কুশল বসু, কলকাতা, ৩০ অক্টোবর, তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া#
প্রতি বছর গরমকালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও কালিমান্তান দ্বীপে চাষের জমি পুড়িয়ে পরিষ্কার করা হয় পরবর্তী চাষের জন্য, আর তাতে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ধোঁয়াতে ভরে যায়। এবছর তা হয়েছে সবেচেয়ে মারাত্মক। ইন্দোনেশিয়া তো বটেই, আশেপাশের দেশগুলি — ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন্স — এরাও ধোঁয়ার শিকার হয়েছে।
অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে ইন্দোনেশিয়ার ছ’টি প্রদেশ — রিয়াও, জাম্বি, দক্ষিণ সুমাত্রা, পশ্চিম কালিমান্তান, মধ্য কালিমান্তান এবং দক্ষিণ কালিমান্তান-এ জরুরি অবস্থা জারি করতে হয় ৪ সেপ্টেম্বর। তা তুলে নেবার পর ফের ১৪ সেপ্টেম্বর রিয়াও-তে জরুরি অবস্থা জারি হয়। ইন্দোনেশিয়াতে বটেই, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের প্রচুর স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রিয়াও-এর রাজধানী পেকানবারু থেকে প্রচুর মানুষ পালিয়ে চলে যায়।
জুন থেকে শুরু হওয়া এই ধোঁয়ার কারণে লক্ষাধিক মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করে। অক্টোবরের ২৪ তারিখ দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছয়। অবস্থা এবছর আরো সঙ্গীন হয়েছে, কারণ এবার ‘এল নিনো’-র বছর, অর্থাৎ খরার বছর, আর্দ্রতা কম, শুষ্কতা রুক্ষতা বেশি।
অবশেষে অক্টোবর মাসের শেষ দিকের বৃষ্টিতে ধোঁয়া কিছুটা কমে।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা এবং কালিমান্তান দ্বীপে এই সমস্যা অনেক পুরনো। অন্তত তিরিশ বছর আগে থেকেই এই সমস্যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত। সুমাত্রা ও কালিমান্তান দ্বীপে পাম চাষ হয়, বড়ো বড়ো কর্পোরেট কোম্পানিগুলি পাম গাছ চাষ করে, পাম তেল প্রভৃতির জন্য। পুরনো পাম চাষের জমি পরিষ্কার করার অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় পুড়িয়ে পরিষ্কার করা অনেক বেশি সস্তা। তাই করা হয়। অনেক সময় নতুন জঙ্গলজমি পুড়িয়ে ফেলা হয় পাম চাষের জন্য। গোপনে জঙ্গল পুড়িয়ে দিলে জঙ্গলের যে ক’টি গাছ কাটা হলো, সেগুলি আর নতুন করে লাগানোর দায় থাকে না।
তবে শুধু পাম-কর্পোরেট নয়। ছোটো ও মাঝারি চাষিরাও জমি পোড়ায়। ইন্দোনেশিয়াতে একজন চাষি আইনসম্মতভাবে ২ হেক্টর (১ হেক্টর = ৬.২২ বিঘা) পর্যন্ত জমি পোড়াতে পারে। তবে এই আইনের তোয়াক্কা করে না চাষিরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কখনো কখনো গরমকালে কেবল মজা করার জন্য চাষ হয়ে যাওয়া জমিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সুমত্রা এবং কালিমান্তানের বেশি কিছু এলাকার মাটি ‘পিট’ বা কার্বন সমৃদ্ধ। সেই সব জমিতে আগুন লাগালে সেই আগুন নিভতে নিভতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়। আর তার সাথেই, চাষজমির জৈব অবশেষ ভস্মীভূত হওয়া ছাড়াও, ভূ-গর্ভস্থ কার্বন পুড়ে গিয়ে দূষণের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিবছরই ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা বলেন, ‘এই শেষবার, আর না’। কিন্তু প্রতি বছরই এই বহ্নুৎসব চলে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মিলিত সভা ASEAN, সবাই বছর বছর প্রস্তাব নেয় এই জমি পুড়িয়ে পরিষ্কার করার বিরুদ্ধে, শাস্তির নিদান হাঁকে। কিন্তু তাতে এখনো অবধি কোনো লাভ হয়নি।
Leave a Reply