সৈকত। অশোকনগর। ২ ডিসেম্বর, ২০২০।#
বাইগাছি মৌজার এই অংশে যারা চাষ করছেন, তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয় স্বাধীনতার পর। প্রথমে বাস্তু জমি, পরে চাষের জমি। সবটাই অনুমতি-দখলসত্ব৷ আর.আর. দপ্তর বাস্তুজমির মালিকানা দিলেও চাষের জমির কোন মালিকানা দেয়নি। চাষের জমির বেশিরভাগের অনুমতি-দখলসত্ব পান পরি সেন ও হারান দাস৷ অন্যান্যরাও কিছু কিছু পান। অনুমতি দখলের জমি একাধিকবার হস্তান্তর হয়েছে। গরীব চাষির কাছে বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হয়েছে। সব সরকারের আমলেই। ‘৯২ সাল নাগাদ বিপুল মন্ডল ২ বিঘা ৫ শতক জমি স্ট্যাম্প ডিউটি মিটিয়ে, রেজিস্ট্রি ফি দিয়ে কিনে নেন। তার কাছে দলিল ও অনুমতি-দখলের সত্ত্ব সবটাই আছে। তার ২ বিঘা ৫ শতক জমিই তেল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। যথাক্রমে জীবন সিকদারের পৌনে চার বিঘা জমি, তপন দাসের ছয় বিঘা,পরি সেনের বিঘা দশেক (সঠিক পরিমাপ পাওয়া যায়নি) ও অন্যান্য জনা পঞ্চাশেকের বেশি কৃষকের জমি ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও অধিগ্রহণ করা হবে বলে তাদের আশঙ্কা।

জমি ও জমিলুঠের কিসসা সর্বত্রই এক। আর. আর. এখনো ও. এন. জি. সি. -কে ক্লিয়ারেন্স দেয়নি। কৃষকেরা অনুমতি-দখলসত্ত্বে ক্ষতিপূরণও পাননি। জমির লুঠতরাজের ভাগের গঙ্গায় শাসক-বিরোধী সকলেরই অবাধ অবগাহন। কার টাকা কে খায়? এর উত্তর সময় বলবে। প্রোজেক্টের সামনে জনৈক আধিকারিকের সাথে কথা হচ্ছিল। তাঁর জবাব -“ক্ষতিপূরণ ছাড়া ও.এন.জি.সি. প্রোজেক্ট করে না। কতটা তেল আমরা নিশ্চিত নই। খোঁজ চলছে। আর রিফাইনারির কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই”। প্রোজেক্টের বাইরে কয়েকজন শ্রমিক। আনন্দ তামিলের ছেলে, বারাণসী থেকে মুকেশ, মহারাষ্ট্রের বিশাল। সবাই কন্ট্রাক্ট কর্মী। ঠিকাদারের অধীনে শুরু থেকে কাজ করছেন। স্থানীয় কজন – তারা কেউ বলতে পারলেন না। গেটে দাঁড়ানো সিকিউরিটি কর্মীটি বাঁকুড়ার। তিনিও এজেন্সির। সদ্য পাথর বিছানো রাস্তা দিয়ে পৌঁছাতেই, দেখা গেল চেয়ার পেতে বসা রবীনকে। রাস্তার ঠিকেদার তপন ভৌমিকের অধীনে কাজ করেন। মোট কুড়িজন কাজ করছেন রাস্তা তৈরির। ১২ জন বাইরের, আটজন স্থানীয়। বোরিং-এর দায়িত্বে ঠিকেদার তপন মাজি। ঊনিশ জন কাজ করছেন। তারা দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে এসেছেন। স্থানীয় পাঁচজন। কিছুটা দূরে ছোট্ট চালাঘর। উঁকি দিতে দেখা গেল তক্তাপোষে একজন প্রবীণ শুয়ে ছিলেন। তিনি হারান দাসের জমি ভাগে চাষ করেন। মুসলেম হাজি। এই জমি তিন ফসলি। বর্ষায় জল কম হলে কখনও ধান হয়। জঙ্গল সাফ করছিলেন আর একজন। তিনি হাজি সাহেবের থেকে জমি নিয়ে চাষ করেন, আলাউদ্দিন ভাই। জমি গেলে কী করবেন? ভাষাহীন চোখে তাদের জবাব -“জানিনা। চলে যাব”।

Leave a Reply