সিমলা থেকে যোগীনের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে। ১ অক্টোবর, ২০২০।#
উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে উচ্চবর্ণের ঠাকুর রাজপুত পুরুষের গণধর্ষণে বাল্মীকি সমাজের দলিত তরুণী, মণীষা বাল্মীকির জিভ কেটে ও অমানুষিক অত্যাচার করে খুনের প্রসঙ্গে,
মীনা কান্ডাসামী লিখেছেন The Wire পত্রিকায়
ধর্ষিতার বাড়ি ব্যারিকেড করে, মায়ের বুকফাটা আর্তনাদকে দমিয়ে রেখে মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে জ্বেলে দিল খুনে রাতের অন্ধকারে। এদেশে কখনো দলিতরা আঙুল তুলতে পারেনা। রাগ দেখাতে পারেনা। এমনকি শোকটুকুও পেতে পারেনা। এটা বরাবর ঘটেছে। আবারও ঘটছে।
এই আগুন কিছু মনে পরাচ্ছে ? স্বামীর চিতায় টেনেহিঁচরে তুলে জীবন্ত বউকে একসাথে পুড়িয়ে মারার সময়কার সতীর চিৎকার– বেজাতের আশিককে মেরে ফেলার হাহাকার– জিভ কেটে নেওয়া ধর্ষিতার গোঙানি– । এটা বরাবর ঘটেছে। আবারও ঘটছে।
মনু যেমনটি বলেছিল, তার অনুগত দাসরা ঠিক তেমনটিই আউড়াচ্ছে,
সমস্ত মেয়েরা অধিকৃত। তার স্থান নীচে, মাটিতে। মেয়েদের একমাত্র আকাঙ্খা রতি, সেক্স। তাদের জন্যেই ধর্ষণ। ধর্ষণের আজ্ঞা পুরুষের হাতে থালায় সাজিয়ে দিয়েছে মনু। এটা বরাবর ঘটেছে। আবারও ঘটছে।
……।
আজ যা ঘটল তাতে বোঝা যায় দলিত সমাজ ফুঁসছে
আজ ২ টো থেকে শিমলা ডিসি অফিস, মল রোডের সামনে অভূতপূর্ব বিদ্রোহ। বাল্মীকি (সাফাই কর্মীদের) সমাজ দলিত আন্দোলনে খুব কম যোগ দেয়। এরা হিন্দু মতে থাকে ও সরকারের পক্ষেই থাকে। বোধহয় এই প্রথম এরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। যোগী সরকার যেমন নির্মম ও সব রীতি দলন করে ধর্ষিতার শেষকৃত্যও পরিবারকে করতে দিলনা, এটা এদের ধৈর্যের সব সীমা ভেঙে দিল। অন্য সকল দলিত সহ ও অনেকে মিলে (২০০ হবে) ঘন্টা তিনেক মোদি-যোগী সরকারকে তারস্বরে ভর্ৎসনা করল। অনেক তরুণ মেয়ে ছিল। শিমলা ফুটছে। সিপিএম, কংগ্রেস সকলে শক্ত প্রতিবাদ করছে। জেলায় জেলায় এরকম হচ্ছে।
অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভিতপুজোয় বাংলার নমোশূদ্র জাতির পাঠানো জলমাটি ফিরিয়ে দেওয়ার অপমানকে চ্যালেঞ্জ করে মনোরঞ্জন ব্যাপারি আজ লিখেছেন
আপনারা জানেন যে একটা দেশে একটা ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি শত বছরের চেষ্টায় অসম্ভব শক্তিবৃদ্ধি করে ফেলেছে। যারা দেশটাকে সেই মনুস্মৃতি নির্দেশিত বিধি বিধান অনুসারে সঞ্চালিত করতে চাইছে। যে কারণে দেশের কোণে কোণে দলিত অচ্ছুৎ অস্পৃশ্য বলে হিন্দুধর্ম-শাস্ত্রগ্রন্থ দ্বারা চিহ্নিত মানুষদের উপর ভয়ানক আক্রমণ সংগঠিত হচ্ছে। পত্র পত্রিকার হিসেব অনুযায়ী এই সময় নাকি – দেশের কোথাও না কোথাও প্রতি পনেরো মিনিটে কোনো দলিত মানুষের উপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। ঘোড়ায় কেন চড়েছে, কুয়ো থেকে জল কেন নিয়েছে, দামী গাড়ি কেন কিনেছে, পায়ে জুতো কেন পড়েছে, মাথায় ছাতা কেন দিয়েছে এইসব সাধারণ অপরাধে চোর ডাকাত পেটাবার মত তাদের পেটান হচ্ছে। প্রতি চার ঘন্টায় নাকি কোনো না কোনো দলিত মেয়ে ধর্ষনের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের পর সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে মেরে গাছের ডালেও অনেককে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
…..।
সেই যে রামায়ণে আছে, শম্বুক নামের এক শূদ্রকে বেদ পাঠ করার অপরাধে রামচন্দ্র নিজের হাতে খুন করেছিলেন, আজ তার মন্দির নির্মাণে শূদ্র মানুষ থাকছে, এটা একটা চিরকালের জন্য ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবে।
……।
Leave a Reply