মণিদীপা সিংহ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। একদম শুরু থেকেই হোক কলরব আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনলেন চূর্ণী ভৌমিক।
চূর্ণী : এই গোটা ব্যাপারটার আগে, সম্ভবত বেশ কয়েকমাস আগে তোমার ওই একটা গোলমাল হয়েছিল না? তুমি ছিলে, চান্দ্রেয়ীদি ছিল, দেবীদি ছিল সঙ্গে, সেই ঘটনাটা ঠিক কী হয়েছিল আমাকে একটু বলতে পার?
মণিদীপা : সেটা আগের বছর যখন আমরা রাত্রিবেলা আর কি এই দশটা নাগাদ একটা সিনেমার রিভিউ নিয়ে — সেটা বোধহয় ‘শব্দ’ ছিল বা অন্য কিছু একটা ছিল, আমি এখন মনে করতে পারছি না ঠিক কোন সিনেমাটা। সেটার একটা রিভিউ চান্দ্রেয়ীর করার কথা ছিল, কিন্তু চান্দ্রেয়ী যেতে না পারায় দেবীকে পাঠানো হয়েছিল। তারপর রাত দশটা নাগাদ আমরা ওখানটাতে (মিলনদার ক্যান্টিনের উল্টোদিকে ওয়ার্ল্ড ভিউ-এর সামনে) দেখা করি, আমি আর চান্দ্রেয়ী — সিনেমাটা কী সেই সমস্ত নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সেই সময়ে ওখানে উপস্থিত আমাদের বন্ধু সন্তীর্থ নন্দী আমাদের সাথে লেখালেখি করে — ওখানে আরও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তো ওখানটায় যেটা হয়, আমরা তিনজন বেদিতে গিয়ে বসি। আমাদের দেখতে পেয়ে সন্তীর্থও আসে, এসে আমাদের সাথে বসে। তখন এমনি আলোচনা করতে করতে, সিনেমা নিয়ে এমনি আলোচনা করছিলাম — তখন আমরা আড্ডা মারছিলাম যখন স্থিতধী বলে একটি ছেলে — তাকে আমরা শুধু মুখে চিনি আর কি। সেও চলে আসে। স্থিতধী এসে আমাদের সাথে বসে, বসে আমরা সব আড্ডা মারছি। এরকম সময়ে আমরা দেখতে পাই যে পার্কিং লটে কিছু গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আর তারা প্রচণ্ড জোরে মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে গানবাজনা শুনছে আর কি। তা ওরকম সময়ে ৫০-৬০ জন ছেলেদের একটা বিশাল গ্রুপ আসে হস্টেলের ছেলেদের। এসে গাড়িটাকে তাড়া করে, কিন্তু গাড়িটা হুস করে বেড়িয়ে যায়, ৪নং গেট তো খোলা থাকে তখন। ওদেরকে আটকাতে পারে না। এবার গাড়িটা বেড়িয়ে যাওয়ার পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর তারপরই বলা হয় এখানে যারা বহিরাগত আছে বার করো। মানে যারা স্টুডেন্ট নয়।
চূর্ণী : মানে হঠাৎ করে হয় এটা?
মণিদীপা : হঠাৎ করে আমরা দেখতে পাই যে ৫০-৬০টা ছেলে এসে একটা গাড়ির পেছনে দৌড়োচ্ছে। তা আমরা ভেবেছি যে কিছু একটা ঘটনা হয়েছে যে তারা ক্যাম্পাসে মদ খেতে এসেছে বা এরকম কিছু একটা ব্যাপার হবে। ছাত্ররা খেপে গিয়ে তাড়া করেছে। তা আমরা আমাদের মতো কথা বলছি। তো আমাদের সেরকম ভয় নেই এদিকে, এরপর তারা কিছুক্ষণ পর আমাদের কাছে আসে, এসে বলে আই-কার্ড আছে তোমাদের কাছে? আমি বললাম, কিরে আমাদের চিনতে পারছিস না? তাদের মধ্যেই একজন আমাকে চিনতে পেরে বলে ‘না না মণিদীপাদি তোমাকে চিনি, চান্দ্রেয়ীদি কোনো অসুবিধা নেই, তোমরা থাকো’। কিন্তু সোমতীর্থ আর স্থিতধীকে বলে তোমাদের ব্যাগটা চেক করব দয়া করে। তখন সোমতীর্থ বলে, ‘আমার কাছে তো সেরকম কোনো ব্যাগ ট্যাগ নেই, ওরকমভাবে তো কী চেক করবি আর’। তো আমরা বলি সোমতীর্থ আমাদের সাথেই আছে, ওকে ছেড়ে দাও। স্থিতধীকে আমরা যেহেতু মুখ চিনি, আমাদের জিজ্ঞাসা করে, স্থিতধীকে তোমরা চেনো কি না। তো আমি বললাম, ‘হ্যাঁ এমনিতে চিনি, কিন্তু আমরা বন্ধু না, মানে একসাথে বসি না’। তখন ওরা স্থিতধীর ব্যাগ চেক করে এবং ওর ব্যাগ থেকে ৪-৫টা কন্ডোম বেরোয় এবং সেই কন্ডোমের প্যাকেটগুলো দেখার পরে পরেই ছেলেরা ওকে পেটানো শুরু করে ওখানটায়। প্রায় ৫০-৬০টা ছেলে।
চূর্ণী : কন্ডোমের প্যাকেট দেখে?
মণিদীপা : হ্যাঁ, বলে যে ‘অসভ্যতামি করার জায়গা পাস না? ফাঁকা জায়গায় এসে মেয়েদেরকে লাগাবি!’ এসব অদ্ভুত অদ্ভুত বক্তব্য তাদের। এবং সেটা দেখে আমি, চান্দ্রেয়ী, দেবী তিনজনই তাদের বাধা দিই। বলি যে ‘দ্যাখো দাদা ব্যাগে কন্ডোম রাখাটা তো কোনো অপরাধ নয়, সেও ছেলে খারাপ হতে পারে নেশা করতে পারে অনেক কিছু হতে পারে কিন্তু ওর ব্যাগ থেকে তো এমন কিছু বেরোয়নি যে তার জন্যে ওকে মারা যেতে পারে আর কন্ডোম রাখাটা তো কোনো অপরাধ নয়, সেটা তো একটা সুস্থ মানসিকতারই পরিচয় দেয়। ওরা তখন বলে, ‘তোমরা বেশি কথা বোলো না। এইটা নিয়ে আমরা যা করছি ঠিক করছি, এই রকম অপসংস্কৃতি, মানে যে যা পারছে তাই করছে। এটা কি চিড়িয়াখানা, যাদবপুর ইউনিভার্সিটিটা?’ তখন আমরা বলি, ‘না এটা চিড়িয়াখানা কেন হবে, কিন্তু তোমরা এমন কোনো অবস্থায় ওকে পাওনি যার জন্যে ওকে পেটানো যেতে পারে, যদিও আমি বুঝতাম ওকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে, তবুও ওকে পেটানোটা কোনো কাজের কথা নয়। সেখানে তুমি যেটা করতে পার, সেটা হল পুলিশ ডাকতে পার বা গার্ডদের ডেকে ওকে তাদের হাতে তুলে দিতে পার। কিন্তু একটা মানুষকে, যার ব্যাগ থেকে কয়েকটা কন্ডোম পাওয়া গেছে, তুমি পেটাতে পার না। এরকম যে কোনো কনট্রাসেপটিভ পিল যদি আমার ব্যাগ থেকে বেরোয় তাহলে কি আমাকে পেটানো উচিত?’ এই বচসাটা চলাকালীন স্থিতধী যে এরই মধ্যে মার খেয়েছে, সে পালিয়ে যায় ব্যাগ ট্যাগ ফেলে রেখে। যেহেতু ৫০-৬০ জনের জটলা, আমরা তর্ক করছি ওই ফাঁকটা দিয়ে স্থিতধী পালিয়ে যায়। এত বড়ো ক্যাম্পাস …
চূর্ণী : সোমতীর্থদা?
মণিদীপা : সোমতীর্থ ছিল। তো পালিয়ে যাওয়ার পরে ওরা যখন দেখে স্থিতধী নেই, তখন ওরা আমাদের দায়ী করে যে ওর পালিয়ে যাওয়ার জন্যে আমরাই দায়ী। এবং তারপর ওরা অকথ্য ব্যবহার আরম্ভ করে, সমস্ত গেট আটকে দেওয়া হয়, বলা হয়, ‘তোদেরকে যেতে দেওয়া হবে না, তোদের ব্যাগ সার্চ করা হবে’। তো আমরা তখন বলি যে ‘আমাদের ব্যাগে যদি একটাও হাত পড়ে এবং যদি গায়ে হাত পড়ে, তাহলে কিন্তু অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। ঠিক আছে? ফলে ধারে কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করলে সিচুয়েশন জটিল হয়ে যেতে পারে, আমরা কিন্তু পুলিশে যাব।’ ওরা বলছে, ‘পুলিশে তোরা কী যাবি? আমরাই তোদেরকে পুলিশে হাতে তুলে দেব, তোরা নেশাখোর, তোরা মাগী’ — এই সমস্ত বক্তব্য ছুঁড়ে দেওয়া হয় আমাদেরকে। যেহেতু দেবদত্তার তখন চুল ছোটো, আমার চুল ছোটো, চান্দ্রেয়ীর চুল ছোটো, আর দেবদত্তার পরনে যে পোশাকটা আছে সেটা তাদের কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছে, যেহেতু ছেলেদের জামাকাপড় পরা ছিল সেহেতু এটা তাদের কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছে। এবং চান্দ্রেয়ীকে তো পুরোপুরি যে ধরনের কথা বলা হয়েছে যেন সে একজন প্রস্টিটিউট। তো যাই হোক, এই ঘটনাটা চলে, আমাদের আটকে রাখা হয়, আমরা ফোন করি। প্রথমে ডিন অফ স্টুডেন্টকে ফোন করা হয়, রজতকান্তি রায়কে, এখনও তিনিই আছেন। তিনি ফোন তোলার পর বলেন, ‘তোমরা এত রাতে ওখানে আছ, আমরা কিছু করতে পারব না, তোমরা কেন গেছ?’ তো আমরা জিজ্ঞাসা করি যে ‘স্যার এরকম কোনো রুল আছে যে স্টুডেন্টরা নিজেদের ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না? যদি কোনো অশালীন বা অসামাজিক কাজকর্ম না করে থাকে?’ তো তখন রজতকান্তি রায় কিছু বলেন না, তিনি ছেড়ে দেন। তৎকালীন যে ভিসি, তাঁর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়, তাঁকে ফোনে পাওয়া যায় না। রেজিস্ট্রারকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়, তাঁকে ফোনে পাওয়া যায় না। আমরা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকি আর আমার যত বন্ধু মিডিয়ায় আছে তাদের প্রত্যেককে ফোন করা শুরু করি এবং তাদের মধ্যে একজন, যিনি খুবই নামকরা সর্বভারতীয় ভিসুয়াল মিডিয়ার একজন জার্নালিস্ট এবং খুবই সিনিয়ার রিপোর্টার, তাকে ফোন করি বলি যে ‘আন্টি আমরা তো এখানে আটকা পরে গিয়েছি, আমরা কী করব?’ তখন তিনিই পুলিশে ফোন করেন, বলেন যে তিনটি মেয়ে আটকা পড়েছে, তখন পুলিশ জানায় যে ‘আমাদের কাছে খবর এসেছে, আমরা ওখানে পৌঁছাচ্ছি’। পুলিশ এসে পৌছায়, পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হয় না, বলা হয় যে ‘এদের অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হোক’। এবং সে সময়ে আমরা বলি যে ‘এরা আমাদের আটক করে রেখেছে, এদের অ্যারেস্ট করা হোক’। তো এই একটা বচসার মধ্যে পুলিশ ঢুকতে পারছে না, সেই সময়ে আমরা অনুরোধ করি যে ‘আপনারা যদি ঢুকতে চান তাহলে অন্তত মহিলা পুলিশ ভেতরে দিন, অনেকজন, মানে ৫০-৬০টা ছেলের মধ্যে আমরা নিরাপদ বোধ করছি না’। এবং তারপর মহিলা পুলিশ আসে, আর তারপরেও আমাদের বেরোতে দেওয়া হয়নি। তারপর এই বচসাটা অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে আর শেষপর্যন্ত ওরা আমাদের বিরুদ্ধে একটা লিখিত জেনারেল ডায়েরি করার চেষ্টা করে।
চূর্ণী : অভিযোগটা কী?
মণিদীপা : অভিযোগ নেশা, যদিও আমাদের কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি। আরা আমাদের যখন পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে, পুলিশ বলেছে কোনো অসুবিধে নেই। একচিলতে কেউ নেশা করেনি, একটা সিগারেটের প্যাকেট হয়তো পাওয়া গিয়েছে। এইরকম অবস্থায় গোটা রাত, মোটামুটি আড়াইটে অবধি আমাদের হ্যারাস করা হয় রাত দশটা থেকে। তারপর পুলিশ আমাদের শেষে বার করতে পারে, নিরাপদেই বার করে নিয়েছিল। বার করার সময়ে কিন্তু সোমতীর্থকে অকথ্য মারধোর করা হয়। পুলিশ কোনোরকমে ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে, নইলে সোমতীর্থ মরেই যেত সেদিন। তারপর আমরা যাদবপুর থানায় যাই, যাদবপুর থানায় পুলিশ খুবই ভালো ব্যবহার করে। এটা বলব পুলিশ খুবই সহযোগিতা করেছে। সেদিন রাত্রিবেলায় ওরা দায়িত্ব নিয়ে আমাদেরকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছে এবং সোমতীর্থকেও। এটাই ঘটনা। এর পরে আমরা একটা এফআইআর করেছিলাম সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের। তখন ইন্টার্নাল কমপ্লেন্টস্ কমিটি (ICC cell)-টার অস্তিত্ব ছিল।
চূর্ণী : সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল তো এখনও আছে?
মণিদীপা : ব্যাপারটা একই, ICC-র ভেতরেই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল ঢুকে গিয়েছে। তখন আলাদা ছিল। তখন সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলে যারা অফিসার ছিলেন, পারমিতা চক্রবর্তী এবং ঈশিতা চন্দ, আমরা তাঁদের কাছে অভিযোগ করি যে আমাদেরকে এরকমভাবে হ্যারাস করা হয় এবং সেক্সুয়ালি এবং ভার্বালি আমাদেরকে এরকম করা হয়েছে।
চূর্ণী : মলেস্টেশন?
মণিদীপা : না মলেস্টেশন হয়নি।
চূর্ণী : না দেখ মলেস্টেশন তো ভার্বালি …
মণিদীপা : সে যাই হোক, we were abused তো আমাদের কাছে এরকম একটাই নাম ছিল। একটি ছেলের সে মেকানিকাল বা ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্টের হবে ছেলেটা, তার একটা ছবিও ছিল। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে আমাদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয় সেলে, তখন আমাদের বলা হয় তোমরা নাম দাও একটা, আমাদের কাছে নাম দিলে সেই নামের ভিত্তিতে আমরা ইনভেস্টিগেশন করব। তো আমরা বলি যে একটা mob আমাদের অ্যাটাক করেছিল, সেই mob-এর তো কোনো face নেই এবং এই ৫০-৬০ জন … ও এটা বলতে ভুলে গিয়েছি, এই ঘটনার পরদিন আবার একচোট মারপিট হয় ওয়ার্ল্ড ভিউ-এর সামনে। যেটা হয়েছিল যে ওয়ার্ল্ড ভিউতে আমরা সবাই দাঁড়িয়েছিলাম। সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ করে আসার পরে তখন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা আমাদের সাথে দেখা করে এবং জানতে চায় যে ব্যাপারটা কী হয়েছিল? সেই সময়ে হস্টেলের কিছু ছেলে পাস করে এবং অদ্ভুত মন্তব্য করে। সেটা শুনে আমাদের ছেলেরা কিছু মন্তব্য করে। হস্টেলের ছেলেদের প্রায় ১৫০-২০০ জনের একটা বিশাল গ্রুপ আমাদের ওপর চড়াও হয়। দেবীকে ঘুঁষি মারা হয়, ঋতম আর মৈত্রেয়কে অকথ্য মারধর করা হয়, চুল ছিঁড়ে নেওয়া হয়, এবং কম্পারেটিভ লিটারেচার ডিপার্টমেন্টের স্যমন্তকদা আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের কোনোমতে বাঁচিয়ে দিতে দুজন প্রফেসর আমাদের এসকর্ট করে পেছনের রাস্তা দিয়ে বার করে দেন। না হলে আমরা মরেই যেতাম সেদিন মারধোর খেয়ে। মানে এইরকম ছিল সেদিনের পরিস্থিতি।
চূর্ণী : সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল ব্যাপারটা?
মণিদীপা : সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল আমাদের যখন প্রশ্নটা করে, তখন আমরা বলি mob-এর তো কোনো face নেই, আমরা একটা ছেলের নাম দেব, সে রাস্টিকেটেড হবে, আইনি যে প্রক্রিয়াগুলো হবে সব চলবে। কিন্তু যে ১৫০-২০০ জন যুক্ত ছিল, হয়তো যার নাম দেব সে সেভাবে involved-ই ছিল না। বাকি যারা involved তারা হয়তো বেঁচে যাবে। কিন্তু এই ঘটনাটা তো সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করে। এটা তো শুধুমাত্র একটা ছেলের ওপর প্রেশারাইজ করে সে ক-টা নাম দেবে তার ভিত্তিতে হতে পারে না। তো এটাকে হিউম্যান গ্রাউন্ডে আমরা সাপোর্ট করতে পারছি না। তখন সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল থেকে বলা হয়, সেটা তোমাদের প্রবলেম, আমাদের কিছু করার নেই, তোমাদের যদি ethics-এ বাধে, তাহলে এটা কিছু করা যাবে না, কারণ নাম না পেলে আমরা কিছু করতে পারব না। এবং তারপর আমরা বলি ‘আমরা তদন্তের জন্যে অপেক্ষা করে আছি, তদন্ত হলে যেভাবে হেল্প দরকার, যেভাবে কোঅপারেশন দরকার, আমরা করব। কিন্তু জাস্ট একটা লোকের নাম আমরা এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে দিতে পারব না। প্রপার আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড যদি হয়, তাহলে আমরা ডেফিনিটলি বলে দিতে পারব যে কারা কারা এর মধ্যে ইনভল্ভড ছিল। তো সেই জিনিসপত্র তো কিছুই হয়নি, বরঞ্চ পরদিন আমরা দেখি অথরিটি একটা নতুন গল্প দিয়ে, নেশার ওপর পুরো ব্যাপারটাকে ঘুরিয়ে দিয়ে পুরো ঘটনাটাকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। এবং তখন আমরাও স্টুডেন্ট, কিন্তু সেভাবে একটা বিশাল মাস যেহেতু মুভ করেনি, সেই জন্য পুরো ঘটনাটা চাপা পড়ে গিয়েছিল।
চূর্ণী : এই ঘটনা তো আগেও হয়েছে, আমি নিজেও ই-ফ্যাকাল্টির সামনে দিয়ে সিগারেট খেতে গিয়ে আওয়াজ খেয়েছি, এবং যারা আছে তাদের হাতেও সিগারেট আছে, গোল হয়ে বসে আওয়াজ দিচ্ছে।
মণিদীপা : এই যে ঘটনাটা নিয়ে শুরু হল মুভমেন্টটা, সেটা তো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, মানে আগেও হয়েছে। যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্যে, সেটা হল দুটো জিনিস, মানে যেটা নিয়ে বার বার বলা হচ্ছে যে রাজনৈতিক একটা বাতাবরণের মধ্যে পুরো বিষয়টা হচ্ছে, এটার মধ্যে একটা রাজনৈতিক রঙ আছে এবং সমস্তকিছু। যখনই এরকম একটা ঘটনা হয় তখনই রাজনৈতিক রঙ লেগেই যায়। এখন একটা পলিটিকাল কনসাসনেস যখন সব মানুষের মধ্যে রয়েছে এবং যেভাবে পলিটিক্স মানুষের ঘরে ঘরে, মানে যেভাবে ক্যাপচার করছে পলিটিক্স, সেখান থেকে এই জিনিসপত্রগুলো হচ্ছে। সেটাকে আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু যেটা সবার আগে মনে রাখতে হবে এই জেন্ডার ভায়োলেন্সের দিকটা, এটা প্রত্যেকটা মেয়ে, প্রতি মুহূর্তে, প্রতি জায়গায় face করছে এবং যেটা নিয়ে খুব মাইল্ড প্রতিবাদ হয় এবং প্রতিবাদ হয় না বললেই চলে, এই প্রথম যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে একটা মলেস্টেশনের ঘটনাতে আমরা মুভ করছি। এইরকম অনেক জায়গা থেকে আমরা নিজেরা, আমরা যখন প্রথম মুভমেন্টটা শুরু করি, আমরা বেশ কিছু স্টুডেন্ট, irrespective of their political affiliation আমরা যেদিন ৩ তারিখে মিট করি এবং মিট করে আমরা স্থির করি যে আমরা অথরিটির ওপর একটা প্রেশার ক্রিয়েট করব যাতে একটা সুষ্ঠু তদন্ত হয়। সেই দিন যখন আমরা এইটা নিয়ে awareness campaigning শুরু করি — একটা মেয়ের সাথে বিষয়টা হল, আমরা কি চুপ করে থাকব। এরকম অনেক লোক আছে, যারা আমাদেরকে বলে ‘এটা তো একটা মলেস্টেশন’, মানে এমন কী একটা বিষয় যে এটা নিয়ে এত লাফালাফি করতে হবে, এ তো রেপ নয়। মানে এটাই একটা জানার বিষয় যে মলেস্টেশন আর রেপের মধ্যে কী পার্থক্য আছে? তথাকথিত মলেস্টেশনটা তো এটাই — মারলেও দোষ আর খুন করলেও দোষ। দোষটা তো দোষই। মানে ঘটনাটা হচ্ছে যে একটা penetration, কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে penetration যতটা অপরাধের, ঠিক ততটাই অপরাধের কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার নখেও হাত দেওয়া। যদি কেউ বলে, ওর তো নখে হাত দিয়েছে তো তোমার কোনো গোপন অঙ্গে হাত দেয়নি — এটা প্রচণ্ড একটা বাজে ভাবে মানে জেন্ডার ভায়োলেন্সের মতো ঘটনাকে জাস্ট তুচ্ছ বা ছোট্ট ঘটনা বলে দাবিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা, যেটা কোনোরকমভাবে সাপোর্ট করাটা কোনো মানুষের উচিত না। আমরা নিজেরাও দেখতে পারি, যখন কোনো কথা বলি, তখন বলা হয় এই তো ফেমিনিস্ট, নারীবাদী। আঁতেল, নারীবাদী এই সমস্ত যে বাক্যবন্ধগুলো ব্যবহার করা হয়। যখনই কেউ প্রতিবাদ করতে চায় এভাবে ট্যাগ করে দাও। এই জিনিসটা বন্ধ হওয়া উচিত। এমন নয় যে আমাদের এই বিষয়টা কোনো বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা। এইটা আমরা এইভাবে ফেটে পড়েছি সমস্ত স্টুডেন্টরা একত্রিত হয়ে, তার কারণটা হল গিয়ে অবশ্যই এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, আমরা চাই আমাদের ক্যাম্পাসে একটা মহিলা কেন, একটা পুরুষও যেন নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। হতেই পারে আজকে একটা মেয়ের সাথে কতগুলো ছেলে এই বিষয়টা করছে বলে এখানে জেন্ডার ভায়োলেন্সের একটা ব্যাপার চলে এসেছে, যৌন হেনস্থার একটা ব্যাপার চলে এসেছে। এটা নিয়ে একটা অন্যরকমভাবে মুভ করার একটা চেষ্টা করা হয়েছে, তো এটাও একটা ঘটনা সেদিন যে ছেলেটি ছিল সেও মার খেয়েছে। এবং সেটা একটা হিউম্যান রাইট্স ভায়োলেশনের ঘটনা, একটা মানুষের বেসিক অধিকার থাকে, সে যে কোনো জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারে —
চূর্ণী : কেউ তার গায়ে হাত তুলতে পারে না।
মণিদীপা : হ্যাঁ কোনো কারণেই আমি তার গায়ে হাত তুলতে পারি না। কোনো কারণে তার আচরণ যদি আপত্তিকর মনে হয়ে থাকে আমার কাছে, স্টেট মেশিনারি আছে, আমি কমপ্লেন করতে পারি যে এই বিষয়টা আপত্তিকর, এদের বিরুদ্ধে স্টেপ নেওয়া হোক। আইন কখনোই আমি নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না। ফলে আজকে যে অভিযোগগুলো আসছে যে স্টুডেন্টরা কোথাও গিয়ে মুভমেন্ট করছে সেটা ইল্লিগাল বা অন্য কোথাও গিয়ে কোনো আইনকে ভায়োলেট করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একটা পড়াশোনার পরিবাশ আছে সেটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে, আমার মনে হয় সেই জিনিস্টা হওয়ার পেছনে বিশাল বড়ো কারণ হচ্ছে যে আজকে এই অরাজকতাটা চলছে, কতদিন অবধি মানুষ মুখ বন্ধ করে কেবল পড়ে পড়ে মার খাবে? একটা মেয়ের সাথে, একটা মেয়ে কেন একটা ছেলের সাথেও যদি দিনের পর দিন এরকম হয়, দিনের পর দিন যদি ভার্বালি, সেক্সুয়ালি তাকে হ্যারাস করা হতে থাকে, তাহলে একটা না একটা সময় তাকে তো মুখ খুলতেই হবে।
চূর্ণী : আর একটা কথা হচ্ছে যে এই মুভমেন্টটা বরাবরই bannerless ছিল।
মণিদীপা : সেটা এখনও bannerless, এবার ব্যাপারটা হচ্ছে যে bannerless-এর ওপরে এত জোর দেওয়া হচ্ছে কেন?
চূর্ণী : মানে inclusivity-র জন্যে কি? মানে সবাই যাতে in spite of all political affiliation এতে যুক্ত হতে পারে?
মণিদীপা : এটা তো একটা বিষয় বটেই, তা সত্ত্বেও যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, আমরা যখন মুভ করছি, ১৬ তারিখটা তো আগে হয়নি, যেখানে স্টুডেন্টরা মার খাচ্ছে, ২৮ তারিখের ঘটনাটা আগে হয়েছে। কিছু স্টুডেন্ট ফেসবুকে প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এবং বার বার condemn করে যে এটা জেন্ডার ভায়োলেন্সের ঘটনা। তারা যখন দেখে অথরিটি এই ঘটনাটাকে কোনো আমল দিচ্ছে না, তখন এটা উপলব্ধি করে যে আমাদের অথরিটির ওপর একটা চাপ তৈরি করা দরকার যাতে একটা সুষ্ঠু তদন্ত হয়। তো এইবার ঘটনাটা হচ্ছে গিয়ে জেন্ডার ভায়োলেন্সের মতো একটা বিষয়, এটা তো কোনো পলিটিক্সের অন্তর্গত নয়। হ্যাঁ, মানে পার্টি দলবাজির ব্যাপার তো নয়, রাজনীতির ব্যাপার তো নয়, আমার বন্ধু যদি মলেস্টেড হয়, শুধু তাই কেন? ছেড়ে দিচ্ছি, একটা অচেনা মেয়ে বা অচেনা ছেলে যারই ক্ষেত্রে বিষয়টা হোক না কেন সেইখানে যে জিনিসটা ঘটেছে সেখানে আজ আমি এসেছি। আমার political belief কী, তাতে কিছু আসে যায় না। বা আমার কোনো political belief নাই থাকতে পারে। political belief বলতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একটা রাজনৈতিক চেতনা থাকে, একটা রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকে, একটা আদর্শ থাকে, কেউ তো apolitical নয় এযুগে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে political affiliation-টা কোনো একজন মানুষের নাও থাকতে পারে। তো এবার ঘটনাটা হচ্ছে bannerless থাকাটার এটাই একটা বড়ো কারণ। যখনই কোনো একটা ঘটনা ঘটে, সমস্ত সময়েই তার মধ্যে একটা রাজনৈতিক রঙ লাগে, একটা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি তাকে দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অতএব একটা inclusive ব্যাপার তো অবশ্যই আছে, আমরা চাইছিলাম যে মুভমেন্টটা যেন সকলকে নিয়ে হয়। আর সমস্ত মানুষ তাদের রাজনৈতিক অ্যাফিলিয়েশন, তাদের যাবতীয় রাজনৈতিক বিশ্বাস, তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, তাদের শ্রেণী পরিচয়, তাদের অবস্থান এবং সমস্ত কিছু নিরপেক্ষভাবে যেন প্রত্যেকে এসে প্রতিবাদটা করতে পারে। দু-নম্বর জিনিসটা হচ্ছে, কোনো রাজনৈতিক রঙ যাতে না লাগে, যাতে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এটাকে একটা রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে দাবিয়ে দিতে না পারে, এবং তৃতীয়ত যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে গিয়ে এই পুরো বিষয়টা যেখানে প্রত্যেকটা মানুষ এসে তার প্রতিবাদটা করতে পারে। এবং যাতে এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে যে এইরকম একটা প্রতিবাদ হয়েছিল এবং এইরকম একটা প্রতিবাদ আমরা ভবিষ্যতেও করতে পারি এবং সেখানটায় কোনো পার্টি, কোনো প্রশাসন, কোনো রাজনৈতিক সাহায্যের আমাদের দরকার নেই। কতগুলো মানুষ মনে করে যে আমরা নির্যাতিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াব, সেটাই যথেষ্ট।
চূর্ণী : মানে আমার যেটা মনে হচ্ছিল যে মূল দাবিটা ছিল তদন্ত চাই। এবারে ব্যাপারটা হচ্ছে যে বিভিন্ন দল যেগুলো আমাদের ক্যাম্পাসেই আছে, ফেটসু, এসএফআই ইত্যাদি, তারাও প্রত্যেকেই কিন্তু একটা সময়ে বলেছে, তদন্ত চাই। তা এই তদন্ত চাই কথাগুলোর মধ্যে কি কোনো অর্থের তফাত আছে? আমরা দুজন আপাতভাবে একই কথা বলছি বটে, ফেটসুও বলছে তদন্ত চাই, আবার যারা আন্দোলনটাকে শুরু করেছে তারাও বলছে তদন্ত চাই। কিন্তু এই দুটো তদন্ত চাই-এর মধ্যে তোমার কি মনে হয় আড়ালে কোনো তফাত আছে? মানে সেটা আমি বলছি মূলত এই কারণে যে সার্কুলারটা ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে প্রথমে বেরিয়েছিল, সেটা ভুলে …
মণিদীপা : আচ্ছা এটা নিয়ে আমি একটা কথা বলি। আমি ফেটসু-র সার্কুলারটা সেরকমভাবে পড়িনি, সেইজন্য এটা নিয়ে মন্তব্য করাটা খুবই বাজে একটা ব্যাপার হবে। যেটা আমি নিজে অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পারছি আর কি, এখানে যেহেতু আমার সেরকম কোনো political affiliation নেই, আমি কোনো দলের নই, ফলে যেটুকু আমি বুঝতে পেরেছি সেটা হচ্ছে, তদন্ত চাই।
চূর্ণী : এই ব্যাপারে প্রত্যেকে সহমত। এবার ঘটনাটা হচ্ছে কিছু কিছু জায়গায় সকলে সহমত।
মণিদীপা : তদন্ত চাই-এর যে প্রশ্নটা আমাকে করলি, এটা সত্যি ঘটনা যে একটা বিষয়ে সহমত এখানটায় যে ২৮ তারিখের ঘটনাটার একটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত আমরা চাই এবং সেটা যাতে unbiased তদন্ত হয়। এবার এই ফেটসুর সার্কুলার বা বিভিন্ন পার্টি নিজস্বভাবে যে বক্তব্য রেখেছে সেগুলো আমি খুব একটা জানি না, সুতরাং সেটা নিয়ে বক্তব্য রাখাটা খুবই ভুল একটা কাজ। যেহেতু আমি জানি না পরিষ্কারভাবে বক্তব্যটা কী। তবে যেটুকু আমি বুঝতে পারছি সেটা হচ্ছে গিয়ে যেভাবে তড়িঘড়ি আমরা প্রচণ্ডভাবে চেয়েছিলাম যে সুষ্ঠুভাবে একটা তদন্ত হোক। ICC যেখানে victim blaming-এর মতো ঘৃণ্য একটা কাজ করেছে, কেননা ICC-র দুজন মেম্বার আবার victim-এর বাড়িতে গিয়ে তাকে বলে যে তুমি কি মদ খেয়েছিলে, তোমার কী ড্রেস পরা ছিল? তার ফলে আমরা বলি যে ICC Reconstruct করা হোক, এটা আমাদের referendum-এর একটা দাবি। তো সেইটার জন্য আমরা প্রথম থেকেই অথরিটিকে বলছিলাম যে আমরা তদন্ত চাই, তদন্ত চাই, তদন্ত চাই এবং সেটার পরে মানে মুভমেন্টটা হয়ে যাওয়ার পরে এবং মহামিছিল হয়ে যাওয়ার পরে যখন তড়িঘড়ি রাজ্যসরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে committee গঠন করা হবে এবং committee গঠন করার ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে যখন লালবাজার দুজন ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তাদের অ্যারেস্ট করে। যে prima facie arrest-টা আমরা দাবি করে আসছিলাম এতদিন ধরে সেইটা হয়ে যাওয়ার পর বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু পলিটিকাল গ্রুপের হয়তো মনে হয়েছে যে এটার পেছনে কোনো বৃহত্তর রাজনীতি আছে। বৃহত্তর রাজনীতিও বলতে এটাই যে সরকার বা প্রশাসন মুখ বাঁচাবার জন্যে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো কোনো ছেলেকে, যারা হয়তো জড়িত নয় এরকম কিছু ছেলেকে, মানে defendant করে ফেলেছে, এইটা নিয়ে হয়তো কিছু কিছু পলিটিকাল গ্রুপ সন্দিহান। কিন্তু আমরা যারা প্রথম থেকে জেন্ডার ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে মুভমেন্টটা করছিলাম, তাদের দাবি ছিল একটাই, আমরা তদন্ত চেয়েছিলাম এবং এটাও এখানে বলে রাখা দরকার যে সেইদিন ১৬ তারিখের ঘটনার দিন যেদিন আমাদের প্রায় ২০-২৫ জন মেয়েকে বীভৎস ভাবে মারধোর করা হয়, জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয় এবং মলেস্ট করা হয় সেইদিন, তার পরদিন আমরা ১৫ জন মেয়ে গিয়ে এফআইআরটা করতে পেরেছিলাম। আবার সেই এফআইআর আমরা করেছি পুলিশের বিরুদ্ধে গিয়ে, এবং আমরা ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছি যে কীভাবে তদন্তের ফলাফলটা আসে। এটা তো মানতে হবে যে আমরা যখন ডেমোক্রেসিতে বাস করি, ডেমোক্রেটিক যে পিলারগুলো আছে, যেখানটায় গিয়ে আমরা জাস্টিস পেতে পারি, সেই জায়গাগুলোতে প্রথমে আমরা নিজেদের অভিযোগগুলো জানাব। তারা তাদের মতো কাজ করবে এবং তাদেরকে আমরা কাজ করতে দেব, এটাই স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা শুধু ensure করতে পারি। যাতে জাস্টিস হয় এবং যতটা সম্ভব কোঅপারেট আমরা করতে পারি প্রশাসনকে ততটা আমরা করব। এবার ঘটনাটা হচ্ছে কিছু কিছু পলিটিকাল গ্রুপের এটা মনে হতে পারে কোনো একটা বৃহত্তর রাজনীতি জাস্ট নিজেদের হাত ধুয়ে ফেলার জন্যে বিষয়টাতে তড়িঘড়ি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িঘড়ি একটা ফলাফল দিয়ে কিছু নিরপরাধ ছেলেকে হয়তো ফাঁসিয়ে দিতে পারে, সেই জায়গাটার হয়তো দ্বিমত আছে এবং দ্বিমতগুলো উঠছে। কিন্তু এই বিষয়ে সন্দিহান নয় যে আমরা তদন্তটা চাই। আমরা তদন্ত চেয়েছিলাম, সেই জায়গাটাতে প্রত্যেকে সহমত। Irrespective of their political affiliation, political agenda, everybody would agree যে একটা প্রপার ইনভেস্টিগেশন হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা কী প্রক্রিয়ায় হবে সেটা নিয়ে হয়তো অনেকে সন্দিহান, কারণ যে শাসক যে প্রশাসন জেন্ডার ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে যারা মুভ করছে তাদেরকে পিটিয়ে আসে, সেই প্রশাসন কতটা কী করবে, এই জেন্ডার ভায়োলেন্স/মলেস্টেশনের কেসটাকে সঠিকভাবে সুষ্ঠুভাবে করবে সেটা নিয়ে সন্দিহান হওয়ার অবকাশ আছে। সন্দেহ কিন্তু প্রত্যেকেরই আছে এবং সেই জায়গায় থেকে দেখতে গেলে এই গ্রুপের আশঙ্কা কোথাও না কোথাও গিয়ে জাস্টিফায়েড। কিন্তু হ্যাঁ যেটা আমার মনে বারবার আসে সেটা সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করছি এবং এই জায়গাতেই আমরা এক যে আমরা আস্থা রাখি আমাদের প্রশাসনের ওপর, আমরা দেখি কী ফলাফল হচ্ছে এবং আন্দোলনটা তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জেন্ডার ভায়োলেন্সের ইস্যুটা নিয়ে আন্দোলন আজকে এখানে হচ্ছে, কালকে আর এক জায়গায় হতেই পারে, তাই না? তো সেখানে হয়তো অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গর্জে উঠবে। যেমন শান্তিনিকেতন উঠেছে।
চূর্ণী : তদন্ত চাওয়া হয়েছিল। শাস্তির দাবি কি করা হয়েছিল? দিব্য বলেছে, আমরা তদন্ত চেয়েছিলাম, শাস্তির দাবি আমরা করিনি।
মণিদীপা : দ্যাখ, আন্দোলনটা কোনো খাপ পঞ্চায়েত নয়। এইভাবেই লেখ। আমরা কিন্তু ডিসাইড করে দিতে পারি না, কার কী হবে। আমরা বলতে পারি না, এ এই করেছে, একে ফাঁসিকাঠে ঝোলাও। আমরা যেটা ডেমোক্রেটিকালি এনসিওর করতে পারি, একটা ঘটনা ঘটেছে, অপরাধ হয়েছে বলে যদি মনে করি, তার তদন্ত আমরা চাই। এবার সেই তদন্ত তদন্তের পথে এগোবে। সেই তদন্তে যদি প্রমাণিত হয়, কেউ অপরাধী, তাহলে সে শাস্তি পাবে। যদি কেউ নিরপরাধ, তাহলে সে ক্লিন চিট পাবে। সেই ফলাফলের দায় আমাদের নয়। কিন্তু যেটা আমাদের ওপর দায় বর্তায়, সেটা হচ্ছে যে এই voice-টা যে আমার ওপর একটা অপরাধ হয়েছে, আমার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। সেইখানটাতে আমার প্রতিবাদ করা দরকার। সেই voice-টা যদি না থাকে, তাহলে তো তালিবান শাসন চলবে। যে যা পারছে এসে করে দিয়ে যাবে মেয়েদের সাথে, এবং কেউ কোনো কথা বলবে না।
Leave a Reply