সত্য চ্যাটার্জী, সোমনাথ, শ্রীমান, পাতিপুকুর, ১৩ সেপ্টেম্বর#
পাতিপুকুর লেকটাউন এস কে দেব রোডের ওপর নতুন অটোরুট চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ালো স্থানীয় রিক্সাচালক ও অটোচালকদের মধ্যে। গত ১১ আগস্ট সকালে ১০-১৫টা অটো নিয়ে এস কে দেব রোডের পাতিপুকুর নতুনপল্লীর শিবমন্দির লাগোয়া স্থান থেকে নতুন রুট চালু করতে চাইলে এই রুটের রিক্সাচালকরা বাধা দেয়। দীর্ঘক্ষণ তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। অপেক্ষারত যাত্রীদের অটোতে উঠতে নিষেধ করা হয়। কেউ কেউ উঠতে চাইলে রিক্সাচালকদের সাথে যাত্রীদেরও বচসা বাধে। শেষ পর্যন্ত রিক্সাচালকরা সংখ্যায় বেশি থাকায় অনেক বাদানুবাদ উত্তেজনার পর অটোচালকরা ফিরে যায়।
এদিকে এস কে দেব রোডের ওপর অটো রুট চালু করার প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয় রিক্সাচালকরা নতুনপল্লীকে কেন্দ্র করে সমস্ত রুটে রিক্সা চালানো বন্ধ করে দেয়। গণ্ডগোল শুরু হলে স্থানীয় স্তরের শাসকদলের কয়েকজন এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় বিধায়কের কাছে যান। সেখানে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে আপাতত অটো রুট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু স্থানীয় রিক্সাচালকগণ এই পরিস্থিতির জন্য স্থানীয় শাসকদলের নেতৃবৃন্দকেই দায়ী করেন। তারা এই রুটের মধ্যে চলা তেঁতুলতলা, জয়া লেকটাউন, কালিন্দি মোড়, ভিআইপি মোড়, পাতিপুকুর স্টেশন প্রভৃতি স্থানের মধ্যে সেদিন সকাল থেকে রিক্সা চালানো বন্ধ করে প্রতিবাদ করতে থাকেন এবং রিক্সাচালকবন্ধুদের সাথে আলাপ আলোচনা করতে থাকেন পাতিপুকুর নতুনপল্লীর মোড়ে। এখানে সকালে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ রিক্সাচালক তাদের নিজ নিজ রিক্সা নিয়ে সমবেত হলে দীর্ঘক্ষণ এই এস কে দেব রোডের নতুনপল্লী মোড় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এক রিক্সাচালক বন্ধু জানালেন, নেতারা বলছেন আগের দিন নাকি ৬০-৭০ জন অটোচালক তাদের ছেলে-মেয়ে বউ নিয়ে বিধায়কের কাছে গিয়ে তাদের সংসার কীভাবে চলবে জানতে চায়। কিন্তু সে বলে, এই লেকটাউন পাতিপুকুর, তেঁতুলতলা যশোড় রোড়, জয়া লেকটাউন, কালিন্দি, ভিআইপি লেকটাউন জুড়ে প্রায় দেড় হাজার রিক্সা চলে। তাহলে এদের পরিবার পিছু ৫-৬ থেকে ৮-১০ জন করে সদস্য এদের পেট চলবে কী করে? এদের ভোটের কি কোনো দাম নেই? এবার এদের কেউ ভোট দেবে?
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, এখানকার অনেকেই এই রাস্তায় অটো চলতে দেওয়ার বিরোধী। তাছাড়া এই রাস্তায় কেউ কেউ ব্যাটারী চালিত রিক্সা চালানো শুরু করেছে। তবে রিক্সায় ভাড়া বেশি বলে অনেকেই এখন টোটো চালানোর পক্ষে মত দিচ্ছে। অটো বা টোটো নামানো হচ্ছে নাকি নেতাদের মাধ্যমে। তারাই হচ্ছেন অর্থের যোগানদার। অটো বা টোটো যাই হোক না কেন, মালিক নিজে গাড়ি চালাচ্ছেন, সেই সংখ্যাটা নিতান্তই কম। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ জানালো যে, এই পাতিপুকুর লেকটাউন অঞ্চলে দীর্ঘদিন থেকে চলতে থাকা এই রিক্সা রুটের চালকদের কথা ভেবে আস্তে আস্তে সরকার থেকে কিছুটা ভর্তুকি বা লোনের ব্যবস্থা করে দিয়ে রিক্সাগুলোকে হয় ব্যাটারী চালিত করা হোক বা টোটোতে রূপান্তরিত করা হোক তাহলে রিক্সাচালকদের পরিবারগুলি বেঁচে যাবে। সেদিনের সেই হট্টগোলের পর এখন পরিস্থিতি শান্ত হলেও রিক্সাচালকদের মনে একটা আস্থাহীনতা অজানা আশঙ্কা থেকেই গেছে, তাদের কেউ কেউ বলছে, নেতারা সব জেনে বুঝেই অটো রুট খুলতে দিয়েছে, ওরা জানে না তা কি হয় কখনো? এরা চোরকে বলে চুরি করতে আর গৃহস্থকে বলে সজাগ থাকতে।
Leave a Reply