• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

লেডিজ হস্টেলে সেদিন

অমিতা নন্দী

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আমার যাতায়াত ছিল কিশোরী বেলা থেকেই। কারণ আমার এক জামাইবাবু ছিলেন ওখানকার স্টাফ এবং দিদি-জামাইবাবুরা লেডিজ হস্টেলের পাশের কোয়ার্টারেই থাকতেন। তখন তো আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া-আসার বেশ চল ছিল। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের পরিবেশ — তার গাছপালা, কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া আর বকুলফুলের শোভা খুব মন-কাড়া ছিল। ওখানকার ঝিলেও খুব স্নান করতে যেতাম সুযোগ পেলেই। আর ঝিলের পারে উইন্ড মিলটা ছোটোবেলায় একটা বিস্ময় ছিল।

আমার স্কুল-জীবনের শেষ দিকটা সত্তর দশকের শুরু। তখন অন্য একটা আকর্ষণ তৈরি হয়, ক্যাম্পাসের বিল্ডিংগুলোতে রকমারি দেওয়াল-লিখন দেখে — সত্তরের দশককে মুক্তির দশকে পরিণত করার আহ্বান ইত্যাদি। মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম, যদি মেডিকালে পড়ার চান্স না পাই তবে যাদবপুরেই কোনো বিষয়ে পড়ার চেষ্টা করব। হলও তাই। ১৯৭১ সালে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পর বর্ধমানের একটা কলেজে ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও যখন যাদবপুরে ফিজিক্স অনার্সে সেকেন্ড লিস্টে নাম উঠল, বাবার কাছে আবদার করে ওখানেই ভর্তি হলাম। তবে সে যাত্রা মাত্র ছ-মাস টিকে ছিলাম, তারপরেই ‘বুর্জোয়া’ শিক্ষাব্যবস্থার মোহ ছুঁড়ে ফেলে আন্দোলনের স্রোতে শামিল হই। সে ভিন্ন কথা।

তবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের মেয়ে-ছেলে সহপাঠীদের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তখন ইঞ্জিনিয়ারিং বা আর্টস ফ্যাকাল্টির কারো সাথে তেমন মেলামেশা ছিল না। কেবল ফার্মাসিতে আমার পরিচিত কিছু দাদা (পাড়াগতভাবে পরিচয়) ছিল — যারা একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ছোটো বকুলপুরের যাত্রী’-তে একমাত্র মহিলার ভূমিকায় কাউকে জোগাড় করতে না পেরে আমার সাহায্য চায়। ওদের সঙ্গে রিহার্সাল দিতে যেতাম বলে কেমিস্ট্রি প্র্যাকটিকাল ক্লাসে একজন মাস্টারমশাইয়ের কাছে খুব বকা খেয়েছিলাম, মনে আছে।

আমাদের তখন ফিজিক্স ও ম্যাথমেটিক্স অনার্সের ক্লাস ফার্স্ট ইয়ারে একসঙ্গে হত। ফিজিক্স অনার্সে মেয়েদের থেকে ছেলেরা সংখ্যায় একটু বেশি, আবার ম্যাথমেটিক্সে মেয়েদের অনুপাত বেশি ছিল। তখন আমি ছিলাম ডে-স্কলার অর্থাৎ হস্টেলে থাকতাম না।

পরের দফায় আবার আমি যাদবপুরে ঢুকি ইকনমিক্সে এমএ পড়ার জন্য ১৯৭৯-৮০ সালে। তখন আমার হস্টেলে থাকার দরকার ছিল, কিন্তু সিট পেতে বেশ কয়েকমাস গড়িয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রায় দেড়বছর হস্টেলে ছিলাম। এই সময়টার কথা কোনোদিন ভুলব না। দিন-রাত একসঙ্গে থাকার মধ্যে দিয়ে অনেকের সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

অনেকদিন মফস্বলে থাকার ফলে হস্টেলের জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হত। দেখতাম মেয়েরা কী অনায়াসে অন্যদের সামনে খোলামেলা পোশাকে চলাফেরা করছে, পোশাক পাল্টাচ্ছে, রাতের দিকে দেখতাম — রকমারি রূপ-চর্চা চলছে। তবে সবাই একরকম নয় — কেউ কেউ খুব পড়ুয়া ছিল, খালি পড়াশুনা করত। আর নির্দিষ্ট দু-একটা ঘর ছিল যেখানে দুপুরবেলা অফ-পিরিয়ডে কিছু ডে-স্কলার বন্ধুও এসে জুটত — সিগারেটে সুখটান দিতে, অর্থাৎ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে মেয়েরা ধূমপান করত না তখনও, অন্তত ১৯৮১-৮২ সাল পর্যন্ত।

সন্ধ্যেবেলা হস্টেল সুপারের ঘরের সামনে একটা জটলা হত — ডাকযোগে আসা চিঠিপত্র যখন একেক জনের নাম ধরে ডেকে দেওয়া হত। যাদের নামে চিঠি আসত — সে বাবা-মায়ের কাছ থেকে হোক কিংবা বন্ধু বা প্রেমিকের কাছ থেকে — তাদের মুখে যেন আলো জ্বলে উঠত, বাকিরা একটু মন-মরা।

আর বিকেলে গেস্টরুমে কিছু বোর্ডারের গেস্ট আসত — প্রায়শই নির্দিষ্ট কয়েকজনের প্রেমিক। রুম থেকে তাদের ডাক পড়ত, কেউ তার সঙ্গে বেরিয়ে যেত, কেউ বা ওই ঘরে বসেই গল্প করত। আর কিছু মেয়ে বাইরেই দেখা করে বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরে-টুরে বাইরে খেয়ে রাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হস্টেলে ফিরে আসত। রাতে ডাইনিং হলের খাবার আর তাদের মুখে রুচত না। আমাদের মতো কিছু সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যারা বাড়ি থেকে পাঠানো সীমিত টাকায় কিংবা টিউশন করে রোজগার করা টাকায় মাস চালাতাম, তাদের ভালো না লাগলেও ওই খাবারই খেতে হত। আর যাদের বাড়ি থেকে অনেক টাকা পাঠাত তাদের অনেকেই বেহিসাবি খরচ করে মাসের শেষে আমাদের থেকে ধার নিত।

যেসব মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত, সাধারণত তাদের নিজেদের ফ্যাকাল্টির ছেলেদের সাথেই প্রেম-বন্ধুত্ব হত। আর আর্টস বা সায়েন্সের মেয়েদের মধ্যে যাদের নিজের এলাকায় (শহরে) আগে থেকে কোনো প্রেমিক থাকত তারা ছাড়া অন্যদের প্রেম হত বেশিরভাগই ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির, ক্কচিৎ দু-একজনের নিজেদের ফ্যাকাল্টির ছেলেদের সঙ্গে। তবে মেলামেশা অবাধ ছিল। এমএ বা এমএসসি পড়ার সময়ই সাধারণভাবে একটা তাড়াহুড়ো কাজ করত — সময় ফুরিয়ে আসছে হস্টেল-জীবনের — একজন জীবনসঙ্গী ঠিক করতে হবে।

আমি যেটা বলতে চাইছি, এখন যাদবপুর চত্বরে যেসব ঘটনা ঘটছে তখন তেমনটা ছিল না। তেমন রেষারেষির সম্পর্ক ছিল না। বরং বাইরে থেকে যখনই ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে ঢুকতাম একটা নিরাপত্তা বোধ করতাম।

আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে আছে আমার হস্টেল-জীবনের শেষ কয়েকমাস। নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে, যাদবপুরে বাইরে থেকে আসা ছাত্রীদের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। ছাত্রদের অনেকগুলি হস্টেল থাকলেও ছাত্রীদের হস্টেলে তখন দুটি মাত্র ব্লক। তাতে আর স্থান সঙ্কুলান হয় না। ডাইনিং রুমের পাশের টিটি রুমে তখন মেঝেতে বিছানা পেতে নতুন মেয়েদের রাখতে হচ্ছে। সবার তো কলকাতায় আত্মীয়-স্বজন বা থাকার জায়গা নেই, কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাডমিশন দিয়েছে, কিন্তু এভাবে তারা থাকবে কীকরে? পড়াশুনাই বা হবে কীভাবে? আমরা সিনিয়র কয়েকজন প্রথমে উদ্যোগ নিই। সেইসময় হস্টেলের জিএস ছিল থার্ড ইয়ারের একজন ছাত্রী, ও এই পর্বে খুবই সক্রিয় এবং নেতৃত্বদায়ী ভূমিকা নেয়। আমরা জিবি ডেকে অন্যদের সঙ্গে কথা বলি, হস্টেলের এবং ডে-স্কলার ছাত্রদের সঙ্গে, ইউনিয়নের সঙ্গেও পরামর্শ করি। তারপর হল এক ঐতিহাসিক অভিযান — গেস্ট হাউস দখল। ইউনিভার্সিটির গেস্ট হাউস, বিশাল এলাকা জুড়ে, ঠিক লেডিজ হস্টেলের পাশেই। তাতে দোতলার দুটি সুসজ্জিত ঘরে দুজন মাত্র গেস্ট তখন কয়েকদিনের জন্য এসেছেন, বাংলাদেশের দুজন অধ্যাপক। লেডিজ হস্টেল থেকে দলে দলে ছাত্রী, তাতে উপযুক্ত সঙ্গত দিয়েছিল বয়েজ হস্টেলের ছেলেরাও, গিয়ে ওই দুজন গেস্টকে হাত জোড় করে অনুরোধ করেছিলাম একটা রুম শেয়ার করে থাকার জন্য। আর বাকি ঘরগুলো একটার পর একটা দখল করে নতুন ছাত্রীদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হল। তারপর কয়েকদিন ধরে সে কী উত্তেজনা — ডিন অফ স্টুডেন্টস পরদিন এলেন, তাঁকে ঘেরাও করে আমাদের কথা বলা হল, ভিসির ঘরে গিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হল। আমাদের যুক্তির কাছে তাঁরা হার মানলেন। অবিলম্বে নতুন বিল্ডিং তৈরির প্রতিশ্রুতি মিলল। কিছুদিনের মধ্যেই তা বাস্তবায়িত হল। লেডিজ হস্টেলের বরাবরের দুর্নাম (মেয়েরা খালি প্রেম করে আর রূপচর্চা করে) ঘুচল, মেয়েদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস এল, একতা তৈরি হল। তারপর ফ্রেশার্স ওয়েলকাম এবং আমাদের আউটগোয়িং ব্যাচের ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রাম একসাথে হল। আমাদের তখন শিয়রে শমন ফাইনাল পরীক্ষা। কিন্তু তার মধ্যেই রিহার্সাল দিয়ে আমরা একটা হাস্যকৌতুক অভিনয় করলাম, সবার খুব ভালো লেগেছিল। তার আগেই একটা ইন্টার হস্টেল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমরা লেডিজ হস্টেলের পক্ষ থেকে গিয়েছিলাম মেন হস্টেলে। সব মিলিয়ে হস্টেল-আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে বেশ একটা সখ্যতা-একতা-কমরেডশিপ গড়ে উঠেছিল।

আজকের যাদবপুরে এই ২৮ আগস্টের ঘটনার কথা জেনে তাই বেশ ধাক্কা খেয়েছি। তবে তার বিরুদ্ধে আবার যখন ছাত্র-ছাত্রীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনে শামিল হয়েছে, সেটাই কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ-রেষারেষি ঘোচাবার পথ দেখায়।

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in