তারক নেহাতই একটা বাচ্চা ছেলে, কিশোর। সাইকেলে চেপে খবরের কাগজ বিলি করে। ওর কারবারের গল্পটা শুনলেন ও শোনালেন জিতেন নন্দী। মেটিয়াবুরুজ। ১ নভেম্বর, ২০২০।#
মোটামুটি তিনবছর ধরে আমি খবরের কাগজ বিক্রি করি। তখন আমার বয়স ছিল বারো। এখন আমার ষোলো বছর হচ্ছে। আমি আলিপুর টাঁকশাল বিদ্যালয়ে (তারাতলার কাছে) ক্লাস নাইনে পড়ি। এক ঘণ্টার মধ্যে কাগজ বিলি করে নটা সাড়ে নটার মধ্যে স্কুলে যেতাম। স্কুলে যেতাম ট্রেনে। কখনো কখনো দেরি হয়ে গেলে সাইকেলে চলে যেতাম। আটটার মধ্যে কাগজ বিলির কাজ শেষ হয়ে যেত। তাতে মাসে হাজার টাকা মতো পেয়ে যেতাম। লকডাউন যখন হল, তখন তো বন্ধ ছিল সব কিছু। পেপারও বন্ধ ছিল। এক-দু সপ্তাহ পরে বাবা বলল কি লকডাউনের মধ্যে বসা যাবে না, তুই দুধের লাইনটা চালু কর। কাগজের কাস্টমারদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি দুধের লাইনটা চালু করব। আপনারা কি দুধ নেবেন? তাহলে বলবেন আমি দুধ এনে দেব।’ প্রথমে সন্তোষপুর থেকে দুধ নিতাম। এখন ঘোষপাড়ার ডিলারের কাছ থেকে নিচ্ছি। মোটামুটি সত্তর-পঁচাত্তরটা কাস্টমার পেলাম। যেদিন জলদি হয়ে যায়, দুধ বেঁচে গেলে দোকানে ফেরত দিয়ে দিই। আজ পাঁচখানা বেঁচে গেছে। নিয়ে গিয়ে ফ্রিজে রেখে দেব। বাড়িতে আগে ফ্রিজ ছিল না। ফ্রিজ করলাম, তারপর এই কাজটা চালু করলাম। এছাড়া টক দই, মিষ্টি দই, পনির, পাঁউরুটিও আছে। বারোটার সময় বাড়ি ফিরি। মোটামুটি দিনে এক-দেড়শো টাকা এসে যায়।
সকালে সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠে পড়ি। পাঁচটার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে চান করে বেরিয়ে যাই। সাড়ে ছটার মধ্যে কাগজ এসে যায়। কাগজটা নিয়ে তারপর দুধের লাইনে যাই।
কারবারের সঙ্গে পড়াশুনাও হচ্ছে। অনলাইন পড়া হচ্ছে, ফোনে আসছে তো। এই সময় ফোনও কিনতে হল।
আমরিতলায় সাতঘরা মসজিদের পাশে বাবার মুদিখানা আছে। আমার ভালো নাম করণ সাও, বাবা সুনীল সাও। হিন্দিতে পড়ি। বাংলাও আছে। বাড়িতে মা, বাবা, ভাই, দিদি আছে। একটা বড়ো দিদির বিয়ে হয়ে গেল। আমার ভাইও সন্তোষপুরের ওদিকে এই কাজই করে।
Leave a Reply