যোগীন সেনগুপ্ত, বারাসাত, ২১ অক্টোবর#
১০ অক্টোবর ২০১৫ শনিবার বিকেলে বারাসাতের কাছারি ময়দানে এক সভায় উপস্থিত ছিলেন ২৩ বছর থেকে সত্তরোর্ধ বয়সের ১৮ জন মানুষ।
সভার শুরুতে পল্টুর কাছ থেকে জানতে পারি : মাস তিনেক আগে খবরের কাগজের একটা রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পারলাম যে যশোর রোডের পাশে হাজার চারেক গাছ কাটা হবে রাস্তা চওড়া করার জন্য। দেড়শো থেকে আড়াইশো বছরের পুরোনো এই গাছগুলোকে কেটে যাতে সাফ না করা যায় সেজন্য আজ নিয়ে তিনটে সভায় ধরে আমরা বন্ধুরা বসেছি। গতদিন আমরা যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছিলাম, তা হল, আরটিআই করে এই বিষয়ে কিছু তথ্য নেওয়া হবে। এছাড়া গ্রিন ট্রাইবুনালে একটা মামলা করার কথাও হচ্ছে। এটা প্রশাসনিক দিকের ব্যাপার। তাছাড়া, বেশিরভাগ মানুষকে কীভাবে আমরা বিষয়টা জানাতে পারি। যেমন, প্রথম হচ্ছে সামান্য কিছু পোস্টার আমরা লাগাতে পেরেছি কোর্ট আর প্রশাসনিক দপ্তরের কাছে। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে তো এটা আটকাতে পারব না। আমাদের লোকজনকে জানাতে হবে। বহু মানুষের সমর্থন দরকার।
এক উদ্যোক্তা বন্ধু বলেন : আজ আমাদের তৃতীয় সভা। আমাদের এই ফোরামের কোনো নাম বা স্ট্রাকচার নেই। একটাই ইচ্ছে যাতে গাছগুলোকে আমরা বাঁচাতে পারি। আমরা দেখেছি সরকারি জায়গার গাছগুলো শুকিয়ে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। তার পাশেই যেসব গাছ আছে কিছুই হচ্ছে না। এক-দেড়-দুশো বছরের পুরোনো গাছ হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে।
অনামিকা সরকার বলেন : এখন অবধি চারটে ডিপার্টমেন্টে আরটিআই করা হচ্ছে। বিষয়টা কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে জানার জন্য পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডে, ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৫-এর বিষয় বলে পিডব্ল্যুডি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে, কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্টার ফর ফরেস্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট-এর কাছে এবং ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসে আমরা আরটিআই পাঠিয়েছি। সত্যিই রাস্তাটা চওড়া করার দরকার আছে কিনা সেটা ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস দেখে। ডিএম-এর কাছে এখনও যাওয়া হয়নি।
আগের সভায় কথা উঠেছিল, এনএইচ ৩৪-এও একইভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছে। যে কাজিপাড়ায় গাছটা কাটা পড়বে, সেখানে যে চায়ের দোকান, সেখানে লোকে কি গাছ কাটা নিয়ে আদৌ ভাবছে? যদি না ভেবে থাকে, তাহলে তাকে কীভাবে ভাবাব?
এদিনের আলোচনায় উন্নয়নের প্রশ্নটা ওঠে। উন্নয়নের জন্য রাস্তাটা জরুরি। এটা সামনে আসছে। গাছগুলোকে বাঁচাতে হবে। তাহলে উন্নয়নের প্রশ্নটা কিন্তু আমাদের সামনে চলে আসবে। গাছগুলোকে রেখে কিছু করা যায় কি? বিকল্প কিছু আছে কিনা দেখা দরকার।
পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে, রাস্তা চওড়া করা হবে, এটা সত্যিই প্রয়োজন আছে, নাকি উন্নয়নের একটা গিমিক মাত্র, এই ব্যাপারটা এখনও তলিয়ে দেখা হয়নি। আমরা বারাসাতের বাসিন্দা বা অন্যদিকের বাসিন্দারা ভিআইপি রোডের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, রাস্তা প্রচুর জ্যাম হয়, ইত্যাদি। কিন্তু যারা এনএইচ ৩৫-এ যাতায়াত করে, তারা কি মনে করে যে রাস্তাটা চওড়া করা দরকার? সেখানে কি সত্যিই জ্যাম হচ্ছে?
তিন-চারজনের ছোটো ছোটো দল নিয়ে সমীক্ষায় যাওয়া হোক। সাইকেল নিয়ে বা অন্যভাবে। একটা লিফলেট বার করা হবে। আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে গাছ এবং প্রাণীকূল কীভাবে জড়িয়ে আছে সেটা তুলে ধরা দরকার।
আমি যশোর রোড দিয়ে টুক করে বাংলাদেশ যাব, আমার জন্য রাস্তাটা চওড়া হচ্ছে, এটা তো ভাবাই যায় না। যশোর রোড দিয়ে লক্ষ লক্ষ ট্রাক বাংলাদেশে যাবে, কোটি কোটি টাকার পণ্য যাবে, আসলে একটা কলোনি তৈরি করার পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে।
বনগাঁ পর্যন্ত এই রাস্তা গেছে। গোবরডাঙা, বনগাঁ, বারাসাত বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদী মানুষ এই বিষয়ে ভাবছে, তাদের মধ্যে একটা সংযোগ দরকার।
Leave a Reply