ছবি- সুব্রত, খবর- শমিত । ফুলিয়া। ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০।#
করোনাকালে ফুলিয়ার ছানা বিক্রেতারা গভীর সংকটে। দীর্ঘ পাঁচ মাসের ওপর ট্রেন না চালানোয় সেই সংকট আরো বেড়েছে। লকডাউনের প্রথম এক মাস ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তিন চার মাস পিক আপ ভ্যান ভাড়া করে মাল নিয়ে যেতে হচ্ছে কলকাতায়। দৈনিক গাড়িভাড়া বাবদ ৩,৫০০ – ৪,০০০ টাকা দিতে হচ্ছে। মালের দাম বাড়েনি, অথচ পরিবহন খরচ সহ সব ক্ষেত্রের খরচ বিপুল বেড়ে গেছে। সেকারণে ছানা ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস ওঠার দশা। ছানা ব্যবসায়ী অসীম ঘোষের থেকে জানা গেল, ফুলিয়া, হবিবপুর, আঁইশতলা থেকে অন্তত ৩৫০-৪০০ জন দুধ, ছানা, ঘি, পনিরের ব্যবসায়ীরা গোটা কলকাতা সহ দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানা, কাকদ্বীপ পর্যন্ত ছানা পৌঁছে দেন। কলকাতার মিষ্টান্ন তৈরির মূল কাঁচামালটা দূর মফস্বলের ফুলিয়া থেকে সাপ্লাই হয়। লোকাল ট্রেন না চালানোয় এই সাপ্লাই-এ প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ট্রেন চালু থাকলে শান্তিপুর- শিয়ালদা লাইনে দুপুর ১-১২ ও ২-২২ -এর ট্রেনে অন্তত ৫০০ জন প্রতিদিন শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ছানা নিয়ে যেতেন। রেলের একটা বিরাট রেভিনিউ থাকত। ৫৩৫ টাকা ভেন্ডার টিকিট ও মাল বুকিং সহ একটা বিরাট অঙ্কের টাকা আসত ছানা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ব্যবসায়ীদের মাল নিয়ে যাওয়ার কোনো চিন্তা থাকতো না। কিন্তু লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় সেই চিন্তা বহুগুণ বেড়েছে। সকলেই কলকাতাতে মাল নিয়ে যেতে পারছেন না। বড় ক্ষতি ও দেনার মুখে পড়েছেন ছানা ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ।
করোনাকালে দেশের শ্রমিকদের অবস্থা যে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল তা সকলেই দেখেছেন। কাজ হারিয়ে, পেশা বদল করে রুটি রুজির ধান্দায় যাহোক কিছু নিয়ে ফিরি করতে দেখা গেছে শ’য়ে শ’য়ে মানুষকে। শান্তিপুরেও লকডাউনকালে দেখা গেছিল ফুলিয়ার কয়েকশ’ দুধ বিক্রেতাকে দুধ, পনির, ঘি বিক্রি করতে। ২০, ২৫ টাকা লিটার দরে দুধ ; ১০০, ১২০ টাকা দরে পনির ; ৩০০, ৪০০ টাকা দরে ঘি মানুষের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কয়েকমাস ধরে যোগান দিয়ে গিয়েছেন। সস্তায় দুগ্ধজাত এই সমস্ত খাদ্য নিম্নমধ্যবিত্তদের নাগালে চলে আসে। কিছু ছানা বিক্রেতারা পড়ে যান চরম ক্ষতির মুখে। প্রতিদিন ৭-৮ কুইন্টাল ছানা কলকাতায় যায়, অথচ সরকারের সুষ্ঠু কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। আনলক পর্বে ৮-১০ টা পিক আপ ভ্যান করে ওই পরিমাণ ছানা পৌঁছে দিতে হচ্ছে কলকাতার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে ফুলিয়ার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর থেকে কয়েক টন ছানা পনির নিয়ে অন্তত ৪০০ ব্যবসায়ী কলকাতা পৌঁছচ্ছেন। এদিকে জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা ও জ্যামজট ব্যবসায়ীদের চিন্তার একটা বড় কারণ। ছানা ব্যবসায়ী রাজু ঘোষ, প্রণব অধিকারী, অসীম ঘোষেরা দাবী করছেন, সব কিছু যখন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, এখনও লোকাল ট্রেন কেন বন্ধ রাখা হয়েছে? অবিলম্বে সরকার লোকাল ট্রেন চালু করে আমাদের অসুবিধা দূর করুক।
Leave a Reply