শান্তিপুরের জনস্বাস্থ্য পরিষেবা চালু রাখতে জনসমাজ থেকে সক্রিয়তার বার্তা
বাবর আলী। বাগদিয়া, শান্তিপুর। ৩ অগাস্ট, ২০২০।#
নদিয়া জেলার শান্তিপুরের প্রায় তিন লক্ষ মানুষের কাছে চিকিৎসার জন্য একমাত্র নির্ভরস্থল “শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হসপিটাল” বন্ধ হয়ে পড়ে আছে আঠারো-কুড়ি দিন থেকে। দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা যার খোলা থাকার কথা, তা একরকম বন্ধই হয়ে আছে। পৌর এলাকা থেকে শুরু করে ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে প্রায় ১০০ টির কাছাকাছি গ্রামের ২ লক্ষ ৯০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ এখন খুব আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রসূতি বিভাগ, শিশু চিকিৎসা, আউটডোর কার্যত বন্ধ, জরুরি পরিষেবা নাম কি ওয়াস্তে চালু থাকলেও তা মূলত রোগীকে রেফারের কাজটুকুই করছে। যক্ষ্মা রোগীকে সামনে ঔষধ খাওয়ানোর যে কার্যকরী ব্যবস্থা — বন্ধ তাও। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া প্রভৃতি রোগের চিকিৎসাও বিপর্যস্ত। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কিছুদিন আগে এই হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার ও নার্স কোভিডে সংক্রামিত হন, তারপরেই এইরকম অচলাবস্থার পরিবেশ তৈরি হয়। উল্লেখ্য ওই সংক্রমণের রেশ হিসেবে বাকি ডাক্তারদের সোয়াব টেস্ট হয় এবং রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার পরেও এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল চালু হয় নি। এমতাবস্থায় শান্তিপুরের সাধারণ মানুষজন দিনের পর দিন যখন খুব উদ্বেগ ও অসহায়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এবং নানা রাজনৈতিক দলগুলি এর প্রতিকারের জন্য অথবা এই অব্যবস্থা নিরসনের জন্য কিচ্ছুটি না করে ঠুটোঁ জগন্নাথের মতো চুপচাপ বসে আছে, তাই দেখে এখানকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষ, নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা পথে নেমেছেন। তাঁরা হাসপাতাল চালু করার জন্য এবং একটা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষের সই সংগ্রহ করে নানা দাবি-দাওয়া সম্বলিত এক আবেদনপত্র নিয়ে গত ৩১ জুলাই শুক্রবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সাথে দেখা করেন ।
উদ্যোক্তাদের পক্ষে আইনজীবী ধীমান বসাক, নাট্যকর্মী পলান কুণ্ডু, শিক্ষক বাবর আলী মণ্ডল ও নিমগ্ন বিশ্বাস তাঁকে পুরো বিষয়টি জানান এবং আবেদনপত্রটি জমা দেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সব বিষয়টি শোনার পর তিনি খোঁজ-খবর নেওয়ার এবং হাসপাতাল চালু হবার জন্য ইতিবাচক ব্যবস্থা যাতে গ্রহণ করা যায়, তার প্রতিশ্রুতি দেন। এর পর উদ্যোক্তারা মাননীয় জেলা শাসকের সাথে দেখা করার জন্য তাঁর অফিসে যান, তিনি অন্য মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকলে দেখা হয় না, কিন্তু তাঁর পি.এ. কে সব বিষয়টি জানান এবং সংশ্লিষ্ট আবেদন পত্রটি জমা দিয়ে আসেন। তারপর জেলাশাসকের দপ্তরসূত্রে তাঁরা জানতে পারেন যে, এডিএম ( জেলা পরিষদ) প্রত্যক্ষভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে যুক্ত। তাই তাঁরা এডিএম (জেলা পরিষদ) – এর সাথে দেখা করে বিষয়টি জানান এবং ওই আবেদনের কপি জমা দিয়ে আসেন। ওই একই দিনে উদ্যোক্তাদের পক্ষে আরও দুটি দল দু জায়গায় যায়। একটি দল ওই আবেদনপত্রের কপি নিয়ে মহাকুমা শাসক, সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সাথে দেখা করে সমস্ত বিষয় জানায়। সেখানেও তাঁরা ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। দলের সদস্য সুব্রত মৈত্র ও শমিত আচার্য জানান যে, “মহাকুমা শাসক জোরের সাথেই আগামী সোমবার (৩/৮/২০২০) থেকে হাসপাতাল আগের মতই সমস্ত বিভাগ নিয়ে চালু হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন।” অন্য একটি দল শান্তিপুরে থাকে। তাঁরা ওই একই আবেদনের কপি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমতির সভাপতি, পৌর-প্রশাসক, বিধায়ক ও হাসপাতালের সুপারের সাথে দেখা করে আবেদনপত্র জমা দেন। উদ্যোক্তা-দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে জয়ন্ত ব্যানার্জী জানান যে, “রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও পৌর – প্রশাসক শ্রী অজয় দে বিষয়টি শোনেন এবং আবেদন ও বেশ কিছু দাবি-দাওয়ার প্রতি সহমত প্রকাশ করেন। তিনি এর কিছু বিষয় নিয়ে ফোনে এস. ডি. ও.’র সাথে কথাও বলেন।” আর এক সদস্য রানা মুখার্জি জানান যে, আবেদনের আর একটি কপি নিয়ে মাননীয় বিধায়কের কাছে গেলে তিনি উপস্থিত না থাকায় সেইভাবে কথাবার্তা হয়নি, কেবল আবেদন পত্রটি জমা দেওয়া হয়। ওইদিন আবেদন পত্রের কপি মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও উপস্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও পাঠান উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সোমবার থেকে পুনরায় হাসপাতাল চালু হবে এই আশাতেই সবাই ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া দাবীপত্রের প্রথম পাতা
কিন্তু সোমবার ১১টার সময় গিয়ে দেখা গেল আগের অবস্থা থেকে একচুলও পরিবর্তন হয়নি হাসপাতালের। কিচ্ছু ঠিকঠাক চালু হয় নি। না আউটডোর, না শিশুবিভাগ, না প্রসূতি বিভাগ। হাসপাতালের গেটের মুখে একটা অস্থায়ী তাঁবু, সেখানে একজন ডাক্তারবাবু বসে আছেন। আর নানা ধরনের অসুস্থতা নিয়ে রোগিরা ফিরে যাচ্ছেন। তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের স্পষ্ট চিহ্ন বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা কতটা অসহায় এবং শান্তিপুর তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্গতি !
Leave a Reply