• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

মান্নাপাড়ার ভরের বুজরুকি বন্ধ করে দিলো স্থানীয় মানুষ

December 18, 2015 Alokesh Mondal 1 Comment

অলকেশ মন্ডল, ৮ ডিসেম্বর#
গত আড়াই বছর ধরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার উস্তি থানার অযোধ্যানগরের মান্নাপাড়ায় ধীরেধীরে গড়ে উঠেছে একটা মায়ের পীঠস্থান। মা মনসা প্রতিদিন সেখানে আসেন এবং পীঠস্থানের প্রধান কর্মকর্তা পবন পোড়েল এর ওপর ভর করেন। তারপর আগত কৃপাপ্রার্থীর যাবতীয় সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়। এই ভর-এ হঠাৎ করে মাথা ঝাঁকিয়ে মনসার আবির্ভাব হয় এমনটা নয়। অথবা ঠাকুরের ফুল-বেলপাতা কিংবা জলপড়া-তেলপড়া দেওয়া হয় এমনটাও নয়। ডাক্তারের চেম্বারের মতো এক এক করে ডেকে নেওয়া হয়। সামান্য প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে। তারপর একটা জবাফুল মনসা মুর্তির পায়ে ঠেকিয়ে নিয়ে মোবাইলের মত কানের কাছে ধরে স্বর্গ থেকে পাঠানো নির্দেশগুলো শুনে নিয়ে মানুষকে তার সমস্যার সমাধান বলে দেন পবন পোড়েল। রোগ-ব্যাধি থাকলে ওষুধ দেওয়া হয়। জানা গেছে আতপ চাল, জোয়ান, আলুই পাতা ইত্যাদি সাধারন জিনিষের সাথে ব্যথার, এন্টিবায়োটিক এবং ষ্টেরয়েড ট্যাবলেট মিক্সিতে একসাথে গুঁড়িয়ে সাদা পাউডার তৈরী করা হয়। তারপর পুরিয়াতে ভরে দেওয়া হয়। কাউকে খেতে বলা হয় আর লাগাতে হলে সেই পাউডার হয় জল কিংবা তেল দিয়ে রোগাক্রান্ত জায়গায় লেপে দেওয়ার বিধান। লোকে বলছে এতে তাদের ভালো হচ্ছে।
দেখাদেখি ক্রমশঃ লোকজনের যাতায়াত বেড়েছে। কলকাতা থেকে ডায়মন্ডহারবারগামী রাস্তায় আমতলার কাছাকাছি ‘মাদ্রাসারঠেস’ বাসস্টপ এখন সুপরিচিত জায়গা হয়ে উঠেছে। এখান থেকে পূর্বদিকে দুই কিলোমিটারের মত গেলেই অযোধ্যানগর গ্রামের মান্নাপাড়া। আশেপাশের গ্রাম থেকেও ভালোই লোকের আসা যাওয়া চলছে। লোক নিয়ে আসার জন্য দালালচক্রও তৈরী হয়েছে। লোকজন জুটিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ইঞ্জিন ভ্যান, মারুতি বা টাটাসুমো ভাড়া করেও বেশ কিছু মানুষ নিয়মিত আসছেন। এদিকে মন্দিরে প্রায়ই কিছু না কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়ে চলেছে। আগের ছোটো টিনের চাল আর নেই। এখন লম্বা চূড়োওয়ালা রঙচঙে মন্দিরে পরিণত হয়েছে। আগত ভক্তদের জন্য মাথার ওপর পাখা, পানীয় জল, বাঁধানো টয়লে্‌ট, পা ধোবার ব্যবস্থা- কিছুরই অভাব নেই।
সবটাই রাস্তার ধারে হলেও পাঁচিলের ভেতরে। বাইরে থেকে সবটা দৃশ্যমান নয়। হালফিল গেটের ডানদিকে পবন পোড়েলের চার কামরার বাড়ীটা দোতলার ছাদ বানিয়ে আট কামরার হলো। বাড়ীতে ছোটো বড় মিলে জনা দশেক সদস্য। প্রায় সবাই এই মন্দির, ভর ও তৎসংক্রান্ত কাজেই ব্যস্ত থাকে। ঘটনার আগে অবধি একটা সাইনবোর্ড সকলের নজর কাড়ছিল। নতুন মন্দির নির্মানের জন্য শুধু নয়, স্কুল, অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম এবং এমবুলেন্সের জন্য মোট পাঁচ কোটি ষাট লক্ষ টাকা মুক্তহস্তে দান করার আবেদন রয়েছে ওই সাইনবোর্ডে।
বাইরে থেকে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শো জন লোক হাজির হয় মনসার থানে। একেবারে অসুস্থ মানুষকেও ষ্টেচারে শুইয়ে আনতেও দেখা গেছে। কিন্তু অযোধ্যানগর গ্রামের মানুষের কোনো আস্থা তৈরী হয়নি এই পীঠস্থানের ওপর। আর সমস্যাটা সেখানেই। এমনকি গ্রামের ধর্মভীরু বিশ্বাসী লোকজনদেরও সেখানে ঠাঁই মেলেনি। উল্টে নানাপ্রকার গঞ্জনা দিয়ে ও ঐশ্বরিক ক্ষমতার ভয় ভীতি দেখিয়ে গ্রামের মানুষের সাথে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে ওই পবন পোড়েল। অন্যদিকে বার বার মা মনসা ওরফে পবন পোড়েলের কথামতো মন্দিরে এসেও যাদের সুরাহা হয়নি তারা শেষ পর্যন্ত অনেকেই মুখ খুলেছে গ্রামের মানুষের কাছে। অল্পদিনের মধ্যে পবন পোড়েলের আর্থিক উন্নতি মানুষকে ভাবিয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় চিন্তাচ্ছন্ন মন প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করতে সাহস দেখায়নি। তবুও আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ওই মানুষগুলোর কথা ভেবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে গ্রামের হিন্দু-মুসলিম মিলিত জোট সাহস করে থানায় অভিযোগ জানায়। সর্বত্র যা ঘটে এইখানেও তাই হয়েছে। থানা গ্রামবাসীদের অভি্যোগকে গুরুত্ব দেয়নি, বরং পয়সাওয়ালা পবন পোড়েলের পক্ষ নিয়েছে।
ঈশ্বরবিশ্বাসকে পাথেয় করে মানুষকে সর্বস্বান্ত করলেও গ্রামবাসীরা পবন পোড়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হননি। বরং মানুষের চেতনাকে সমৃদ্ধ করে অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে একজোট হতে সংকল্প করে। শেষ পর্যন্ত গ্রামের প্রতিবাদী যুবক ইসরাফিল সেখ অন্য যুবকদের সাথে নিয়ে গ্রামের মানুষ এবং মনসার থানে আসা লোকজনকে সচেতন করতে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির শরণাপন্ন হয়। এক বৃষ্টিভেজা দুপুরে পবন পোড়েলের প্রধান ফটকের সামনেই ত্রিপল টাঙিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জনরোষের আন্দাজ করে পবন পোড়েল সেই দিনেই বাড়ির চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানোর তোড়জোড় করে। এদিকে সমিতির ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ অনুষ্ঠানে ওঝা-গুনিনের কারসাজি, মন্ত্র-তন্ত্রের বুজরুকি, ভরের বুজরুকি কিভাবে হয় তার প্রদর্শণী ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এমনকি জ্যান্ত সাপ দেখিয়েও সচেতন করার প্রয়াস নেওয়া হয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছোট বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ এবং সব বয়সের মহিলারা বিপুল আগ্রহ নিয়ে অনুষ্ঠানটি দেখেন। মন্দিরে আগতরাও কৌতুহলবশত দাঁড়িয়ে পড়েন। লিফলেট সংগ্রহ করেন। অনুষ্ঠান শেষে বিষ্ণুপুরের প্রতিভা নগরের বাসিন্দা উর্মিলাদেবী মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে পবন পোড়েল কিভাবে গত দেড় বছরে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এবং কিভাবে তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত যুবতী মেয়েকে তিলে তিলে মেরে ফেলেন তার করুন বর্ননা দেন।
মানুষের অভাব কিংবা অজ্ঞতার সুযোগে পবন পোড়েলের মত ধান্দাবাজরা কিভাবে গুছিয়ে নেয় তা পরিস্কার হয়ে যায়। এই অনুষ্ঠানের পর কিছুটা ভরসা পেয়ে গ্রামের মানুষের সই সংগ্রহ করে ও মন্দিরে এসে যারা ধনে-প্রাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের সাথে নিয়ে আবার নতুন উদ্যোগে থানায় অভিযোগ করা হয়। পালটা আভিযোগ দায়ের করে পবন পোড়েল। তাতে ইসরাফিল ও আরো জনা দশেক মুসলিম পরিবারের যুবককে হিন্দু-ধর্মবিরোধী বলে ব্যপারটাকে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ধর্মমত নির্বিশেষে সকলের মিলিত প্রতিবাদে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিপুল জনসমর্থনের ফলে প্রশাসন উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়। অবশেষে থানায় বসে মীমাংসা হয়। ভবিষ্যতে আর কোনদিন ওই মন্দিরে ভর হওয়া কিংবা ওষুধ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মন্দিরের বিগ্রহ পুজোতে কোনও আপত্তি কেউ করেনি। ধর্মীয় বুজরুকির বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের লড়াইয়ের এই সাফল্যে এলাকা এখন খুশির মহল।
এই অসম লড়াইতে গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তার মধ্যে যারা সামনের সারিতে ছিলেন তারা হলেন সনাতন মান্না, কালিপদ মান্না, ইসরাফিল সেখ, সুশান্ত মান্না, ইসাহক সেখ, সুচন্দন ঘোষ, ওহায়েদ সেখ, শঙ্কর সাঁতরা, রাজু সাঁতরা, সুব্রত মান্না, মমতা ঘোষ, প্রশান্ত ঘোষ, ছবিরানী ঘোষ, সুলেখা ঘোষ, কার্তিক সাঁতরা, বিমল সাঁতরা, রাজু মান্না, কুতুবউদ্দিন সেখ, ছোটু সেখ, সন্টু সেখ, অমিত ঘোষ, পশুপতি ঘোষ, নুদা সেখ, ভোলা সেখ, তুষার কান্তি ঘোষ, মিলন নস্কর, রানা সেখ, সাকিল সেখ, দীপঙ্কর মান্না, মাসুদা সেখ ও পাঁচু ঘোষ।
সবার উপরে মানুষ সত্য- আবার প্রমানিত হল।

সংস্কৃতি বুজরুকি, ভর, মান্নাপাড়া, যুক্তিবাদী

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Comments

  1. Tapan Chanda says

    January 31, 2016 at 8:50 pm

    Likes

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in