ছবি ও লেখা — সঞ্জয় ঘোষ, জয়নগর মজিলপুর, ১৩ এপ্রিল#
মজিলপুর মাহিষ্যপাড়ায় বিজয়নগরের গাজন দল গাজন লোকনাটয়ের অভিনয় করার আগে দলের মহিলা বেশধারী পুরুষ সদস্য সহ কিছু সদস্যকে দেখা যাচ্ছে নিচের ছবিতে। আরেকটি ছবিতে মজিলপুর মাহিষ্যপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে নীলের ঘরে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের পৌরহিত্যে গাজন সন্ন্যাসীরা পুজো দিচ্ছে। আর একটি ছবিতে নারকেল পাতা আর চেরা বাঁশের আগর যার ওপর ধান ঝাড়া হয়। এই দিয়েই নীল বা নীলকন্ঠ শিবের অস্থায়ী ঘর তৈরি হয় চৈত্রের শেষ পাঁচদিন গাজন উৎসব পালনের জন্য। আরেকটি ছবিতে একটি কলাগাছের কাণ্ডের অংশ কেটে মাটিতে পুঁতে তার ওপর এক থাবা কাদামাটি দিয়ে তারপর বসানো হয়েছে একটা লাল সরা। এই সরায় কালো পাথরের ছোট্ট শিবলিঙ্গ রাখা হয়। এই শিবলিঙ্গে জল দেবার জল দুধে ডুবিয়ে রাখা হয়। ফুল দেওয়া হয় নানারকম। বিশ্বাস, সূর্য বা শিব কে এইভাবে জলে ডুবিয়ে রাখলে খেত-ও এইভাবে জলে ডুবে থাকবে অর্থাৎ ভালো বৃষ্টি হবে এবং ভালো ফসল ফলবে। এ সেই আদিম যুগের ম্যাজিক বা হোমিওপ্যাথিক সংস্কৃতি যেমনটি আমরা নববর্ষে ভালো কাপড় জামা পড়া বা ভালো খাওয়ার আয়োজন করি এটা বিশ্বাস করে যে তাহলে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে।
এইসময় দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সাত আটটা ব্লকে গাজন বা স্থানীয় ভাষায় দেল লোকনাটকের আসর বসে। মজিলপুরের মতো কোনো গ্রামের এমনকি দশ এগারোটি পাড়ায় পর্যন্ত। এখানে পুরুষরাই সাধারণত স্ত্রী বেশ ধারন করে। হিন্দু মুসলিম খ্রীস্টান সবাই দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই লোকনাটক শুধু দর্শক হিসেবে প্রচুর সংখ্যায় উপভোগ করে তাই নয়, হিন্দুদের সাথে তারা অভিনয় ও গাজন গান লেখায় অংশ নেয়। বাইশ হাটার নজরুলের নাম গাজন গানের লেখক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেই হিসেবে খরার হাত থেকে রক্ষার জন্য সূর্যের কাছে কামনা তো শুধু হিন্দুদের একছত্র হতে পারে না। মহারাষ্ট্রে, তেলেঙ্গানায় সূর্য যখন আগুন ঢালছে সে আগুনে কি শুধু একটি ধর্মের মানুষ বেছে বেছে মারা যাচ্ছে? তাই সূর্যের যেমন জাত ধর্ম নেই, গাজনেরও নেই।
জয়নগর, মথুরাপুর, মন্দিরবাজার, রায়দিঘি, কুলতলি, কুলপি, কাকদ্বীপ, মগরাহাট — এই সাত আটটি ব্লকে গাজন লোকনাটক হয়।
Leave a Reply