শমীক সরকার, ২২ মে#
১৫ মে রবিবার আমরা ছয় জন মিলে সাইকেলে ঘুরলাম সকালে, দক্ষিণ কলকাতায়। যাদবপুর এইটবি বাসস্ট্যান্ডে সকাল ৬ টার সময় দেখা করে তারপর নেতাজিনগর হয়ে গড়িয়া হয়ে চলে গেলাম নরেন্দ্রপুর। তারপর নরেন্দ্রপুরে মন্দির সংলগ্ন এলাকা একটু ঘুরে ফিরে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস হয়ে এলাম অজয়নগর। সেখান থেকে গড়ফার ভেতর দিয়ে পালবাজারে শেষ আমাদের সাইকেলে ঘোরা। ততক্ষণে ঘড়িতে ন’টা। রোদ বেশ চড়ে গেছে। সত্যি বলতে কি শেষ আধঘন্টা বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল রোদে সাইকেল চালাতে।
আমরা ছ’জন বলতে — রঘু (মানিকতলা থেকে এসেছিল), আমি, শ্রীমান, ধীমানদা, সুপর্ণা, সুরজিত (সরশুনা থেকে এসেছিল)। বাকিদের ঘর এই হালতু পালবাজার গড়ফা ঢাকুরিয়া এলাকাতেই।
প্রথমেই বলি, এই সাইকেল যাত্রায় যা ‘আবিষ্কার’ করে খুব ভালো লাগলো আমাদের — রাণিকুঠির দিকে যেতে গান্ধী কলোনিতে একটি গলিরাস্তার মুখে চোখে পড়ল একটা লোহার পাতে প্রিন্ট করা পোস্টার বোর্ড — ‘এই রাস্তায় চার চাকার ঢোকা নিষেধ’। বড়ো রাস্তায় পুলিশের সাইকেল ধরার সময় আমরা বন্ধুবান্ধবরা বারবার বলাবলি করেছি নিজেদের মধ্যে — এইবার কিন্তু আমরা গলিরাস্তায় চারচাকা ঢোকা নিষেধ করে দেবো। এখানে কলোনিবাসীরা এই পোস্টার টাঙিয়েই দিয়েছেন।
আমাদের কলকাতার গলিরাস্তায় তো কোনো ফুটপাথ নেই। ফলে সেই গলিরাস্তায় পথচারীদের খুব সমস্যা হয় চারচাকা চললে। গলিরাস্তা খুবই অনিরাপদ হয়ে যায় মানুষের জন্য। কিন্তু এখন সব জায়গায় ফ্ল্যাট। সেই ফ্ল্যাটে গ্যারেজ আছে অথবা নেই। থাকলে সেই গ্যারেজের গাড়ি রোজ গলি দিয়ে ঢোকে বেরোয়। গাড়ি খুব বেড়েছে। গলি জুড়ে গাড়ি স্ট্যান্ড করেও রাখা হয়।
গলি রাস্তায় সত্যি সত্যি চারচাকা নিষিদ্ধ করে দেওয়া যায় না? বড়ো রাস্তায় গ্যারেজ (শুধু গ্যারেজ) তৈরি করে সেখানে গাড়িগুলো রেখে রিক্সা করে সাইকেল করে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে আসার বন্দোবস্ত করলে হয় না?
অবশ্য তার থেকেও মৌলিক প্রশ্ন : এত প্রাইভেট চারচাকা কেন?
যাই হোক, নরেন্দ্রপুরে গিয়ে আমরা একটা বটগাছতলায় বসলাম খানিক্ষণ। তার আগে কামালগাজির কাছে টিফিন খেয়ে নিয়েছিলাম, চা আর কেক। সুরজিৎ কিচ্ছু খেল না। বাইপাস দিয়ে ফিরতে গিয়ে দু-একটা জিনিস দেখলাম। এক, বিগ বাজারের কাছে যে দোকানদার হকারদের হটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের জন্যই সম্ভবত, একটা বাজার বানানো হচ্ছে, ছোট্ট ছোট্ট খুপরি খুপরি জায়গা। বুঝলাম, পরে খোঁজখবর নিতে হবে। দুই, গড়ফা থানার কাছে যে নতুন রাস্তাটা তৈরি হয়েছে খালের পাড় দিয়ে, সেখানে রাস্তা একেবারে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে খালের বাঁধানো পাড়ের সঙ্গে। একফোঁটা মাটি নেই। ধীমানদার বাড়ি ওইখানেই। উনি বললেন, এই রাস্তা বের করতে গিয়ে অনেক গাছ কাটা হয়েছে। উনি বারণ করেছিলেন, কেউ শোনেনি। বুঝলাম, এটাও ভালো করে খোঁজ নিতে হবে ধীমানদার কাছ থেকে।
সকালে সাইকেল নিয়ে স্থানীয়ভাবে ঘুরতে যাবার বিষয়টা বেশ মজার, এবং একই সাথে অনেক কিছু দেখাও যায়। যদি অবশ্য দেখার ইচ্ছে থাকে।
Leave a Reply