সংবাদমন্থন প্রতিবেদন। ১৮ অগাস্ট, ২০২০।#
মহামারীর বাজারে এখন গণউদ্যোগের জোয়ার। সচেতনতার বার্তা দিতে টি.ভি., রেডিও, টেলিকম সার্ভিস, প্রশাসন, ক্লাব, পুজামন্ডপ, ঠাকুরবাড়ি, এন.জি.ও.- সক্রিয়তায় ফাঁকি রাখছেন না কেউ। এদিকে বাজারে এখন মাস্ক, স্যানিটাইজার, ফেস শিল্ডের বিক্রিবাটা ব্যাপক। এতদিন রাজনৈতিক নেতারা নিজ নিজ দলীয় প্রতীক মাস্কে এঁকে আত্মসচেতনতার বার্তা দিয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বাজারে তেরঙা মাস্ক আসতেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হুড়িয়ে প্রতিবাদ, এভাবে থুতু কফ সর্দি শ্লেষ্মা তেরঙা নিশান থুড়ি মুখোশে লেগে গেলে দেশদ্রোহীতার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। আর এর মধ্যেই ১৫ই সকালে পাড়ায় পাড়ায় অলিতে গলিতে ক্লাবে লবিতে বন্ধ স্কুল কলেজে রেলস্টেশনে বেজে উঠল স্বাধীনতার নহবৎ। যারা ছুটিতেই ছিলেন কিম্বা যাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তারাও এই পাওনা ছুটির ময়দানে গোল্লাছুট খেলে নিলেন।
তিয়াত্তর বছর আগে যখন মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা তুলে দিচ্ছেন নেহেরুর হাতে, র্যাডক্লিফ লাইনের এপারে ওপারে তখন হন্যে হয়ে নিজের দেশ খুঁজছেন অগণিত মানুষ। এই অযাচিত বিড়ম্বনায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে বাংলা আর পাঞ্জাবের মানুষকে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই ঘা আজও দগদগে হয়ে আছে এই দুই প্রদেশের জনমানসে। বাংলার মুর্শিদাবাদ ও তৎকালীন অবিভক্ত নদিয়ার বেশিরভাগটাই প্রাথমিক হিসেবে পড়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে, যার মধ্যে ছিল শান্তিপুরও। পরে কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদে ও রাজনৈতিক মহলে জাতধর্মের পিঠেভাগে শান্তিপুর সহ নদিয়ার সিংহভাগ ও মুর্শিদাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭ই অগাস্ট এই ঘোষণা হতে পরদিন ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন শান্তিপুরের মানুষ।
সাত দশক পরে সেই ইতিহাসের হাওয়ায় তেরঙা মেলে ধরতে বিগত বেশ কয়েক বছরের মত এবছরেও ১৮ অগাস্ট দিনটিকে পালন করেন শান্তিপুরের কিছু বিশেষ সংগঠন ও ব্যক্তি, ডাকঘর মোড়ে নেতাজীর মূর্তিতে মালা পরিয়ে আর ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে। অনেক মানুষ এই কলঙ্কের স্মৃতিকে উদযাপন করার তীব্র প্রতিবাদও করেন। যেমন মূকাভিনয় শিল্পী রূপায়ণ চৌধুরী বলেন,
যাদের জন্ম সেদিন তাঁরা আজ শুধু কি প্রচারের জন্য নিজেদের ইচ্ছে মতন জাতীয় পতাকা ব্যবহার করছেন । শান্তিপুরের সুসন্তান কবি করুণানিধান নিশ্চয় সেই বছরই মারা যান নি, তবে কি উনি পরের বছরেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন ১৮ তারিখে? এই অসভ্য উদ্দীপনা শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর। তার আগে তো দেখি নি পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র, কাশীকান্ত মৈত্র, সুবল মৈত্র, অজিত স্মৃতিরত্ন, প্রভাস রায়, অসমঞ্জ দে,কানাই পাল,পূর্ণেন্দু নাথ ১৫ আগস্ট এবং ১৮ আগস্ট দুদিনই জাতীয় পতাকা তুলে স্বাধীনতা পালন করেছিলেন ? তার মানে ওনারা বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখান নি ? কোন কলেজ, স্কুলও উদযাপন করেন না । আমার প্রশ্ন সঠিক কে বা কারা ! এই জাতীয় পতাকার এই অবমাননা বন্ধ হওয়া উচিত। সাংবাদিক বন্ধুরা লজ্জাজনক ইতিহাসকে তুলে ধরুন। এটা কোন দেশপ্রেম নয় ।
আবার দল খালসা, শিরোমণি আকালি দল, রাষ্ট্রীয় মুসলিম মোর্চা, বহুজন ক্রান্তি মোর্চা, শিখ ইউথ ফেডারেশনের মত অনেক গুলি শিখ ও গনতান্ত্রিক অধিকার সংগঠন জলন্ধর, হোশিয়ারপুর সহ পাঞ্জাবের নানা জায়গায় ১৫ ই আগষ্টে কালা দিবস পালন করলো। তাদের প্রতিবাদের বিষয় গুলি ছিল – ভারতে শিখ ও অন্য সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, কাশ্মীরের মানুষের উপর সর্বাত্মক আক্রমণ, UAPA, NIA ইত্যাদি দিয়ে গনতান্ত্রিক প্রতিবাদীদের দমন ও পাঞ্জাবের কিছু স্থানীয় সমস্যা। রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী যথারীতি অনতিবিলম্বেই তাদের গ্রেপ্তার করে জলন্ধর থানায়।
Leave a Reply