• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

বিশাখা গাইডলাইন

কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা নিবারণ, নিষিদ্ধকরণ এবং প্রতিবিধানমুলক আইন (২০১৩) : সারমর্ম ও শুরুর কথা

সোহিনী রায়

আজ থেকে উনত্রিশ বছর আগে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে ৫৫ কিমি দূরে অবস্থিত ‘ভাটেরী’ নামের একটি গ্রামের তৃণমূল স্তরের এক সরকারি কর্মী ছিলেন ভাঁওড়ী দেবী। ‘ভাটেরী’ গ্রামে উঁচু জাত গুর্জর-ব্রাহ্মণদের দাপট ছিল। ছিল তীব্র জাত-পাত প্রথা। শিশু-বিয়ের চল ছিল প্রবল। নীচু-জাত ‘কুমার’ (কুমোর)-এর মহিলা ভাঁওড়ী দেবী ছিলেন রাজস্থান সরকারের নারী উন্নয়ন কর্মসূচির একজন ‘সাথীন’, যাঁর মূল কাজ ছিল গ্রামে শিশুবিবাহ ও একাধিক বিয়ে আটকানো। রাজস্থানের ঐতিহ্য মেনে প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন হাজার হাজার শিশুর বিয়ে দেওয়া হত। ১৯৯২ সালে রাজস্থান সরকারের পক্ষ থেকে এই শিশু-গণ-বিয়ে বন্ধ করার জন্য জনগণের কাছে বিশেষ আবেদন জানানো হয়। আঞ্চলিক প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে রাজস্থান সরকারের কর্মী ‘সাথীন’ ভাঁওড়ী দেবী, রামকরণ গুজ্জরের এক বছরের থেকেও ছোটো মেয়ের বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন। সেই বিয়ে হয়। কিন্তু ভাঁওড়ী, রামকরণ গুজ্জরের পরিবারের কুনজরে পড়ে যান। চলতে থাকে অনবরত যৌন হেনস্থা। সামাজিক ভাবে একঘরে করে দেওয়া হয় তাঁকে। ভাঁওড়ীর বানানো মাটির বাসনপত্র কেনা বন্ধ হয়। ভাঁওড়ীদের পরিবারকে অন্যান্যরা দুধ বেচা বন্ধ করে দেয়।

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অত্যাচার তুঙ্গে ওঠে। একদিন ভাঁওড়ী ও তাঁর স্বামী যখন খেতে কাজ করছিলেন, তখন রামকরণ গুজ্জর সহ আরও পাঁচজন, ভাঁওড়ীকে তাঁর স্বামীর সামনে গণ ধর্ষণ করে । ধর্ষণের পর ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে গেলে গ্রামের প্রাইমারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একমাত্র ডাক্তার, যিনি পুরুষ, ডাক্তারি পরীক্ষা করতে অস্বীকার করেন। ভাঁওড়ী ও তাঁর স্বামী তখন যান জয়পুর। সেখানকার ডাক্তার শুধুমাত্র ভাঁওড়ীর বয়স বলেই দায়িত্ব সাঙ্গ করেন। আশ্চর্যজনক ভাবে ধর্ষণ সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা কোনো উল্লেখ সেই রিপোর্টে ছিল না। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে সারা রাত ধরে সেখানকার মহিলা কনস্টেবলরা ভাঁওড়ী দেবীকে হেনস্থা করে। মাঝরাতে একজন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার ভাঁওড়ীকে তাঁর পরনের ঘাঘরাটি খুলে দিতে বলেন — ধর্ষণের সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে। ভাঁওড়ী তাঁর সেই ঘাঘরা খুলে রেখে স্বামীর পাগড়ি পরে বাড়ি ফেরেন। সেই রাতটা থানায় থেকে যাওয়ার জন্য বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও প্রত্যাখ্যাত হন ভাঁওড়ী ও তাঁর স্বামী। নিম্ন আদালত অভিযুক্ত পাঁচজনকে নির্দোষ হিসেবে ছেড়ে দেয় এবং যে রায় দেয় তার সারমর্ম হল যে, ভারতীয় সংস্কৃতি এতখানি নিচে নেমে যায়নি যেখানে বয়স ও জাতের পার্থক্য অতিক্রম করে গ্রামের মানুষ পাশবিক ব্যবহার করবে। কোর্ট রায় দেয় যে একজন উঁচু জাতের পুরুষ কখনোই একজন নিচু জাতের মহিলার গায়ে হাত দেবে না, তাও অন্য পুরুষের সামনে (ভাঁওড়ীর স্বামী)। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ভাঁওড়ীকে যারা ধর্ষণ করে তারা ভাঁওড়ীর চেয়ে উচ্চ বর্ণের ও বয়সেও অনেক বড়ো, এমনকী একজনের বয়স ছিল সত্তর বছর। ভাঁওড়ী হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেই মামলা এখনও চলছে। ধর্ষণের কলঙ্ক যাতে গায়ে না লাগে তাই আইনানুসারে ধর্ষিতার নাম প্রকাশ্যে আনা হয় না। ভাঁওড়ী দেবী রিপোর্টারদের বলেছিলেন যে, ধর্ষিতা হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করতে তাঁর কোনো লজ্জা নেই, কারণ তিনি মনে করেন যে লজ্জা তাদের যারা তাঁকে ধর্ষণ করেছে।

ভাঁওড়ীর সুবিচারের দাবিতে এর পর বিভিন্ন নারী-অধিকার সংগঠন দেশব্যাপী প্রচার আন্দোলন শুরু করে। সেই প্রচারের অংশ হিসেবে, বেশ কিছু নারী-অধিকার সংগঠন একসাথে ‘বিশাখা’ নামের আওতায়, কর্মক্ষেত্রে নারীর ওপর যৌন হেনস্থা প্রসঙ্গে কিছু নির্দেশিকার আবেদন করে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করে। ১৯৯৭ সালের ১৩ আগস্ট সেই জনস্বার্থ মামলার উত্তরে হাইকোর্ট যে রায় দেয় সেটাই হল বিখ্যাত ‘বিশাখা নির্দেশিকা’। এরপর এই বিশাখা নির্দেশিকার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা নিবারণ, নিষিদ্ধকরণ এবং প্রতিবিধানমুলক আইন (২০১৩)’। আইনটিতে কাজের জায়গায় মহিলা-কর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্ত্ব দেওয়া হয় নিয়োগকারী সংস্থার ওপর। নিয়োগকারী সংস্থাকে অনেক ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যেমন, আইনটিকে সামনে রেখে নিয়মিত ভিত্তিতে কর্মশালা করা, সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া ইত্যাদি। মহিলা-কর্মীরা যাতে যৌন হেনস্থামুক্ত, স্বস্তিদায়ক পরিবেশে কাজ করতে পারে তা দেখা ও রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় নিয়োগকারী সংস্থার ওপর। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক এই আইনের মূল বৈশিষ্টগুলো :

কোন মহিলারা অভিযোগ জানাতে পারেন

সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী, গবেষক, গার্হস্থ্য শ্রমিক সবাই।

কর্মক্ষেত্র কাকে বলে?

কেন্দ্র, রাজ্য, বেসরকারি, অসংগঠিত যাবতীয় ক্ষেত্র, সমাজসেবামূলক সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যাবতীয় জায়গা। কর্মসুত্রে কেউ অন্য জায়গায় গেলেও সেটা কর্মক্ষেত্র, এমনকী কর্মক্ষেত্রের পরিবহণও কর্মক্ষেত্র।

যৌন হেনস্থা কাকে বলে?

দৈহিক স্পর্শ এবং যৌন ইঙ্গিত। যৌন সাহচর্যের দাবি অথবা অনুরোধ, যৌন উস্কানিমূলক মন্তব্য, অশ্লীল বই, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেখানো, অবাঞ্ছিত দৈহিক, মৌখিক, নিঃশব্দ যৌন ইশারা অথবা ব্যবহার। এছাড়াও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কোনো সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, কর্মস্থলে ক্ষতি করা ও চাকরি থেকে বিতাড়নের হুমকি, কাজে বাধাদান, মহিলার জন্য কোনোরকম আতঙ্ক অথবা অসম্মানের পরিস্থিতি তৈরি করা, অপমানজনক ব্যবহার যা মহিলার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার পক্ষে হানিকর।

যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ

১। কর্মক্ষেত্রে একটি আভ্যন্তরীণ যৌন হেনস্থার অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে (যেমন গার্হস্থ্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে) আভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন সম্ভব নয়, সেসব ক্ষেত্রে জেলা আধিকারিক আঞ্চলিক কমিটি গঠন করবেন। নিয়োগকারী সংস্থা কমিটি গঠন না করতে পারলে বা কমিটির নির্দেশানুসারে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে সংস্থাকে ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।

২। অত্যাচারিত মহিলা ঘটনা ঘটার তিনমাসের মধ্যে অভিযোগ কমিটির কাছে লিখিত জমা দেবেন। যে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ঘটনা ঘটেছে সেক্ষেত্রে শেষ ঘটনার তিন মাসের মধ্যে অভিযোগ জানাবেন।

৩। অভিযোগকারিণী (complainant) যদি লিখতে না পারেন তাহলে কমিটির কোনো সদস্য তার অভিযোগ লিখে নেবেন।

৪। যদি যৌন হেনস্থার কারণে মহিলার মৃত্যু হয়, কোনো শারীরিক অথবা মানসিক প্রতিবন্ধকতা হয়, তাহলে তার আইনত উত্তরাধিকারী অভিযোগ জানাতে পারবেন।

৫। তদন্ত চলাকালীন অভিযোগকারিণীর আবেদনের ভিত্তিতে কমিটি সেই মহিলাকে অথবা অভিযুক্তকে বদলি করা, অভিযোগকারিণীকে তিন মাসের ছুটি মঞ্জুর করা অথবা অন্য কোনো সাহায্যর জন্য নিয়োগকর্তাকে সুপারিশ করতে পারে।

৬। কমিটি তদন্ত শেষের দশ দিনের মধ্যে নিয়োগকারী সংস্থাকে রিপোর্ট জমা দেবে আর সেই রিপোর্টের কপি সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষকে দিতে হবে। কমিটি যাতে সময় মতো রিপোর্ট জমা দেয় তা দেখার ভার দেওয়া হয় নিয়োগকারী সংস্থার ওপর।

৭। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার ষাট দিনের মধ্যে নিয়োগকারী সংস্থা উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকবে।

৮। অভিযোগ প্রমাণ করা না গেলে তদন্ত কমিটি নিয়োগকারী সংস্থাকে অভিযোগের সাপেক্ষে কোনো পদক্ষেপ নিতে বারণ করবে।

৯। তদন্ত চলাকালীন নির্যাতিতার অথবা অন্য কোনো কর্মীর অভিযোগ, তথ্য মিথ্যা অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল প্রমাণিত হলে সংস্থার সার্ভিস রুল অনুযায়ী অভিযোগকারিণী বা যে ভুল তথ্য দিয়েছে তার শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

১০। তদন্তে অভিযুক্ত (respondent) দোষী সাব্যস্ত হলে সার্ভিস রুল অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, যেখানে সার্ভিস রুল নেই সেখানে অবস্থা অনুযায়ী শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

১১। অভিযুক্ত দোষী প্রমাণিত হলে নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। যৌন হেনস্থার কারণে মহিলার মানসিক যন্ত্রণা, পেশাগত ক্ষতি, চিকিসার খরচ, অভিযুক্তের আর্থিক অবস্থা ইত্যাদির ভিত্তিতে কমিটি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ধার্য করবে।

১২। তদন্ত তিন মাস সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।

এই আইনে একটি সংস্থার সমস্যা সংস্থার আভ্যন্তরীণ কমিটিকে মিটিয়ে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই সেই সংস্থার স্বাধিকারও রক্ষিত।

ভাঁওড়ী দেবীর গণ ধর্ষণের যে মামলাটি রাজস্থান হাইকোর্টে চলছে, ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাত্র একটি শুনানির দিন পড়েছে। ইতিমধ্যেই দুজন অভিযুক্ত মারা গিয়েছেন। এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ‘দোষী সাব্যস্ত হওয়া না-হওয়া’-র দ্বন্দ্বকে ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর লড়াই। সেই সময়ে সারা ভারতব্যাপী যে নারী আন্দোলন তৈরি হয়েছিল তার অভিঘাতেই এসেছে এই যৌন হেনস্থা বিরোধী আইন, প্রস্তুত হয়েছে পরবর্তীকালে আরও অনেক ভাঁওড়ীর সুস্থভাবে জীবিকা অর্জনের সম্ভাব্য ক্ষেত্র।

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in