অদ্রিজা বসাক। শান্তিপুর। ১০ অক্টোবর, ২০২০।#
যা আমি এখন লিখছি তা আত্মজীবনী ঠিক নয়। ছোটখাটো আমার বর্তমান জীবনের কথা। অতীতের জীবন আর বর্তমান জীবনের মধ্যে অসাধারণ এক পার্থক্য। তা শুধু আমার নয়, এ জগতের প্রত্যেকেরই। অতীতের জীবন বলছি কারণ এইরকমটা আমি বা আমার মতো ছোট মানুষরা প্রথমবার দেখছি। দাদু-দিদা, ঠাকুরদা-ঠাকুমা এবং বাবা মা’র মুখে শোনা তাদের সময়ের কিছু বিশেষ ঘটনা বা মহামারি যা জগৎ জুড়ে চলেছিল।
তাহলে শুরু হোক আমার অতীতের আত্মজীবনী। আমার ডেইলি রুটিন ছিল সকালে পড়া থাকলে ছ’টায় ওঠা আর না থাকলে সাতটায়। পড়ে এসে বা বাড়িতে পড়ে উঠে সকাল সাড়ে নটায় ব্যাগে বই ঢুকিয়ে স্নান করতে যেতাম। তারপর স্নান করে এসে ড্রেস পরে মায়ের হাতে তৈরি এবং মায়ের হাতে খাওয়া সেই ভাত উপভোগ করতাম। স্কুলে চলে যেতাম। আবার কখনো কখনো স্কুল কামাইও হতো। যাক, যথারীতি স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের ভাত খেতাম বিকেল পাঁচটায়। পড়তে যেতাম। পড়ে এসে আবার ম্যাডামের কাছে নিজে পড়ে, পড়া শেষ করতাম ওই রাত ১০ টায়… এইভাবে বেশ কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু এক ঝড় হঠাৎই চিন থেকে আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ল। এক ভাইরাস। যার নাম করোনা।
এই করোনার কারণে সব উল্টেপাল্টে গেল। প্রচুর মানুষ মারা পড়ছে। তার জন্য আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থার শাসকরা ঠিক করলেন লকডাউন করবেন। এই লকডাউন মানে হল সব বন্ধ। এখন অবশ্য সবকিছু খুলে গেছে। তবে মাস্ক পরা রয়ে গেছে কারণ করোনা যে এখনো যায়নি। আমার প্রাইভেট টিউশন এবং স্কুল দুটোই বন্ধ হয়ে গেল। প্রথম প্রথম বেশ মজা লাগছিল। শুধু খাচ্ছিলাম আর ঘুমোচ্ছিলাম। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিল টি.ভি.। এখন লকডাউন নেই। আবার প্রাইভেট টিউশন তাদের মুখমন্ডল দেখিয়েছে। শুধু স্কুলটাই বন্ধ। আগের মত আঁকা, পড়াশুনা তরতর করে চলছে। তবে পাঁচটায় খাওয়ার বদলে দুটোয় খাওয়া। সাড়ে ন’টায় স্নান করার বদলে সাড়ে বারোটায় স্নান করা। দেদার টিভি দেখাটা আর নেই। যাইহোক, আমি চাই এইসব মিটে যাক, সবাই সবার রুটিনে ফিরে আসুক। এই আমার বর্তমান জীবন।
এবছর কি মা দুর্গা এসে অসুরের মত করোনাও ধ্বংস করবেন?
প্রেরণা বসাক। শান্তিপুর। ১০ অক্টোবর, ২০২০।#
এখন আমরা মহামারির ফলে জাতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এমাসেই আমাদের সেরা উৎসব দুর্গাপূজা। প্রতি বছর আমরা হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ করি। নতুন জামা, জুতো পরি। কিন্তু এবছর প্রতিবারের কথা মনে পড়ছে। এখন ট্রেন বন্ধ, লকডাউনের ফলে বহু মানুষ কর্মহীন। এর ফলে এমন অনেক গরীব পরিবারের সন্তান আছে যারা এবছর পুজোয় জামা পাবেনা। অনেকে কলকাতা বা অন্য কোনো জায়গায় ঠাকুর দেখতে যান, তারা এবার যেতে পারবেন না। আবার অনেকে পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফেরেন। এবছর এইসব কিছুই সম্ভব নয়। অনেকে বলছেন এবছর অঞ্জলি, সন্ধ্যাপুজো, ভোগ বা ভাসান হবেনা। আবার অনেকে বলছেন যে, এবছর মা এসে অসুরের মতই করোনাও ধ্বংস করবেন। দুর্গাপুজো মানে বিজয়া দশমী আর বিজয়া দশমী মানেই খাওয়া দাওয়া, গুরুজনদের আশীর্বাদ নেওয়া, একে অপরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানানো। আশা করি দুর্গাপূজা সবার ভালোই কাটবে। জয় মা দুর্গা।
Leave a Reply