• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

বড়ো হয়ে গেলাম হঠাৎই

মৈত্রেয়ী হালদার

কোনো কোনো সময়ে আমার ছোটোবেলার একটা স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায় — একটা লম্বা দমবন্ধ করা বারান্দা পেরিয়ে একটা দরজার দিকে আমি ছুটছি, দরজাটা পেরোলেই আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারব; কিন্তু দরজাটা পেরোলেই আবার ওরকমই একটা লম্বা বারান্দা আর তার শেষ মাথায় আরেকটা দরজা — আবার আমি ছুটছি — প্রত্যেকবার দরজা পেরোলেই আবার বারান্দা আবার দরজা — প্রতিবার চূড়ান্ত আশা আর তার পরপরই বিরাট হতাশা। শৈশব কোন দরজা দিয়ে পিছলে চলে গেল, কে তাকে ঠেকায়? বেঁচে থাকার এই একান্ত প্রচেষ্টা উত্তরোত্তর বহুগুণ বাড়তে থাকে, আর শৈশবের স্বপ্নে যে একটাই নিয়ম ছিল — অন্য সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে ছোটা — তা হোঁচট খায়। সরলতা আর থাকে না, সকলেই সেটা জানে। কিন্তু ঠিক কোন সময়ে শিশুর সারল্য অচল-অবান্তর হয়ে পড়ে? কখন পছন্দের নানারকম এসে ভিড় করে? কখন বাচ্চাটা দৌড়ের গতি কমাতে বাধ্য হয় এবং এমনকী বারান্দাটার সংকীর্ণতাও তার নজরে পড়ে? কখন একটা শিশু আর শিশু থাকে না?

চালু ধারণায় আমি ভেবেছিলাম প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াটা একটা ধীরগতির প্রক্রিয়া। অন্তত আমার আশাটা সেরকমই ছিল। কিন্তু বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার সূচনা অমন ধীরগতিতে হয় না এবং তা চলমান জীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎই একটা আঘাতের মতো এসে হাজির হয়। স্কুল জীবনের বেড়া টপকিয়ে, পরিচিত একটা ‘ভবন’ থেকে, বাড়ির থেকে অনেক দূরেরই আরও একটা ‘ভবন’-এ চলে যাওয়া, পরিস্থিতির বাধ্যবাধ্যকতায় এবং পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার কারণেও অতীত জীবনের সঙ্গে ছেদ টানার এই সময়টা যেন একটা গুমোটের মতো যা হঠাৎ একটা ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়বে। অকস্মাৎ জ্ঞানচক্ষু খুলে যাওয়া যেমন গুমোটের আবহাওয়াকে ভেঙে ফেলে তেমনই অন্তরে জন্মানো সদ্যোজাত এক বিশ্বাসকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। খুব সহানুভূতির সঙ্গে বিচার করেও দেখি আমার ভিতরে যা প্রবিষ্ট হল, সহানুভূতিও খুঁজে তার কূল পায় না। তীব্র বেদনায় আমি অনুভব করি আমার সহপাঠী একটি মেয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে আঘাত পেয়েছে। ওর মতো আমার সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে, আমাকে আঘাত করা হয়েছে। আবেগ মন্থন করে তোলপাড় উঠেছিল যা আমি কখনো দেখাব বলে ভাবিনি; সঙ্গে সঙ্গে যে ভেঙে পড়েছে তাকে আমি সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম, যদিও আমি নিজেই ভেঙে পড়েছিলাম। ওই কঠিন সময়ে আমি আমার অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও আমার কথা ও কাজ প্রত্যয়ের সঙ্গেই করেছি, কী করে করেছি জানি না, আমি সাধারণত ঠিক অতটা শক্ত নই। আমি আসলে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আমি সচেতনভাবেই একটা দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েছিলাম — যেন বন্ধুকে ধারাবাহিক দুর্ভোগের হাত থেকে বাঁচাতে না পারার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা। গোটা ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যেতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তার মধ্যে দিয়েই নিজের ও অন্য সবার মধ্যে সাহস সঞ্চার করতে চাইছিলাম। কিন্তু সে সবই অবোধের মতো।

দ্রুত আশা হারিয়ে গেল, প্রতিবাদকে বলা হল হঠকারিতা। সংবেদনশীলতাকে ব্যঙ্গ করা হল, প্রশ্নকে বিদ্রূপ। আমি যে ধাক্কা খেয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জগতে ঢুকে পড়লাম তা ওই কঠিন সময়ে নয়, তা হল আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সময়ে, যখন ভয় আর আত্মসমপর্ণ ছাড়া আর কিছুই রইল না। ভয় আর আত্মসমর্পণের সঙ্গে রইল নীরবতা। আমার মনে হয় আমিও আত্মসমর্পণ করেছি, যখন সরল আবেগের জায়গায় এসে বসল নিরাপত্তাহীনতা আর আত্মশক্তিকে দমিত রাখার বোধ। নিজের প্রতি অসন্তোষ অন্য যে কোনো হতাশার চেয়ে বড়ো এবং তা দেখা দেয় যখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না, যখন আবেগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে অন্য সবকিছুকে বারবার সবার সামনে হাজির করা হচ্ছে। কিন্তু আবেগ এবং আবেগই কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয় — প্রতি মুহূর্তে এই প্রশ্নে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিবেক। ‘আমি প্রস্তুত নই’ এরকম একটা অস্ফুট চিৎকার প্রায়ই আমার ভিতর থেকে উঠে এসে আমার অন্তরের বিচারক আমিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এক বিশাল শূন্যতা আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে সমাজের পঙ্কিল চেহারা আর অন্যায্যতাকে, যা আমি নিঃশব্দে প্রত্যক্ষ করেছি।

মেয়েটা চুপ করে চলে গেছে। তার চলে যাওয়া ঠিক হয়নি, যেমন আমাদের ঠিক হয়নি তাকে চলে যেতে দেওয়া। কিন্তু তাকে চলে যেতে দেওয়া হল। আপাতভাবে এই ‘চলে যেতে দেওয়া’ কী লজ্জার — আমার সচেতনতাকে ‘অনুশোচনা’র হাজারো ব্যাখ্যা কুরে কুরে খাচ্ছে। অনুশোচনা আর প্রতিশ্রুতি, অর্থহীন সব পদক্ষেপ, প্রশ্নগুলোকে গলা টিপে মারা, উদ্দেশ্যহীন মিছিল, গতানুগতিকতা, সংবেদনহীনতা আর ক্লান্তি সব ধুলোর মতো ঝরে পড়ল আর সবকিছু ঠিক হয়ে গেল ধরাধামে। জোর করে সবকিছুকে ফিরিয়ে দেওয়া হল আগের জায়গায়। নিষ্ক্রিয় ও আহত, ক্ষতমুখগুলো খোলা রইল। তার কোনো শুশ্রূষা হল না — এছাড়া এই অবস্থার আর কী বর্ণনা হয়! শহরে ঠিক এরকমই এই সমান্তরাল ঘটনার উত্থান হল, এরকমটা শান্তিনিকেতনেও হওয়া দরকার ছিল, যদিও তা সব ধুলো ওড়াতে পারল না, কিন্তু আমার ওপরে জমে যাওয়া ধুলো উড়ে গেল। একটা উচ্ছ্বাস, আমি জানি না ঠিক কী, আমার বিচ্ছিন্নতা আমার একাকীত্বকে উড়িয়ে দিল, আমি আর একা থাকতে পারলাম না। যা আমি অবহেলায় অনেকদিন ধরে ফেলে রেখেছি, তা আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। আমি একটা পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। হঠাৎ করে তা মনে পড়ে গেল। কে যেন আমাকে মনে করিয়ে দিল আমার এক এবং একমাত্র সামর্থ্যর কথা, লেখার সামর্থ্য আর লেখার মধ্যে দিয়েই বোঝা। আমি তাই লিখলাম, লেখার মধ্যে দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম।

নিজের দুর্বলতা স্বীকার করার একটা সীমা আছে, হয়তো আমি তা পেরিয়ে গেলাম। হয়তো আমি এখন প্রাপ্তবয়স্ক অথবা নই, অন্তত পুরোটা নই। কিন্তু আমার যদি পছন্দ করার ক্ষমতা থাকত আমি অংশত শিশু থাকতে চাইতাম। চাইতাম শিশুর মতো আশা ভরসা নিয়ে, সমাজের নোংরা জিনিসগুলো সম্বন্ধে অজ্ঞ থেকে শিশুর মতো বাঁচতে। কিন্তু আমার পছন্দ করার উপায় নেই, এক গোলকধাঁধার মধ্যে দিয়ে আমি ছুটে এসেছি, আর এখন অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছি। আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি আর শিশুসুলভ সেই জিনিসগুলোকে যার ওপর আমি নির্ভর করতে পারতাম তা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু নতুন সঙ্গীরাও দূরে নেই, অন্যসবের পাশাপাশি হতে পারে তা অভিজ্ঞতা, বোঝাপড়া বা বিশেষ পছন্দ যা সামনের দিকে এগিয়ে দেবে। ওরা ধীরে আসবে, কিন্তু পুরোনোরা দ্রুত ঝরে যাবে অন্যদের অনুভূতিতে শূন্যতার সৃষ্টি করে। আমার একটা অভিজ্ঞতা হল। আমি সেই অভিজ্ঞতার সারসংকলন করতে চাই, আমি, অন্যদের সঙ্গে অভিজ্ঞতাটা ভাগ করে নিতে চাই। আমি ঠিক নিশ্চিত নই, তবু মনের কোণে আমার একটু আশা আছে। আমি নিরাশ হতে চাই না, চাই আশা রাখতে, আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, আমি হাল ছেড়ে দিতে চাই না, আমি ভালো কিছুর প্রত্যাশা করি। বিভিন্ন পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতাকে আমি সমালোচনার আলোয় দেখতে চাই, কিন্তু তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটুকুও রাখতে চাই। বয়ঃপ্রাপ্তি সকলের হিসেবের খাতাতেই শুধু হতাশা ঢেলে দেয় না — আমি এইটুকু নিশ্চয়তা চাই। এই নিশ্চয়তা আমি পেতে পারি বা নাও পেতে পারি, কিন্তু এর খোঁজে পা বাড়ানোর জন্য একজনকে যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করতে হয়। আমি অন্ধ অভিযানে পা বাড়াব না, বরং যে পথে হাঁটব তার চারিদিকে তাকিয়ে দেখব। অভিযাত্রী হওয়ার সাহস আমার আছে, সাহস আছে পরাজয়ের মুখোমুখি দাঁড়াবার। হয়তো আমি বড়োই হয়ে গেলাম — যাকে বলে প্রাপ্তবয়স্ক।

ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ : তমাল ভৌমিক

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in