প্রতি বিশ্বনাথ প্রসাদ তিওয়ারী,
সভাপতি,
সাহিত্য আকাদেমি, নয়া দিল্লি
খুব দুঃখের সঙ্গে আপনাকে এই চিঠি দিচ্ছি। আপনি জানেন যে আমি গত চার দশক ধরে সাহিত্য আকাদেমির সাথে নানা ভাবে যুক্ত। কখনো মালায়লম অ্যাডভাইসারি বোর্ড এর সদস্য হিসেবে, তার পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে। এক দশক ধরে ইন্ডিয়ান লিটারেচার এর মুখ্য কর্মকর্তা হিসেবে। পরে এর জেনারেল কাউন্সিল এর সদস্য ও এক্সিকিউটিভ বোর্ড এর সদস্য হিসেবে।
আমি এই অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গর্বিত ছিলাম। যার মূল ভাবনা মহান উদারবাদী চিন্তাবিদ জওহরলাল নেহরুর। এবং ইংরেজি অ্যাডভাইসারি বোর্ড সদস্য হিসেবে। এবং যা সমৃদ্ধ হয়েছে আরো অনেক চিন্তাবিদের দৌলতে।
আমি বরাবর চেষ্টা করেছি, একটি স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন ভাবধারার লেখকদের মধ্যে সংলাপের একটি আধার হিসেবে আকাদেমিকে চালানোর জন্য। আমি খুশি যে আমি যখন এর সম্পাদক ছিলাম, তখন মহিলা লেখক, দলিত লেখক, ট্রাইবাল লেখক, এবং যুব লেখকদের জন্য কিছু বন্দোবস্ত করেছিলাম। এবং এর কার্যকলাপের সীমা বিস্তৃত করেছিলাম সেইসব ভাষাতে, যেগুলি ভারত সরকার এবং আকাদেমি কর্তৃক স্বীকৃত নয়। আকাদেমির কার্যকলাপ এর সীমা বিস্তৃত করার আমার প্রয়াসগুলি সংস্থার বিভিন্ন সভাপতি অনুমোদন করেছিলেন, যাদের মধ্যে একজন স্বনামধন্য ইউ আর অনন্তমূর্তি। আকাদেমির ইতিহাসে সেই সব গর্বের মুহূর্ত — যখন ভারত সরকারের লেখকের স্বাধীনতার কন্ঠরোধকারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আকাদেমি গর্জে উঠেছে।
আমি আশা করেছিলাম, আকাদেমি তার এই উদারবাদী, উন্মুক্ত, এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য বজায় রাখবে। এই প্রত্যাশা থেকেই আমি আমার উদ্বেগ জানিয়ে আপনাকে চিঠি দিয়েছিলাম — আকাদেমি পুরষ্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক এবং আকাদেমির প্রাক্তন সদস্য এম এম কুল্বার্গি-র নৃশংস হত্যা সম্পর্কে। তিনি ছিলেন একজন বিরল পণ্ডিত, কন্নড় বচন সাহিত্যের বহু খণ্ড সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা মানুষ, যে কোনো ধরনের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু আমি অত্যন্ত হতাশ হয়ে দেখলাম, আকাদেমির এক্সিকিউটিভ বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে আমার চিঠির কোনো উত্তর পর্যন্ত দিল না আকাদেমি, নড়েচড়ে বসা তো দূরের কথা।
দুঃখের সঙ্গে দেখছি, ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে লেখকদের সাথ দেওয়ার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হচ্ছে আকাদেমি। এবং এই স্বাধীনতা সাম্প্রতিক কালে ভীষণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সারা দেশ জুড়ে যখন স্বাধীন চিন্তকদের একের পর এক হত্যা করা হচ্ছে, সেই সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নেমে আসা আঘাতের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিবাদ জরুরি। তার তুলনায় আকাদেমির একটি প্রাদেশিক অফিসে একটি নাম-কা-ওয়াস্তে কুল্বার্গি স্মরণ-সভা একটি নগণ্য পদক্ষেপ। আমার খুব খারাপ লেগেছে একথা শুনে যে আপনারা এটাকে একটি ‘রাজনৈতিক ইস্যু’ বলে ভেবেছেন; আমার মতো লেখকদের কাছে এ হলো বেঁচে থাকা, চিন্তা করা এবং লেখালেখির মৌলিক স্বাধীনতার মতো বিষয়। গণতন্তের প্রাণশক্তি তর্ক, খতম দিয়ে তাকে প্রতিস্থাপিত করা উচিত নয়।
আকাদেমিকে ধন্যবাদ, বহু বছর ধরে তাকে সেবা করার জন্য সে আমায় অনেক কিছু দিয়েছে। কিন্তু তার জেনারেল কাউন্সিল এবং এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে আমি আর পারছি না। একজন সচেতন নাগরিক এবং সাহিত্যিক হিসেবে আমার বিবেক আমায় বাধা দিচ্ছে। তাই আমি সাহিত্য আকাদেমির সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আমি ইংরাজি অ্যাডভাইসরি বোর্ড থেকে পদত্যাগ করছি। ফাইনান্স কমিটি থেকে শুরু করে গ্রান্টস কমিটি এবং বিল্ডিং কমিটি থেকেও পদত্যাগ করছি।
উষ্ণ ব্যক্তিগত অভিনন্দন সহ
প্রফেসর কে সচ্চিদানন্দন, সিমলা
চিঠিটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন শমীক সরকার#
Leave a Reply