন ওঠার পর মাঠগুলো বহুদূর অবধি দেখা যায়। এবার ধানের বাজারও খারাপ। আটশ টাকা বস্তা চলছে। চাষি বসে নেই। — চাষটা করলে কী হয় বলুন তো? মনটা ভালো থাকে। মাঠে যখন একটু একটু করে গাছ বাড়তে থাকে…কথায় বলে না, আশায় মরে চাষা?…

কৃষি ও গ্রাম আড়তদার, আলুচাষি, ফড়ে, ফসলের দাম

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in