শোভা ধনী। শান্তিপুর। ১৯ অক্টোবর, ২০২০।#
ফুল বেচেই সংসার চালান প্রভাতীদি। প্রভাতী রায়। বাড়ি শান্তিপুরের মনুনগর পাড়ায়। সাইকেলের হ্যান্ডেলে ফুলের ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরেন সকাল ৬ টা নাগাদ। সারা সকাল ফুল বেচে দুপুর দুপুর ঘরে ফেরেন। ঘরে অসুস্থ স্বামী ও সাত বছরের কণ্যা সন্তান। স্বামী আগে ব্যাঙ্গালোরে কোন এক কোম্পানিতে কাজ করতেন। ২০১১ সালে তিনি একটি বড়োসড়ো দুর্ঘটনার শিকার হন। দোতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান। সেখানেই চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়ার পর শান্তিপুরে ফিরে এসে ফুলের ব্যবসা শুরু করেন। এবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে আবারও দুর্ঘটনা ঘটে। মাথায় চোট পান। সেসময় লকডাউন চলছে। চিকিৎসার সুযোগ বন্ধ। তাই হোমিওপ্যাথি করান। দুবার মাথায় চোট পাবার পর তিনি আর সাইকেল করে মালা ফেরী করতে পারেন না। তাই প্রভাতীদিকেই বেরিয়ে পড়তে হয় রোজগারের সন্ধানে। খুব ভোর ভোর উঠে রান্না, খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়েন। কাজের ফাঁকে জল আর খুব খিদে পেলে বিস্কুট খেয়ে নেন। ভাত রুটি জাতীয় এঁটো খাবার খেতে দেখলে ক্রেতারা আর ফুল নাও কিনতে পারেন। ফুল তো দেবতার পুজোয় লাগে। স্বামী অসুস্থ হলেও ফুলের জোগাড় করে দেন। গোছগাছ করে দেন। প্রভাতীদির কাজ হল ঘুরে ঘুরে সেইসব মালা বেচে আসা। সুত্রাগড়, কলোনীর দিকটায় প্রভাতীদি যেতে চান না। কারণ হরিপুর অঞ্চলে তার বাপের বাড়ি। চেনা কারো সাথে দেখা হয়ে গেলে তাকে বড় অস্বস্তিতে পড়তে হয়। তবে বাপের বাড়ির লোক জানে যে, তিনি বাইরে বেরিয়ে কাজ করেন। সারাদিন বাইরে ঘুরলেও সন্ধেবেলা বেরতে নারাজ তিনি। কারণ তিনি মনে করেন, ‘যদিও তার মাঝ বয়স, তবুও কার মনে কী আছে তা তো বলা যায় না’। রেশনের চাল, গম কিছু পান না। তবে মেয়ের স্কুলের মিড ডে মিলের চাল, আলু পান। প্রভাতীদি যেমন রোগা, তার সাইকেলটারও তেমন জীর্ণ দশা।
ভয় হয়, সাইকেলটা পারবে তো ফুলের ভার বইতে।
Leave a Reply