জিতেন নন্দী। কলকাতা। ২১ ডিসেম্বর, ২০২০।#
সাই সংকেথ বি কে কর্ণাটকের কোডাগু জেলার মাদিকেরি শহর থেকে একটা মোটরবাইকে চড়ে কালিম্পঙ জেলার চুইখিম গ্রামে আসেন। সেখানে ‘কর্পোরেট ত্যাগী’ কিছু যুবক গ্রামের মানুষের সঙ্গে একযোগে নতুনভাবে কিছু কাজ করার চেষ্টা করছেন। সংকেথ ২৫০০ কিলোমিটার পথ ১০ দিন একটানা বাইক চালিয়ে এখানে এসে পৌঁছান। তিনি বাঙালোরের এক সফটওয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেট সংস্থায় কাজ করতেন। ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট সেই কাজে যুক্ত হন। দু-বছর পর সেই চাকরি ছেড়ে দেন। ওঁর সঙ্গে হঠাৎ ১৩ ডিসেম্বর দেখা হল চুইখিম গ্রামে। সংকেথের বক্তব্যটা ছিল এরকম :
কর্পোরেট চাকরির সঙ্গে জীবনের ভারসাম্য রাখতে পারছিলাম না আমি। কোম্পানি চাইত হামেশা সংকেথ কোম্পানিকে নিয়েই ভাববে। দিনেরবেলা কাজের পর আবার রাতে আমায় ওই কোম্পানির ইউএস শাখার সঙ্গে অনলাইন মিটিং করতে হত। চাকরি ছেড়ে দিলাম। যখন ছাড়লাম খালি মনে হত অন্য কিছু একটা করি। কিন্তু কী করব? যতক্ষণ সেটা ভেবে উঠতে পারিনি, ভাবলাম এমটেক করে নিই। এমটেক পড়া শুরু করলাম। এর মধ্যে এসে গেল করোনার সংক্রমণ। কিছুদিন পর অনলাইন ক্লাস শুরু হল। আমি বাঙালোরের কাছেই আমার বাড়িতে ফিরে চলে এলাম। আমি দেখছিলাম করোনা কীভাবে সারা পৃথিবীকে গ্রাস করছে। দেখলাম, দুনিয়াজোড়া চালু ব্যবস্থাটা এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারছে না। যদি লোকে সহনশীলভাবে আর নিজের নিজের জায়গায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত, বাকি দুনিয়ায় যাই ঘটুক না কেন করোনা আমাদের এইভাবে আঘাত করতে পারত না। আগে থেকেই এরকম কিছু আমার মনে হচ্ছিল। সেই লক্ষ্য নিয়েই এখানে চুইখিমে এলাম।
চুইখিম গ্রামের বাচ্চাদের গান
গানের কথাগুলি ছিল এরকম : চুইখিম হামরো গাঁও হো/হামরো ভবিষ্য ছন এহাঁ/ইয়ো গাঁও কো মা জমা গীতা/গাও দে সু শিকারি দেও/হামরো যো গীতা/অজু লাই মিনতি ছা/ হো হো হো …
বাঙালোরে একজন থাকে যে এখানকার একটা মিউজিক ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। গাওলে ভাই নামে একজন নেপালি ভাষায় গান করে। কিন্তু ওর গানগুলো আধুনিক, বেশ ভালো ব্যান্ড। ওর দুই ভাই ওখানে থাকে, যাদের একজনের সঙ্গে আমার দেখা হয় বাঙালোরে। ওরা একটা বিড়ালের বাচ্চার প্রাণ বাঁচিয়েছিল। তিন মাস ওরা বাচ্চাটাকে সঙ্গে রেখেছিল। তারপর আমার এক বন্ধুর বাড়িতে ওকে রাখতে আসে। সেখানে আমি ছিলাম। আমি সেই বিড়াল বাচ্চাটাকে ওদের কাছ থেকে নিই। ওখানেই ওদের সঙ্গে সহনশীল উন্নয়ন আর সহনশীল জীবনধারা নিয়ে আমার আগ্রহ সম্বন্ধে কথা হল। ওরাই বলল, কালিম্পঙের আশপাশে এরকম বেশ কিছু কাজ হচ্ছে, তুমি দেখতে পারো। আমি চলে এলাম।
বাড়িতে মা আমার একমাত্র অভিভাবক। কিন্তু আমার সঙ্গে বন্ধুর মতো খোলামেলা সম্পর্ক। আমার এখানে আসার কথা শুনে প্রথমে মা সামান্য আপত্তি করেছিলেন — এরকম চলে যাবি, কীভাবে রোজগার করবি? আমি মাকে বোঝালাম, এটাই ভালো। আজকের দিনে এরকম জীবনের প্রয়োজন। আমি যেটুকু পয়সা জমিয়েছি তাতে এখন চলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে কিছু উপার্জন করব। মা একটা চাকরি করেন। ছোটো ভাইও কলেজ শেষ করে এখন কিছু করার চেষ্টা করছে।
লকডাউন আনলক হওয়ার পর এক মাস বাঙালোরে ছিলাম। তারপর পনেরো দিন আগে এখানে চলে এলাম। এই কদিনে এখানে দেখেশুনে আমার বেশ উত্তেজিত লাগছে।
Leave a Reply