শমীক সরকার, মদনপুর, ১০ সেপ্টেম্বর#
অমলকাকার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল বিলে যাবার রাস্তায়। বিকেলবেলা ছেলে আর ভাইপোর হাত ধরে বয়সার বিল-এ এই বর্ষায় কতটা জল হয়েছে তা মাপতে যাচ্ছিলাম। অমলকাকা আমার বাবার চেয়ে সামান্য ছোটো, মদনপুরের মাজদিয়া গ্রামে বাড়ি। আদ্যন্ত চাষিবাড়ি। এই বাড়ির আগের প্রজন্ম তো বটেই, আমাদের প্রজন্মেরও কেউই চাষের বা চাষের সহযোগী কাজ ছাড়া কিছু করে না। অমলকাকার দাদা ধুনা জেঠু বছর কয়েক আগে মারা গেছেন ক্যানসারে, তার ছেলেরা, রিন্টুদা আর মিঠু — তারাও চাষী। অমলকাকার ছেলেরা — প্রণব আর প্রভাস — তারাও চাষের কাজের বাইরে টিঁকতে পারে না। এই ছিল দস্তুর। সেদিন দেখা হতেই অমলকাকা প্রথমেই বললেন, বিলের ধারের জমিতে এবারে তো কলা ছাড়া কিছু লাগাতে পারিনি। এই দিকের জমিতে এসো। কটা ঝিঙে নিয়ে যাও। এই এতবড়ো ঝিঙে হয়েছে। অমলকাকারা শুধু চাষি নয়। গর্বিত চাষি। মাজদিয়ায় অনেক চাষিঘর আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা চাষি এই পরিবারটি। বেশ কয়েক বিঘে জমি আছে।
ছেলে আর ভাইপোকে নিয়ে আলপথ দিয়ে জমিতে যেতে পারবো না, তাই রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে কথা বলতে হলো। অমলকাকার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। কিডনিতে গোলোযোগ ধরা পড়েছে। প্রথমেই খবর দিল, ছোটোছেলে প্রভাস চলে গেছে মালয়েশিয়া, একমাস হলো। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। আসবে কবে? তিন বছরের আগে নয়, সেরকমই বলেছে সেদিন ফোন করে। কিসের কাজে গেল? ওই লেবারের। এখান থেকে আর কেউ যায়নি? গেদের থেকে আরো চারজন গেছে। একসাথে। ‘এই তো আমরা সবাই মিলে এয়ারপোর্টে প্লেন-এ তুলে দিয়ে এলাম। রাত দেড়টায় প্লেন। প্রণবের ছোটো মেয়েটা কলকাতা যাওয়ার পথে ট্রেনে বমি করতে লাগলো, তখন প্রণব বৌ মেয়েকে মাঝরাস্তা থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিল।’
বছর তিনেক আগে আমার মাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছিল অমলকাকারা — ছেলেটার কলকাতায় যদি কিছু কাজের ব্যবস্থা হয়। ভারী কাজ না হয়ে যদি অফিসের কোনো কাজ হয় ভালো হয়। আমি বাড়ি গেলে প্রভাসের সঙ্গেও আমার দেখা হয়েছিল। ও বলেওছিল আমাকে। আমি ওকে পাল্টা বলেছিলাম, পারিবারিক চাষের কাজেই লেগে থাকতে। ও আর কিছু বলেনি। কেউ কিছু বলতে এলেই তাকে ধরে জ্ঞান দিয়ে দেওয়ার অভ্যেসটা বেশ রপ্ত করেছি।
অমলকাকা বলল, প্রভাস মাঝখানে বোম্বে গেছিল কাজে, ক-মাস ছিল, বারো চোদ্দ হাজার টাকা পেত। তা দিয়ে আর কী হয়? প্রণবও কয়েক মাস বাড়ির পাশের শহর কল্যানীর একটা কারখানায় কাজ করেছিল — পোষায় নি। ফের ফিরে এসেছে চাষের কাজে। পরিবারের একটা ছেলেকে চাষের বাইরে কাজ করে কাঁচা টাকা রোজগার করে বাড়িতে পাঠাতে হবে — এই বোধ বেশ কয়েক বছর ধরেই হয়েছে এই সফল চাষি পরিবারটির। সম্ভবত ধুনা জেঠুর ক্যানসারের পর থেকেই। জলের মতো টাকা খরচ করেও পরিবারের কর্তাকে বাঁচানো যায়নি।
ধুনাজেঠুর দাদা মনাজেঠু অবশ্য বহুদিন আগেই বাড়ি ছেড়ে শহরবাসী — পরিবারের থেকে একটু আলাদাই। অমলকাকার আরেক ভাই ভাবুকাকাও অকালে মারা গেছেন জটিল কোনো এক রোগে। যুব কংগ্রেস করতেন, মমতাকে মদনপুরে এনেছিলেন তখন আমি স্কুলে পড়ি।
বলতে বলতেই অমলকাকা বলে ফেলল, তার শালাই সব ব্যবস্থা করেছে প্রভাসের মালয়েশিয়া যাত্রার। সে কাতারের দোহাতে কাজে গেছে। মাস গেলে নব্বই হাজার টাকা এক লাখ টাকা পায়। ইলেকট্রিকের কাজ জানে, লেবার নয়। ‘মাঝখানে তো ভেতরে ছিল, বেরোতেই আবার চলে গেছে’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় ছিল? ‘ওই কৃষ্ণনগরে মনে হয়। নকশাল করত তো।’
sriman chakraborty says
riportir opor follow up dorokar ebang gram bangla krishi Onaanoo bisayer sathe er joggulio dhara darkar
mitra Chatterjee says
Khub bastob ekta chhobi…nagod taka chhara chikitsa asambhob..shramik, .chasi der cash less med insuranceer kono subandobasto ajo keo bhabe ni..