শমিত ও পর্ণব। শান্তিপুর। ২ নভেম্বর, ২০২০।#
এই রোববার শান্তিপুর সূত্রাগড়ে বঙ্গর তাঁত-কাপড়ের হাটে, সকাল আটটা-ন’টা নাগাদ অন্যবারের মত তেমন ভিড় নেই। উৎসবের মরশুমে, এই সময়, ভোরের হাট ধরতে/করতে আসা বাইরের লোক, অত গাড়ি, টোটো, সাইকেল, মোটরবাইকের গ্যারেজ সামলে সরু রাস্তায় জটলা পাকিয়ে তুলত মাত্র শ’মিটার দূরে নতুনহাটের ত’বাজারে যাওয়া-আসা হাটুরেরা।
অন্যদিকে এদিন হাটে ঢোকার মুখে চৌকিতে বসা এক গামছা-ব্যবসায়ী গল্প করছিলেন অন্য ব্যবসায়ীদের সাথে। স্যানিটাইজার নিয়ে। কমদামী স্যানিটাইজার ব্যবহারে তার পরিচিত অনেকের হাতে র্যাশ বেরিয়েছে। একজনের বক্তব্য, এলার্জি থাকলে বাজারে আমদানি হওয়া নিত্যনতুন স্যানিটাইজার ব্যবহারে সাবধান হওয়া উচিত।
হাটে ঢোকার মুখে সেই রাস্তায় লক্ষীপুজোর বাসি মাইকের আওয়াজের মধ্যে এদিন দিব্যি জায়গা করে নিলেন পঞ্চাশ ষাটজন নাগরিক, হাতে পোস্টার ধরে, উঁচু করে। পথচলতি মানুষেরা কেউ কেউ চেয়ে নিচ্ছেন হাট চত্বরে বিলি হওয়া দুটো করে লিফলেট। একটায় ‘অযথা আতঙ্ক নয়। চাই সতর্কতা’ শিরোনামে দেখানো হয়েছে ‘ টিবি ও কোভিড-১৯ (করোনা) প্রতিরোধের উপায় ও সাধারণ সতর্কতাগুলো একদম এক।’ অথচ মিডিয়া, প্রশাসন আর সরকার কেন জানায় না যে, টিবি রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর হার করোনার চেয়ে অনেক বেশি? অন্যটায়, www.biswaroop.com সাইটে প্রমাণাদি জিম্মি রেখে কীভাবে ৩টি পদক্ষেপে কোভিড-১৯ কে প্রতিরোধ করা যায় আর ‘তারা কীভাবে ৩টি পদক্ষেপে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়’, বোঝানো হয়েছে।
অযথা করোনা আতঙ্কে বিভ্রান্ত না হয়ে জনজীবনকে স্বাভাবিকতায় ফেরানোর দাবীতে বেশ কয়েকমাস থেকে নানা প্রচার আন্দোলন চালিয়ে আসছে ‘অখিল ভারতীয় স্বাস্থ্য অভিযান’। প্রচারের মূল উদ্দেশ্য আতঙ্ক থেকে সাধারণ জনজীবনকে মুক্ত করা। আনলক পর্বে এখনও স্কুল বন্ধ প্রায় আট মাস। লোকাল ট্রেন চলছে না। দেশের বেশির ভাগ মানুষের হালৎ ভয়ঙ্কর খারাপ। শ্রমিক মজুর বেরোজকারী হয়ে বসে আছে। এসব নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নেই। মানুষের রুজিরুটি নিয়ে সরকারের কোনো কথা নেই অথচ মানুষের মুখে মাস্ক নেই কেন তা নিয়ে পাবলিককে নাজেহাল করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। অথচ প্রথম থেকেই মাস্ক নিয়ে ‘হু’ এবং ‘সরকারী স্বাস্থ্য দফতর’-এর নির্দিষ্ট কোন গাইড লাইন নেই। স্বাস্থ্য দফতর কখনো বলছে এন-৯৫ মাস্ক, কখনো গামছা, কখনো কাপড়। অথচ মাস্ক ব্যবহারকারীদের অনেকেরই শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এন-৯৫ মাস্কে ভাইরাস আটকায় এমন কোনো প্রমাণ নেই। আন্দোলনকারীদের অন্যতম জগদীশ চন্দ জানান – সরকারের দফতর থেকে তথ্য জানার অধিকার আইনে ‘মাস্ক বাধ্যতামূলক’ এরকম জানা যায়নি। আন্দোলনকারীদের মূল অভিযোগ মিডিয়ার বিরুদ্ধে। মেন স্ট্রিম মিডিয়াই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বেশি, তথ্য গোপন করছে- এরকমই জানালেন আন্দোলনকারীদের একজন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।
মোড়ের মাথায় খদ্দেরের অপেক্ষায় থাকা, টোটোচালক, দোকানদারদের কেউ কেউ ভাবছিলেন এরা আবার কোন দলের লোক? কোনো পোস্টারে লেখা, ‘কোভিড মানেই রোগী নয়’, কোনোটায়, ‘আমার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে চাই’, কোনোটায়, ‘অবিলম্বে ট্রেন চালু হোক’, আবার কোনোটায়, ‘সাহায্য নয়, কর্ম করে খেতে চাই’…
এসব পড়ে এসে একজন টোটোচালক বাকিদের বলে উঠলেন, ‘এই এরা আমাদের কথাই বলছে রে’। অন্য একজন এসে জিগ্যেস করলেন, আপনাদের নেতা কে? আন্দোলনকারীরা বললেন, আমাদের কোনো নেতা নেই। আপনি আমাদের সমর্থন করলে আপনিই আমাদের নেতা বা একজন।
Leave a Reply