কল্লোল রায়। ব্যারাকপুর। ১২ অগাস্ট, ২০২০।#
আজ দশম দিন ১২.০৮.২০২০, হরিদ্বারের মাতৃসদন আশ্রমে অনশন করছেন আশ্রম প্রধান স্বামী শিবানন্দ সরস্বতীজী।
১৯৯৭ – ১৯৯৮ সালে মাতৃসদন আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর, কুম্ভ ক্ষেত্রে (পুরাণে বর্ণিত কুম্ভ মেলা অঞ্চল ) পাথর ভাঙার খাদান ও অবৈধ খনন বন্ধ করা এবং গঙ্গা নদী দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করার দাবীতে গুরুজী শিবানন্দ সরস্বতীর অনুমতি নিয়ে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাস থেকে স্বামী গোকুলানন্দ সরস্বতী এবং গঙ্গাপুত্র স্বামী নিগামানন্দ সরস্বতীর প্রথম অনশন শুরু হয়। এরপর এই মাতৃসদন আশ্রম থেকে গত ০৩.০৮.২০২০ এর আগে পর্যন্ত গঙ্গার অবিরলতা ও নির্মলতা নিয়ে, কুম্ভক্ষেত্রে পাথর খাদান ও অবৈধ খনন বন্ধ করা নিয়ে, উত্স মুখ থেকে গঙ্গার হিমালয় অঞ্চলের উপনদীসহ নদী প্রবাহে সমস্ত রকম বাঁধ, জলবিদ্যুত্ প্রকল্প বন্ধ করার দাবীতে, “গঙ্গা আইন” প্রণয়নের দাবীতে ও গঙ্গা ভক্ত পরিষদ গঠিত করে অবিরল-নির্মল গঙ্গার নজরদারি ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ৬৩ বার অনশন তপস্যা করা হয়েছে। স্বামী শিবানন্দ সরস্বতীজীর অনশন ৬৪ তম অনশন। প্রতিদিন একবারে ৩০০ মিলিলিটার হিসাবে পাঁচ বারে মোট ১.৫ লিটার জল বর্তমানে গ্রহণ করবেন এবং পরে আস্তে আস্তে এই জলপানের পরিমাণ কমতে থাকবে বলে জানিয়েছেন শিবানন্দজী। আমরা যাকে ক্লেশ মনে করি, মাতৃসদন আশ্রমে সন্ন্যাসীরা তাকে তাদের নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা বলে মনে করেন। কারো কাছে কোনো অভিযোগ নেই। শুধু ‘দেওয়া কথা’র পালন করা, বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষ বা রাজনীতিবিদ কারো ক্ষেত্রেই প্রায় চোখে দেখা যায় না। ভাবা যায়, গঙ্গা নদীকে, পর্বতকে, কুম্ভক্ষেত্রকে তাদের প্রাকৃতিক রূপে বজায় রাখার জন্য একটি আশ্রমের সন্ন্যাসীরা ধারাবাহিক ভাবে ২২ বছর ধরে অনশন, সত্যাগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছেন!
এই সুদীর্ঘ সময়ে গুরুজী শিবানন্দ সরস্বতী বারবার কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, জেলা শাসক, প্রত্যেকের অন্যায় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ আদালতসহ সর্বসমক্ষে জানিয়েছেন।
স্বামী জ্ঞানস্বরূপ সানন্দজীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী (যদি অনশনে তাঁর মৃত্যু হয় তাহলে মাতৃসদন আশ্রম তাঁর তোলা দাবীগুলির সমর্থনে অনশন জারী রাখবেন যাতে উত্তরাখণ্ড রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার তা মেনে নেন) অনশন করছেন আশ্রম প্রধান স্বামী শিবানন্দ সরস্বতীজী। পরবর্তীতে এই কারণে চলতে থাকা ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দের অনশনের সময় সরকারের তরফে মৌখিক প্রতিশ্রুতি এবং পরে ২০১৯ সালের ৫ই মে অনশনের ১৯৪ তম দিনে ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার ডাইরেক্টর জেনারেল রাজীব রঞ্জন মিশ্র নিজে মাতৃসদন আশ্রমে এসে স্বামী সানন্দজীর দাবীগুলি মেনে নেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন, যা এখনো মেনে নেওয়া হয়নি। মূলত: কেন্দ্রীয় সরকার যাতে “অবিরল ও নির্মল গঙ্গার” জন্য তার নিজের দেওয়া লিখিত প্রতিশ্রুতি পালন করে এবং মানুষ যাতে তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িত প্রাকৃতিক ন্যায়ের পালন করে তার জন্য এইবারের অনশন। স্বামী শিবানন্দজী মনে করিয়ে দিচ্ছেন চারটি ন্যায় রয়েছে – ব্যক্তিগত ন্যায়, সামাজিক ন্যায়, সরকারী ন্যায় এবং প্রাকৃতিক ন্যায় অর্থাত্ প্রকৃতি ও পরিবেশের ন্যায়।
আসলে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর ভাগে ছোট-বড় প্রায় সব নদীই হয় গঙ্গা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে নয়তো গঙ্গানদীতে গিয়ে পড়েছে। তাই ছোট নদীগুলির বহমানতা বজায় না রাখতে পারলে গঙ্গা সহ কোনো বড় নদীকেই রক্ষা করা যাবেনা।আমাদের নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে, – গঙ্গা নদী, পর্বত, কুম্ভক্ষেত্র অর্থাত্ সার্বিকভাবে পরিবেশের জন্য সততা, ত্যাগ, তপস্যা, আত্মবলিদানের এই ধারাকে কি করে ব্যাখ্যা করবো, কি করে নিজেদের অন্তরে এই ভাবনাকে চালিত করবো, যা আজকের এই সময়ে যখন সরকারের অসংবেদনশীলতাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Leave a Reply