জিতেন নন্দী, কলকাতা, ১১ ডিসেম্বর#
আজ দুপুর তিনটেয় আমরা পরমাণু শক্তি বিরোধী কর্মীরা কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনের খোলা চত্বরে জড়ো হয়েছিলাম। সেখানে যে স্থায়ী মঞ্চটা রয়েছে, তার সামনে ‘রিমেম্বারিং ফুকুশিমা কমিটি’র ব্যানার এবং পোস্টারগুলো রাখা হয়। ভারত-জাপান পরমাণু চুক্তি বন্ধ করার আবেদন রেখে একটা ছোট্ট হ্যান্ড-মাইকে একের পর এক বক্তা বক্তব্য রাখেন, শ্লোগান দেওয়া হয়। দুপুরবেলায় এই চত্বরে অনেক যুবক-যুবতী আড্ডা মারে, খাবার আর চায়ের দোকানে ভিড় লেগে থাকে। তারা ছড়য়ে ছিটিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনতে থাকে, অনেকে এগিয়ে এসে প্রচারপত্রটি নিয়ে পড়ে। বিকেল পাঁচটা অবধি প্রতিবাদ-কর্মসূচি চলেছিল। একই সঙ্গে দিল্লি এবং ভারতের অন্যান্য শহরেও এই ধরনের প্রতিবাদ-সভার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রচারপত্রে বলা হয়েছে :
আসন্ন ভারত জাপান পরমাণু চুক্তি আমাদের ওপর আরও কিছু পরমাণু-বিদ্যুৎ চুল্লি চাপিয়ে দেবে। আর এই ভয়াবহতার অন্যতম হোতা জাপানের সরকার। যে যেখানেই থাকি—ভারত বা জাপান, কলকাতা চেন্নাই দিল্লি বা টোকিও—এসো, সকলে নিজ নিজ উদ্যোগে পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির সর্বনাশা আয়োজনের প্রতিরোধ করি।
আমরা ভাবতে পারি: একি কথা! ফুকুশিমার মতো এত বড়ো পরমাণু-দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশে দেশে পরমাণু-সরঞ্জাম ফিরি করে বেড়াচ্ছেন! আসলে, ফুকুশিমা দাইচির দুর্ঘটনার পরেই এই ফিরি করার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে। কারণ, জাপানে নতুন পরমাণু চুল্লি বানানোর বিরুদ্ধে জোরালো জনমত। অথচ, চুল্লি-প্রযুক্তি ও যন্ত্র বিক্রির তাগিদ রয়েছে। তাই জাপানের বাইরে এসবের বাজার খোঁজা জরুরি হয়ে উঠেছে। ফলে, ফুকুশিমার এত বড়ো দুর্ঘটনার পরও (আজও চুল্লির আশপাশের জনপদের লক্ষাধিক ঘরছাড়ারা নিজেদের গৃহে ফিরতে চাইছে না) পরমাণু প্রযুক্তির বিক্রেতাদের এবং জাপানের মুমূর্ষু পরমাণু শিল্পকে পুনরিজ্জীবনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী আবে ক্রেতার সন্ধানে বেরিয়েছেন। আমরা জেনেছি, মহাশয় আবে ১১-১৩ ডিসেম্বর তাঁর ভারত সফরে এসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বসে প্রস্তাবিত পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করবেন।
সারা পৃথিবী আজ নবীকরণযোগ্য এবং পরিবেশ-অনুকূল শক্তিকে আরও বেশি বেশি গ্রহণ করতে চাইছে। অথচ বহুজাতিক পরমাণু শিল্পসংস্থাগুলি ভারতের মতো দেশগুলোকে টার্গেট করেছে—তাদের বর্জিত পরমাণু শক্তি-সরঞ্জাম এখানে জড়ো করতে তারা মরিয়া। পরমাণু শক্তি বিরোধী সমস্ত প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে আরেভা, জি.ই., ওয়েস্টিংহাউস, অ্যাটমসরয়এক্সপোর্ট, হিতাচি, তোশিবা আর মিৎসুবিশি-র মতো বহুজাতিকেরা ভারতকে তাদের পরমাণু জঞ্জালের আস্তাকুঁড় বানাতে চাইছে। যেখানে যেখানে পরমাণু চুল্লি বসানোর আয়োজন চলছে, সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি করছে। তাদের পরিবেশগত এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের তোয়াক্কা করছে না চুক্তিতে উদ্যত জাপানি সরকার।
এই ঔদ্ধত্যকে মানা যায় না। আসুন আমরা আওয়াজ তুলি:
• ভারত জাপান পরমাণু চুক্তি নিপাত যাক!
• মহাশয় আবে, আর আমরা হিরোশিমা-নাগাসাকি-চের্নোবিল-ফুকুশিমা চাই না। আপনি এই সর্বনাশা প্রয়াস থেকে বিরত হোন।
• আর প্রধানমন্ত্রী মোদী, আপনি জলবায়ু সংকট ও পৃথিবীর পরিবেশ নিয়ে ভালো ভালো কথা বলছেন—সত্যি যদি পরিবেশ নিয়ে আপনার মাথাব্যথা থাকে, পরমাণু চুল্লির উপাসনা এই মুহূর্তে বর্জন করুন। জাপানের সঙ্গে ভয়ংকর পরমাণু চুক্তি থেকে বিরত হোন।
Leave a Reply