তমাল ভৌমিক
১৯৭৪ সালে যখন যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হলাম, তখন খুব কম মেয়েই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসত। আমাদের ফার্স্ট ইয়ারে ইলেকট্রিকালে ৪ জন, কেমিকালে ৩ জন, ইলেকট্রনিক্সে ১ জনের কথা মনে আছে। সব মিলে জনা দশেকের বেশি নয়। অবশ্য আর্কিটেকচার বাদে। আর্কিটেকচারে বেশিরভাগই মেয়ে। এমনই বেশি যে ইন্টার ডিপার্টমেন্টাল ফুটবল টুর্নামেন্টে আর্কিটেকচারের আলাদা টিম বানানো যেত না বলে ইলেকট্রনিক্স আর আর্কিটেকচার মিলিয়ে ১১ জনের একটা ফুটবল টিম বানাতে হত। আমরা অবশ্য আর্কিটেকচারের ছেলেদের ঈর্ষা করতাম। ওদের সম্পর্কে নানারকম গালগপ্পো বানানো হত। সেই সময় ‘নাইনটিন ইয়ং গার্লস অ্যান্ড এ সেলর’ নামে একটা সিনেমা এসেছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছেলেরা বলল ওই সিনেমাটা নাকি যাদবপুরের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টকে নিয়ে বানানো। সিনিয়ররদের কেউ কেউ বলত, পাঁচ বছর অতগুলো মেয়ের সঙ্গে পড়ার জন্য আর্কিটেকচারের ছেলেগুলো নাকি শেষ পর্যন্ত মেয়েদের মতো হয়ে যেত। অথচ আর্কিটেকচারেরই একটা ছেলে এত ভালো বাস্কেটবল খেলত যে ও একাই ইউনিভার্সিটির ছেলেদের টিমকে জিতিয়ে দিত — এ আমরা স্বচক্ষে দেখেছি এবং ছেলেটি জাতীয় দলেও খেলার চান্স পেয়েছিল।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল সিভিল আর মেকানিকালে। তখন ওই দুটো ডিপার্টমেন্টে মেয়েদের পড়ার সুযোগ ছিল না — যুক্তি ছিল, ওগুলোর শারীরিক খাটনি বেশি এবং মেয়েরা তা পারবে না। কিন্তু ‘ফাউন্ড্রি’ বা ‘কার্পেন্ট্রি’ শপ নামক যেসব ওয়ার্কশপে দৈহিক শক্তি একটু বেশি লাগে সেখানে আমি দেখেছি, আমার মতো রোগা দুবলা ছেলের চেয়ে ইলেকট্রিকালের জাঁদরেল চেহারার পিসির (এই মেয়েটা সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকত এবং ছেলেদের একদম পাত্তা দিত না বলে এর নাম হয়ে গিয়েছিল পিসি, এখন ওর আসল নামটাও ভুলে গেছি) মোটেই অসুবিধা হত না। ও দিব্যি শাড়ির আঁচল কোমরে জড়িয়ে (ওই সময় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসা মেয়েরাও সবাই শাড়ি পড়ত। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল সালোয়ার কামিজ পরা একটি গুজরাতের মেয়ে) হাতুড়ি ছেনি হাতে নিয়ে কাজ নামিয়ে দিত — ওয়ার্কশপের অ্যাসিটেন্ট কর্মীরা সাহায্য করতে চাইলেও নিত না। এখন অবশ্য ও নিয়মটা উঠে গেছে — মেয়েরা এখন সিভিল বা মেকানিকাল বিভাগেও ভর্তি হতে পারে। তখন জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তারি পড়তে গেলেও বি-ফার্ম পড়তে মেয়েরা সাধারণত আসত না। বি-ফার্মে মেয়েরা প্রায় না থাকায় একবার একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ওদের বিভাগের নাটক নামানোর জন্য স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় করতে আমাদের এক বান্ধবীকে সায়েন্স ফ্যাকাল্টি থেকে ডেকে নিয়ে যেতে হয়েছিল। তখন পাঁচ বছরের কোর্স। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সব বিভাগেরই ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস হত ইনটিগ্রেটেড বিল্ডিংয়ে। পড়ার বিষয়গুলোও সব এক ছিল। আমরা সিভিল মেকানিকালের ছেলেরা ক্লাসের ফাঁকে ব্লু আর্থ ওয়ার্কশপের পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে অন্য বিভাগের বন্ধুদের কাছে দুঃখ করতাম, ‘আমাদের সব ঘাস রে ঘাস। তোদের তো তাও দু চারটে ফুল আছে।’ বন্ধুরা কেউ কেউ দুঃখ বুঝত বলে একবার ইংরাজি ক্লাসে (তখন একবছর ইংরাজি বাংলা পড়তে হত) ইলেকট্রিকালের ছাত্রদের সঙ্গে সিভিলের ছাত্ররাও ভিড়ে গেছিল। সে তো প্রায় ফেটে পড়ার অবস্থা! বেঞ্চে তো ছেলে ধরছেই না, ঘরের মেঝেতে, জানলায় অত ছেলে দেখে ইংরাজির ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকে খুব ঘাবড়ে গেছেন। তাঁকে সমস্বরে বোঝানো হল যে, ‘উনি খুব ভালো পড়ান শুনে আজ সিভিলের বন্ধুরা ইলেকট্রিকালের ক্লাসে এসেছে শুনতে।’ ম্যাডাম সামান্য আপত্তি করেও শেষে অবশ্য সেদিনের আব্দার মেনে নিয়েছিলেন, তবে ছেলেদের বলেছিলেন পরে কোনোদিন অমন না করতে।
যাই হোক, ওতে কি সমস্যা মেটে? সমস্যা যে সবারই, তা অবশ্য নয়। যাদের সমস্যা বেশি তাদের সমাধান হিসেবে দেখানো হল ‘ঝিলকে উসপার’। ‘ঝিলকে উসপার’ তৎকালীন একটা হিন্দি সিনেমা — এই সিনেমার নামেই আমরা তখন সায়েন্স ও আর্টস ফ্যাকাল্টিকে চিহ্নিত করতাম — কারণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি থেকে আর্টস ও সায়েন্স ফ্যাকাল্টি যেতে হলে একটা বড়ো ঝিল পেরিয়ে যেতে হত। ঝিলের ওপর ব্রিজ ও মাঝে একটা পায়ে চলা রাস্তাও ছিল। এই ঝিলটাই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের (ফার্মেসি সহ) মধ্যে সীমানা। সীমানার ওপাশের চেহারা আলাদা। আর্টস ফ্যাকাল্টিতে প্রতিটা বিভাগেই মেয়েদের সংখ্যা বেশি। সায়েন্সে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা তুলনায় কম। ওপারের মেয়েদের সঙ্গে এপারের ছেলেদের বন্ধুত্ব-প্রেম এসব গড়ে ওঠার জন্য মেলামেশার জায়গা ছিল মূলত ড্রামা ক্লাব, মিউজিক ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব ইত্যাদি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্লাব ও ক্যান্টিন। যদিও এপারের ক্যান্টিনে (সত্যেনদা বা সিইটি নামক) অত্যন্ত স্মার্ট কয়েকজন ওপারের মেয়েকেই আসতে দেখেছি, যারা আবার এপারেরই কোনো ছেলের পূর্বপরিচিত। একইভাবে এপারের যেসব ছেলেরা একটু বেশি স্মার্ট ছিল, তারাই সাহস রাখত ঝিলের ওপারে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করার। আমাদের যারা একটু মুখচোরা গোছের, মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করতে অতটা উৎসাহী নয়, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই দেখেছিলাম বিভিন্ন জেলা থেকে পড়তে আসা ছেলে। এদের মধ্যে বড়ো একট অংশ হস্টেলের। তবে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকেও বহু ছেলে রোজ ট্রেনে যাতায়াত করে পড়ত। এবং এইসব ছেলেদের বেশিরভাগই ছিল বেশ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। এদের মধ্যে কেউ কেউ টিউশনি করে পড়া চালাত। এমন দু-একজন ছিল যাদের টিউশনির টাকা বাড়িতেও পাঠাতে হয়েছে বলে আমরা চাঁদা তুলে তাদের পড়ার খরচ জুগিয়েছি। পরে নব্বইয়ের দশকে গিয়ে যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যে চেহারা আমি দেখেছি তাতে আগের থেকে স্বচ্ছল ছাত্রের সংখ্যা অনেক বেশি বলেই আমার মনে হয়েছে।
ছেলেমেয়েদের মেলামেশার মধ্যে তাদের আর্থিক অবস্থার কথা এসে পড়ার পেছনে একটা গল্প আছে। আমাদের সিভিলের এক বন্ধু আর্টস ফ্যাকাল্টির একটি মেয়ের প্রেমে পড়ার এক বছর পরে তৎকালীন ভাষায় মেয়েটির কাছে ল্যাঙ খায়। তারপর সে ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে হস্টেলে বসে থাকায় সিনিয়র দু-একজন দাদা তার দায়িত্ব নেয়। তারা ওই ল্যাঙ খাওয়া বন্ধুটিকে শুশ্রূষা করে দাঁড় করানোর জন্য যা বলেছিল, তা এরকম, ‘তুই এসেছিস কোথা থেকে? না, পুরুলিয়া। তোর প্রেমিকা কোথায় থাকে? বালিগঞ্জ প্লেস। বড়োলোকের ফরসা মেয়ের পোঁদে পোঁদে ঘুরছিস তুই, আর তোর বাবা ওদিকে গরুর পোঁদে লাঙল ঠেলতে গিয়ে হাঁফাচ্ছে। পাশ করে শালা চাকরি পাবি কি না ঠিক নেই, পেলেও ওই মেয়ের নেলপালিশ-লিপস্টিকের খরচ দিতেই … ফেটে যাবে।’ — এই পর্যন্ত ছিল ঝাঁঝালো, তারপর একটু নরম, ‘আর তুই তো জয়েন্ট দিয়ে চান্স পেয়েছিস, ভালো ছেলে, বাবা কষ্ট করে পড়াচ্ছে। আর ওই মেয়েটা বড়ো লোকের লালু মেয়ে, মাথায় গোবর, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায়নি, তাই যাদবপুরে এসে নাম লিখিয়েছে। ছাড় তো, যত ফালতু ক্যাচাল।’
এই কথাগুলো বললাম, একটা বড়ো অংশের মধ্যে জয়েন্টে চান্স পাওয়া, আর্টস ফ্যাকাল্টির মেয়ে ইত্যাদি সম্পর্কে যা ধারণা ছিল, তা বোঝার জন্য। এর মধ্যে একটা বড়ো পরিবর্তন হয়ে গেছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও অভাবের (যেমন ঠিক সময় পরীক্ষা না হওয়া এবং বিএ পাশ করে এমএ তে চান্স না পাওয়া ইত্যাদি) জন্য গত তিন দশক ধরে যেসব ছেলেমেয়েরা উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করে, তাদের বেশিরভাগই যাদবপুরের আর্টস ও সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হয়। আর জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রতিযোগিতা দিন দিন যত তীব্র হয়েছে, যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভর্তি হওয়ার খ্যাপামিও তত বেড়েছে, ফলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছাত্রদের নাক উঁচু ভাব বেড়েছে বই কমেনি বলেই অনুমান।
কয়েকটা ছবি পাল্টায়নি বলে মনে হয়। যেমন আমাদের সময়ে সবচেয়ে স্মার্ট ও আধুনিকা ছিল ইংরাজি ও কম্পারেটিভ লিটারেচর বিভাগের মেয়েরা। তারাই একটু খোলামেলা পোশাক পরা ও প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়ায় সাবলীল ছিল। এখনও শুনেছি ফিল্ম স্টাডিজ সহ ওই দুই ডিপার্টমেন্টের ছেলেমেয়েরাই সাধারণত বেশি মড। তারপর, নেশাভাঙ করার জন্য ছেলে ও মেয়েদের হস্টেলে চিরকাল দু-চারটে ঘর আলাদা করে বিখ্যাত হয়ে থাকে। বিশেষত মদ ও গাঁজা (সিগারেটকে দোষযোগ্য নেশার মধ্যে ধরা হয় না) আগেও খাওয়া হত। তবে এখনকার তুলনায় অবশ্যই কম। আমরা যারা বাড়ি থেকে যাতায়াত করে পড়তাম, তাদের মধ্যে আমার মতো কিছু ফাঁকিবাজ ছাত্র পরীক্ষার আগে মাসখানেক হস্টেলে গিয়ে বডি ফেলে দিতাম। আমাদের চমৎকার কিছু বন্ধু ছিল — তাদের গেস্ট হয়ে থেকে গেলে তারাই আমাদের পড়িয়ে পাশ করিয়ে দিত। যাদবপুরে এটা সত্যি এত ব্যাপক পরিমাণে ছিল যে তা নিয়ে আশ্চর্য সব বন্ধুত্বের গল্প লিখে শেষ করা যাবে না। যাই হোক, প্রতি সেমেস্টারের আগে ছাড়াও ল্যাব রিপোর্ট লেখা ইত্যাদি পড়াশুনোর নানা কারণে আমি প্রায়ই হস্টেলে থাকতাম এবং সেখানে থেকে জেনেছি — কোন ঘরে গেলেই গাঁজা খাওয়া যাবে বা ছাদে কারা বিয়ারের আসর বসায় ইত্যাদি।
এবারে একটা জরুরি প্রসঙ্গে বলা দরকার যা না বললে তখনকার অবস্থাটা ঠিক বোঝা যাবে না। সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ছাত্র আন্দোলনের পরিবেশ। আমরা যে সময়ে যাদবপুরের ছাত্র হিসেবে ঢুকি, সে সময়টাকে বামপন্থীরা ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ ও ‘শ্বেত সন্ত্রাস’-এর পরিবেশ বলে থাকে। তখন কংগ্রেসের ছাত্র ইউনিয়ন ছিল বলে শুনেছি, কিন্তু তাদের কোনো কার্যক্রম তেমন দেখিনি। তবে ১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থা ঘোষিত হওয়ার পরে একবার ৪৫নং বাসে টিকিট কাটা নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে ছাত্রের বচসা ও মারামারি ছাত্র বিক্ষোভের চেহারা নেয়। তখন ৪৫নং রুটের বাস জোর করে ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে কিছু বাস ভাঙচুর করার এবং ৮বি-র সামনে রাস্তা অবরোধ করে বাস মালিককে ডাকিয়ে ক্ষমা চাওয়ানোর সময়ে ইউনিয়নের দু-একজন ছাত্রনেতাকে চাক্ষুষ করি। পরে জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার সময় যখন বামপন্থী ছাত্ররা ‘প্রস্তুতি কমিটি’ গঠন করে তখন ওই কংগ্রেসি ছাত্র নেতারা মার খেয়ে পালিয়েছে। তারপর যে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল গোটা সমাজ জুড়ে, তারই ধাক্কায় যাদবপুরের র্যাডিকাল ছাত্রদের সংগঠন ডিএসএফ গড়ে ওঠে এবং বামফ্রন্টের ওই উত্থানের সময়েও তাদের প্রভাবিত ছাত্রসংগঠন এসএফআই-এর থেকে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলে যা এতাবৎকাল টিঁকে আছে এবং দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদেরকে র্যাডিকাল রাজনীতিতে প্রভাবিত করেছে।
প্রভাবটা প্রথমদিকে এতই প্রবল ছিল যে আমাদের মধ্যেকার বড়ো একটা অংশের ছাত্র র্যাডিকাল বামপন্থীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীতে যুক্ত হয়ে ছাত্রজীবনের পরেও দীর্ঘদিন সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিয়ে গেছে। এই যে প্রবল প্রভাবের কথা বললাম, তা অবশ্যই তখনকার পরিবেশকে অংশত পাল্টেছিল। যেমন আমরাই দল বেঁধে নেশাভাঙ করার (বিশেষত হস্টেলে) ও র্যাগিংয়ের বিরোধিতায় নেমেছিলাম এবং তা খানিকটা কমেওছিল। ছেলেমেয়েদের মেলামেশার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক আন্দোলন একটা অন্যমাত্রা যোগ করেছিল, যাকে পরিভাষায় কমরেডশিপ বলে। তার মধ্যে দিয়ে ছেলেদের সাথে মেয়েদের বন্ধুত্বের অন্য একটা মাত্রা তৈরি হয়েছিল যার মধ্যে গণতন্ত্র ও সাম্যর একটা সম্পর্ক জায়গা পেয়েছিল। যদিও ওই সম্পর্ক প্রকাশের প্রধান জায়গা ছিল বিশেষ কোনো সংগঠনের কর্মসূচিগুলোর মধ্যে, তবু এর প্রভাব জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও পড়েছিল।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আমি প্রথম ঝিলের ওপারের সঙ্গে এপারের সীমানা ঘুচে যেতে দেখেছি। সব ফ্যাকাল্টির মেয়েদের সঙ্গেই ছেলেদের সহজ বন্ধুত্বও ওই সময়ে গড়ে উঠেছিল রাজনৈতিক সংগঠন করার সূত্রে। আমাদের সময়ে ছেলেরা কি খারাপ ব্যবহার করেছি মেয়েদের সঙ্গে? পুরুষতন্ত্র কি ধুয়ে মুছে গিয়েছিল আন্দোলনের জোয়ারে? তা নয়। তবে অবশ্যই অবাধে মেয়েদের লাঞ্ছনা আজকে যতটা বেশি হচ্ছে তার থেকে অনেক কম ছিল তখন। তার একটা কারণ যেমন আন্দোলনের পরিবেশ, অন্য একটা কারণ হতে পারে এই যে আমাদের সঙ্গে মেয়েদের তেমন কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না তখন। বরং মেয়েদের একটু আগলে চলার মধ্যে হয়তো কোনো সামন্ততান্ত্রিক ‘শিভালরি’ ছিল ছেলেদের মধ্যে। কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের বন্ধুত্ব কোনো বৈষয়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দূষিত হয়নি চল্লিশ বছর আগের কলেজ জীবনে।
Leave a Reply