৬ এপ্রিল ২০১৫ মন্থন সাময়িকীর পক্ষ থেকে ‘লিট্ল ম্যাগাজিনের কথা’ তথ্যচিত্রের পরিচালকদ্বয় উৎপল বসু এবং অভিজয় কার্লেকারের সঙ্গে ফিল্ম তৈরি করার সূত্রে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারি। এখানে তা প্রকাশ করা হল।
মন্থন : আপনারা যে তথ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারি ফিল্মের কাজ করছেন, সেটা কীভাবে শুরু হল?
অভিজয় কার্লেকার : আহমেদ হোসেন আর আমি একটা বড়ো এজেন্সিতে কাজ করতাম। আমাদের ওই অত বড়ো স্ট্রাকচারের বাইরে কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল। এক্ষেত্রে আমার ডকুমেন্টারি ছবির দিকে একটা ঝোঁক ছিল। চাকরি ছাড়ার চার বছর পর ১৯৭৭ সালে ডিজাইনিংয়ের কাজের পাশাপাশি একটা ফিল্ম তৈরির যৌথ উদ্যোগ গড়ে ওঠে। উৎপল ১৯৮২-তে যুক্ত হয়। আর ছিলেন সন্তোষ বেরা। আমাদের প্রথম ছবি ছিল ‘ধরমতল্লা কা মেলা’। প্রায় এক ঘণ্টার হিন্দি ছবি, বেশ নাম করেছিল। তখনকার দিনে ওই ধরনের ডকুমেন্টারি হয়নি। পুরোটাই প্রায় লাইভ শুটিং। শহিদ মিনারের আশেপাশের তিনটে মাঠে একটা মেলা বসত। পুরোপুরি গ্রাম্য মেলা, কলকাতার অবাঙালি ইমিগ্রান্টদের মেলা, বিহার উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা মানুষ জড়ো হত। ১৯৭৯ সালে কাজ শুরু হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে ফিল্মটা কমপ্লিট হয়েছিল। সমস্ত ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে দেখানো হয়েছে। বিদেশেও সমাদৃত হয়েছিল। সাবঅলটার্ন স্টাডিজ যখন শুরু হচ্ছে, তার একেবারে গোড়ায় এই ছবি। কলকাতা যে বাঙালি শহর বলে সবাই মনে করে, সেটা যে নয়, সেরকম একটা ব্যাপার ছিল। এরপর আমরা পশ্চিমবঙ্গের জলাভূমি নিয়ে ছবি করেছি। যে ক-টা ছবি আমরা করেছি, তার একটা বৈশিষ্ট্য হল, ওই বিষয় নিয়ে ওইরকমের ডকুমেন্টেশন আর হয়নি। ঝাড়খণ্ড নিয়ে আমাদের ছবি দেখুন, লিট্ল ম্যাগাজিন নিয়ে ছবি দেখুন, আর তো হয়নি।
মন্থন : উৎপলবাবুকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কীভাবে যুক্ত হলেন?
উৎপল বসু : বেকার ছিলাম। আমার কাকা ছবি আঁকতেন। বিজ্ঞাপনের কাজও করতেন। ছোটোবেলায় সেটা দেখেছি। ছবি আঁকার একটা ঝোঁক সামান্য ছিল, বিরাট কিছু নয়। থিয়েটার করতাম পাড়ার ছোটো দলে। জোজোদার (অভিজয় কার্লেকার) স্ত্রীর একটা ছোটো দল ছিল। আমি ঘুরতে ঘুরতে সেখানে পৌঁছে যাই। সেই সূত্রেই আমার এদের সাথে পরিচয়।
অভিজয় কার্লেকার : যখন ও এল, ওর কুড়ি-একুশ বছর বয়স।
মন্থন : লিট্ল ম্যাগাজিনের বিষয়টা কেন বেছে নিলেন?
অভিজয় কার্লেকার : ধরমতল্লা কা মেলা, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি, ঝাড়খণ্ড সবক্ষেত্রেই একটা মজার গপ্পো আছে। রাঁচীতে আমাদের বন্ধু মেঘনাদ ফিল্ম করে, ওর ‘আখড়া’ নামে একটা গ্রুপ আছে। ওরা আসামের আদিবাসী কুলিদের নিয়ে একটা ছবি করেছিল। সেইসময় মেঘনাদ আমাকে দুটো বই জোগাড় করে দিতে বলে। বাংলায় লেখা বই, আমার এখন নাম মনে নেই। দুজন ব্রাহ্ম প্রচারক প্রথম আসামের কুলিদের সংগঠিত করেছিলেন। এই বিষয়ের দুটো বই খুঁজতে গিয়ে একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সকালবেলায় বেরিয়ে কলেজ স্ট্রীট পাড়ায় ঘুরতে ঘুরতে মীর্জাপুর স্ট্রীটে একটা বই পেলাম, হাতিবাগানে গিয়ে আর একটা বই পেলাম। বইয়ের নাম দুটো ছাড়া আমার কিছুই জানা ছিল না। দোকানে যাচ্ছি, একজন বলল, আমাদের কাছে নেই, আসামের বই তো, আপনি ওখানে যান ওরা হয়তো বলতে পারবে। সেখানে গেলাম, তারা দিতে পারল না, কিন্তু আর এক জায়গায় পাঠাল। এইভাবে দিনের শেষে বই দুটো পেয়ে গেলাম পাবলিশারদের কাছেই। … আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেদিন। এইসব দেখে ছোটো বাংলা প্রকাশনের ওপর একটা আগ্রহ জন্মায়। তারপর শমীকদার (শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে কথা বলি একদিন।
এখানে কিন্তু প্রেমাংশু দাশগুপ্তের কথা বলতেই হবে। কলকাতা বইমেলায় গিয়েছিলাম। ২০১২ সালে। তখনও লিট্ল ম্যাগাজিনের ওপর একটা ফোকাস ছিল না। ভাবলাম, ছোটো ছোটো পাবলিশারদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলি। সেখানে লিট্ল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে প্রেমাংশুবাবু সামনেই বসেছিলেন। তখনও ওখানে কেউ আসেনি। টেবিলগুলো পাতা, কিন্তু ফাঁকা। ওঁর সঙ্গে পরিচয় হতে উনি ‘লিট্ল ম্যাগাজিন সমন্বয় মঞ্চ’-এর একটা হ্যান্ডবিল দিলেন। আমরা তখন ভাবছি কী করা যায়। আমরা ওদের কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করলাম। এরপর আমরা কলেজ স্কোয়ারে সমন্বয় মঞ্চের মেলাতে একটা শুটিং করলাম। আট মিনিটের শুটিং ইউটিউবে তুলে দিয়েছিলাম। ওরাও এসে সেটা দেখল। আমরা প্রতিষ্ঠিত লিট্ল ম্যাগাজিন বা ইতিহাসের মধ্যে না গিয়ে এই মহলের নানা মানুষের সাথে কথা বলে, ঘোরাঘুরি করে এই জগৎটা সম্বন্ধে একটা ধারণা তৈরি করতে থাকি।
উৎপল বসু : সন্দীপবাবুর (কলকাতা লিট্ল ম্যাগাজিন লাইব্রেরির সন্দীপ দত্ত) সঙ্গে একটা যোগাযোগ তখন হয়েছিল। সমন্বয় মঞ্চের সঙ্গে কফি হাউসে প্রথম মিটিংয়ের পর আমরা সন্দীপ দত্তের কাছে যাই।
অভিজয় কার্লেকার : আমরা শুটিং আরম্ভ করি আসলে সন্দীপবাবুর লাইব্রেরিতে। আমাদের আট মিনিটের ক্লিপটাতে লাইব্রেরি আছে।
আমাদের ছবিতে ‘এক্ষণ’, ‘পরিচয়’, ‘বারোমাস’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘অনুষ্টুপ’-এর মতো পত্রিকা আসেনি। শুনেছি কল্যাণ ঘোষ (রাসবিহারি মোড়ের পত্রিকা বিক্রেতা) নাকি বলেছেন, এসব পত্রিকা নেই, তাহলে কী ছবি?
বাংলায় ছোটো প্রকাশনা, এটা যদি আমরা ধরতে চাই, তাহলে তো লিট্ল ম্যাগাজিন যে এত সংখ্যায় বেরোয়, সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং। আপনার সঙ্গে কতবার আলোচনা হয়েছে, ক-টা লিট্ল ম্যাগাজিন আছে? আমরা সব আন্দাজ করে মোটামুটি একটা ফিগার রেখেছি, সারা পশ্চিমবঙ্গে ১৫০০ মতো বেরোয়।
মন্থন : এটা কি সংখ্যায় ধরা যায়?
অভিজয় কার্লেকার : আমি তা বলছি না। আমরা মনে করছি, আমাদের যা কথাবার্তা, যেটুকু পড়াশুনা, বাংলা অ্যাকাডেমি থেকে তথ্য নিয়ে এসে দেখছি এইটা বললে ভুল হবে না। এইটা একটা গুড অ্যাপ্রক্সিমেশন। একটা ভাষায় যদি ১৫০০টা লিট্ল ম্যাগাজিন থাকে, সেইটা …
মন্থন : আমার ধারণা ১৫০০-র বেশি লিট্ল ম্যাগাজিন আছে। যেহেতু আমি অসংগঠিত, অনিয়মিতগুলোকেও ধরতে চাইছি।
অভিজয় কার্লেকার : এর ভিত্তিতে তো আমরা কিছু বলছি না। আমরা শুধু এস্টাব্লিশ করছি, কোনো একটা কালচারাল ফেনোমেনন ধরতে গেলে, এটা একটা লক্ষ্যণীয় সংখ্যা। ঋত্বিকবাবুর পত্রিকা ‘জলদর্চি’, এখন আপনি নাম জানেন না। কিন্তু কলকাতার কাগজে ‘জলদর্চি’ নিয়ে লেখা বেরিয়েছে।
মন্থন : কিন্তু কলকাতার কাগজে যার নাম বেরোয়নি, ‘জলদর্চি’র মতোই একটা উদ্যোগ, কী করে আপনি তাকে বাদ দেবেন?
অভিজয় কার্লেকার : ডেফিনিটলি। আমরা সন্দীপ দত্তের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি জোর গলায় উত্তরবঙ্গ নিয়ে সেরকম কিছু বলেননি আমাদের। ঋত্বিক ত্রিপাঠির কথা বলছেন। আবার ঋত্বিক ত্রিপাঠির সঙ্গে যখন দেখা করছি —
উৎপল বসু : মেদিনীপুর লিট্ল ম্যাগাজিন অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি ঋত্বিক ত্রিপাঠি।
অভিজয় কার্লেকার : ইস্কুলের মাস্টারমশাই। ভালো লেখেন। একটা পুরো ক্যারেক্টার। খুব ইন্ডিভিজুয়ালিটি আছে। এইভাবে আসছে তো। একটা সূত্র নিয়ে কাজ করতে হয়। ওখানে গিয়ে পাচ্ছি অচিন্ত্য মারিক, বিপ্লব মাজি। আপনাকে তো একটা মডেল নিয়ে কাজ করতে হবে। এক একটা ক্যারেক্টার। আপনারা যেটা করছেন, ঋত্বিক ত্রিপাঠি যেটা করছেন, তমাল যেটা করছে, অনিন্দ্য যেটা করছে … এইভাবে এগিয়েছে … ‘রক্তমাংস’ — কবিতার পত্রিকা, কেউ নাক সিটকিয়েছে। আবার অন্য জায়গায় পাচ্ছি, হ্যাঁ ওরা অনেকদিন ধরে ভালো কাজ করছে। আমরা ভালো কবিতা খারাপ কবিতায় গেলাম না। কিন্তু যাঁরা কবিতা পড়েন ছোটো পত্রিকায়, তাঁদের অনেকেই ‘রক্তমাংস’-এর নাম করছেন। দুজনে মিলে পত্রিকা করছেন, একজন সম্পাদক, একজন প্রকাশক, একটা ভালোবাসার সম্পর্ক।
মন্থন : সেটা তো পত্রিকার একটা সম্পদ।
অভিজয় কার্লেকার : লিট্ল ম্যাগাজিনের সঙ্গে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। সাহিত্যকে ভালোবাসা, চিন্তাকে ভালোবাসা — তবে দেখে মনে হয় চিন্তাকে ভালোবাসাটাই অনেক বেশি।
আমরা মনে করি যে লিট্ল ম্যাগাজিনের একটা নির্দিষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমদিকে সাহিত্যের দিকে ঝোঁকটাই বেশি ছিল, এখনকার সময়ে সেটা একদম নয়। এটার সঙ্গে ডিটিপি আর ইন্টারনেটের একটা যোগাযোগ আছে।
মন্থন : আপনারা অ্যাক্টিভিজমের দিকে যে পত্রিকার ঝোঁক, সেদিকটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
অভিজয় কার্লেকার : তখনকার দিনে পত্রিকা জগতের সঙ্গে স্বদেশি আন্দোলনের একটা যোগ ছিল। আমাদের যে এসব নিয়ে সেরকম একটা বক্তব্য আছে তা নয়, তবে একটা অবস্থান নিশ্চয় আছে। সাহিত্য আর কবিতা পত্রিকা আগে সিংহভাগ ছিল, এখন সেটা নয়। আমরা এটাকে একটা শিফ্ট মনে করি। এবং আমরা এটাও মনে করি ইন্টারনেট এবং ডিটিপি আসার পরে বিষয়টা আরও মানুষের মধ্যে ঢুকে যায় আর তার একটা প্রতিফলন লিট্ল ম্যাগাজিনে পড়েছে। কিছু লোক বলছে, অ্যাক্টিভিজমের বিষয়টা লিট্ল ম্যাগাজিনে ঢোকে না।‘রক্তমাংস’ ডেফিনিটলি তা বলছে। কিছুটা অভীকও (ধ্যানবিন্দুর সম্পাদক) বলছে।
উৎপল বসু : ‘চিরহরিৎ’ নিয়ে অনেকেই বলেছে যে ওটা লিট্ল ম্যাগাজিন কী করে হল? একজন তো আমাকে বললেন যে ওটা তো এনজিওদের কাজ। কিন্তু ওটা তো দুজন ব্যক্তি বাড়িতে বসে ডিটিপি করে নিজেদের উদ্যোগে ছেপে স্কুলে স্কুলে দিচ্ছেন।
অভিজয় কার্লেকার : সহজ সরল বাংলায় বিজ্ঞান পত্রিকা। ইংরেজি এবং লাতিন শব্দগুলো সহজ সরল বাংলায় প্রকাশ করছেন স্কুলের বাচ্চাদের জন্য। ওঁরা সায়েন্স পড়াচ্ছেন না, সায়েন্টিফিক মেন্টালিটি পড়াচ্ছেন। আমার পয়েন্ট হচ্ছে, একটা এস্টাব্লিশড ভিউ তো লিট্ল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে চলে না। সেটা তো আপনারাও বলেন।
মন্থন : আপনাদের ছবি তো একটা সফর। বিচিত্র কাজ, বিচিত্র চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলোকে স্পর্শ করছেন …
অভিজয় কার্লেকার : বিষয়ের বৈচিত্র্য, যে ধরনের লোকেরা করছে —
উৎপল বসু : ‘স্বাস্থ্যের বৃত্তে’র মতো একটা পত্রিকা যেখানে একদিকে হাসপাতাল আছে, আবার একটা পত্রিকা করা হচ্ছে।
অভিজয় কার্লেকার : এত বড়ো একটা ফেনোমেনন, সেটার ওপর একটা ছবি করতে গেলে, যারা এটা নিয়ে জানে না, তাদের তো বোঝাতে হবে যে এর একটা বৈচিত্র্য আছে আর আয়তন আছে। সেটা তো কোনো ফুল-প্রুফ উপায় নেই। ছবির দিক থেকে ভাবতে গেলে, বেশ তো ট্রেনে চড়ে কাছেপিঠে গ্রামের স্কুলে যাচ্ছি, এটা তো ইন্টারেস্টিং জিনিস। লাইভ আমরা ধরছি, স্কুলে গিয়ে ক্লাসের মধ্যে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলছে, পত্রিকা নিয়ে, মোবাইল ফোন নিয়ে … এটা তো ইন্টারেস্টিং।
মন্থন : এটা তো টিপিকাল একটা বাঙালি মেন্টালিটি যে এদের বিষয়ে বলা হয়েছে মানে অন্যদের অবজ্ঞা করা হয়েছে।
অভিজয় কার্লেকার : যারা লিট্ল ম্যাগাজিন নিয়ে কিছু জানে না, তারা যে ছবি দেখার পর ‘মন্থন’, ‘ঐহিক’, ‘একক মাত্রা’ ইত্যাদি গুণে বলছে, তা তো নয়। তাদের দিক থেকে এটা একটা সফর। তারা একশো মিনিট ধরে একটা জগতের মধ্যে ঢুকে পড়ছে, যে জগতের সম্বন্ধে তারা কিছু জানত না। ডকুমেন্টারি মানেই তো তাই। ঝাড়খণ্ডের বিষয় ঝাড়খণ্ডের বাইরের লোকে জানবে। ধরমতল্লা কা মেলার বিষয়ে ধরমতল্লার বাইরের লোকেরা জানবে। পূর্ব কলকাতার জলাভূমি এত বড়ো সম্পদ লোকে জানে না। জলাভূমি প্রায় লুপ্ত। দুঃখের বিষয়, কলকাতায় থেকেও লোকে ধরমতলার মেলা নিয়ে কিছুই জানে না। ওটা অবশ্য এখন আর হয় না। ওই মাঠটা টিন দিয়ে ঘিরে এখন বিভিন্ন প্রদর্শনী, মেলা, ভজন ইত্যাদি হয়।
উৎপল বসু : খোলা মেলাটা আর নেই।
অভিজয় কার্লেকার : না, ওই ব্যাপারটাই আর নেই। গ্রাম শহরের আন্তঃযাতায়াত … এখন তো খুব কম লোক যাচ্ছে। একসময় রোববারে ওই তিনটে মাঠে দশ-বারো হাজার লোক যেত। বেশিরভাগ লোককে দেখেই মনে হত গ্রাম্য। এখন তো তা মনে হয় না।
মন্থন : এই যে ছোটো ছোটো মুক্ত পরিসর, যেমন গ্রাম্য মেলার স্পেস, লিট্ল ম্যাগাজিনের স্পেস, এগুলো কি দখল হয়ে যাচ্ছে?
অভিজয় কার্লেকার : তা মনে হয় না। নতুন পত্রিকা কি হচ্ছে না? চলে তো। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, থিয়েটার গ্রুপ, ছোটোখাটো পেইন্টারদের নেটওয়ার্ক, এগজিবিশন, ওয়ার্কশপ, এসব চলতেই থাকে।
উৎপল বসু : এই তো … গ্রামে কাটিয়ে এলাম। দুদিন ধরে বাসন্তী পুজোর মেলা হচ্ছে, মাইক বাজছে। প্রত্যেক রাতে ডান্স গ্রুপ আর মিউজিক গ্রুপ কলকাতা থেকে যাচ্ছে, যে টিভি সিরিয়ালগুলো হয় তাদের হিরো হিরোইনদের নিয়ে, তারা ওখানে গিয়ে সিরিয়ালের ডায়ালগ বলছে, গান করছে, নাচ করছে। এটা ভীষণ চালু এখন গ্রামে। গ্রাম শুদ্ধ লোক …
মন্থন : এটা তো আমি বলতে পারি দখল হয়ে যাওয়া। গ্রামের লোকে তার গ্রামের সংস্কৃতিকে উপভোগ করতে পারছে না। এই তো আমার চেনাশোনা একজন পরপর দুবছর জয়দেবের মেলায় ঘুরে এল। সে বলছে, এত মেকানিকাল … বাউলের মতো পোশাক পরে মেকাপ নিয়ে এটা কী?
উৎপল বসু : জয়দেবের মেলা আগের মতো তো নেই।
মন্থন : তাহলে ভিতর থেকে কি দখল হচ্ছে না?
উৎপল বসু : হ্যাঁ, সেটা তো মানুষের মাথায় হচ্ছে।
Leave a Reply