• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

ভেঙেছে, তাই দেখছো; না ভাঙলে দেখতে কি!

April 22, 2016 Panchadri Karmakar Leave a Comment

পঞ্চাদ্রি কর্মকার, কলকাতা, ২২ এপ্রিল। প্রতিবেদক একাধিক সংস্থায় কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স বিভাগে দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন, এখনও করেন। ছবিগুলো ১০ এপ্রিল তোলা#

১০ এপ্রিল সন্ধ্যেবেলা। গিরিশ পার্কের অংশের দিক থেকে।
১০ এপ্রিল সন্ধ্যেবেলা। গিরিশ পার্কের অংশের দিক থেকে।

৩১ মার্চ ২০১৬ দুপুর একটা নাগাদ খবর পেলাম, উত্তর কলকাতার গণেশ টকিজের কাছে বিবেকানন্দ উড়ালপুল (নির্মীয়মান) ভেঙে গেছে। আর যা হয় একটা বিপর্যয় ঘটলে, যথারীতি মানুষ প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করল। কিন্তু আমরা অফিসে বসে কেউই এই দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সম্বন্ধে ধারনা করতে পারিনি। তবে বেলা যত বাড়ল, ততই মারাত্মক এবং মর্মান্তিক সব খবর আসতে শুরু করে। যে নির্মীয়মান সেতুর তলা দিয়ে মানুষ এবং যানবাহনের অবাধ যাতায়াত, তার দুর্ঘটনা কতটা মর্মান্তিক হতে পারে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।

বিকেলবেলায় বাড়ি ফিরে টিভি চালিয়ে দেখলাম বহু মৃত অর্ধমৃত মানুষের দেহ বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সোজা মেট্রো করে চলে গেলাম ঘটনাস্থলে। অনেক কষ্টে পুলিশের ব্যারিকেড টপকে পৌঁছে গেলাম ভাঙা ব্রীজের সামনে। রাত ৮ টা তখনও সেখানকার স্থানীয় মানুষের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কথা বললাম বহু মানুষের সাথে। যাকে হাতের সামনে পেলাম, তাকেই জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইলাম, সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাথেও কথা বললাম। জটলার মধ্যে কান খাড়া করে শুনতে চাইলাম …।

একজন মহিলা বললেন, ‘আচ্ছা ওইখানে যে একজন দাদা তরমুজ বিক্রি করতেন, তার কী খবর?’ আরেকজন উত্তর দিলেন, ‘বোধহয় সে আর বেঁচে নেই।’ একজন ফল বিক্রেতা পুলিশকে শোনাচ্ছিল তার অভিজ্ঞতার কথা, ‘সবে ফলের ঝুড়ি সাজিয়ে বসেছি, একটা নাট খুলে এসে পড়ল আমার ঝুড়ির ওপর। আর আমি সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে দৌড় লাগালাম।’

কেউ কেউ শোনালো, কেন ব্রিজটা ভেঙেছে — ‘প্রচুর পরিমাণে মাল ঢেলে দিয়েছে।’ কেউ বলছে — ‘নাট-বোল্টে জঙ ধরে গেছিল।’ কেউ বলছে, — ‘খুলে যাওয়া নাটের জায়গায় ঝালাই করার জন্যই সব ভেঙেছে।’

একটা পুলিশের পোস্ট, অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। দেখলাম, ভেতরে একটা টুপি পরে আছে।

উড়ালপুলের নিচে রাস্তার মাঝবরাবর একটি মন্দির আছে। এপাশ ওপাশ করে গাড়ি যায়।
উড়ালপুলের নিচে রাস্তার মাঝবরাবর একটি মন্দির আছে। এপাশ ওপাশ করে গাড়ি যায়।

কারো বক্তব্য, এর তলা দিয়ে যাতায়াত করা উচিতই ছিল না। জায়গাটা বন্ধ রাখা উচিত ছিল।

ঘটনাস্থলে ছিল প্রচুর পরিমাণে পুলিশ, সেনাবাহিনী, তাদের পদস্থ অফিসাররা। বিপর্যয় মোকাবিলার লোকজন, এলাকাবাসী ও আরএসএস-এর লোকজন। প্রায় দেড়ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা সময়েও আমার সামনে কোনও মানুষ উদ্ধার করতে আমি দেখিনি।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে যে বিষয়গুলো নজরে এলো, সেগুলো এরকম :

১) দুর্ঘটনায় যেভাবে ঢালাই হওয়া কংক্রিট ও ইস্পাতের কাঠামো রাস্তায় ভেঙে পড়েছে তার তলায় পড়া কোনো মানুষকে উদ্ধার করা অসম্ভব। সেনাবাহিনীর একজন বললেন, ওই ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে কেউ আত্মীয়কে ফোন করে বাঁচানোর আর্তি জানিয়েছে।

২) স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে একজন বললেন, যদি দুর্ঘটনা ওইসময় না হয়ে আরো পরে ৩-৪টের সময় হতো তবে অনেক বেশি মানুষ মারা যেত কারণ তখন নাকি ওখানে দুধের হোলসেল মার্কেট বসে।

প্রশ্ন হলো, এরকম একটি ব্যস্ততম রাস্তার ওপর দিয়ে উড়াল পুল হলো এবং তার নির্মাণকাজের সময়েও তলা দিয়ে নিয়মিত মানুষ, পায়ে হেঁটে, গাড়ি চেপে যাতায়াত করেছে, দোকান বাজার বসছে, ব্যবসা বাণিজ্য করছে!

৩) প্রায় রাত ৯.৩০ মিনিটে যখন দুর্ঘটনাস্থল থেকে যখন দুর্ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি তখনও পর্যন্ত ভেঙে যাওয়া উড়ালপুলের ১০ শতাংশও সরাতে পারা যায়নি। দুটি মোবাইল ক্রেন মক্‌ করলেও সেনাবাহিনী অনেক জায়গাতেই বসে ছিল। পরে শুনেছি, রাত যত বেড়েছে, কাজের গতিও বেড়েছিল এবং তার সঙ্গে বেড়েছিল লাশের সংখ্যা।

একজন প্রযুক্তিবিদ্যার ছাত্র হয়ে বেং দীর্ঘদিন বিভিন্ন কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্সে চাকরির সুবাদে যে দিকগুলোর দিকে অনায়াসেই আমার নজর চলে গেছিল সেগুলি হলো,

ক) গণেশ টকিজের যে চৌরাস্তার মোড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেখানে গিরিশ পার্ক থেকে আসা উড়ালপুলটির অংশের সাথে যুক্ত করার জন্য ছয় খানা গার্ডার গিয়ে বসেছে দুটি ক্যান্টিলিভার বিমের ওপর। ক্যান্টিলিভার বিমদুটি আবার একটি মাত্র কলামের ওপর বসানো। দেখে তাজ্জব বনে গেলাম। যেখানে পোস্তা থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত সর্বত্র দু-খানা করে কলাম আছে, সেখানে চৌরাস্তার মোড়ে যেখানে দুটি কলামের মাঝের দূরত্ব সবচেয়ে বেশি সেখানে একটি মাত্র কলাম হয় কী করে? গণেশ টকিজের মোড়ে দুদিক থেকে আসা ব্রিজের অংশ সোজাসুজি নয়, ট্যারা।

গণেশ টকিজের মোড়ে যেখানে উড়ালপুলটি ভেঙেছে, সেখানে একটা মাত্র কলাম দিয়ে দুটো ক্যান্টিলিভার বিম সাতটি গার্ডারকে ধরেছিল।
গণেশ টকিজের মোড়ে যেখানে উড়ালপুলটি ভেঙেছে, সেখানে একটা মাত্র কলাম দিয়ে দুটো ক্যান্টিলিভার বিম ছ’টি গার্ডারকে ধরেছিল।

খ) আবার কলামটির ওপর যে দুটি ক্যান্টিলিভার বিম বসানো ছিল, তাতে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যাম্বারিং-ও নেই। আমার ধারনা (এবং এলাকার অনেকেই তাই বললেন, তারা নাকি আগে বলেওছেন কোম্পানিকে, কোম্পানি শোনেনি) একটি কলামের বদলে যদি দুটি কলাম থাকত, তবে এই দুর্ঘটনাটি ঘটার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যেত।

গ) দুর্ঘটনার রাতে এও শোনা গেছে যে, আগের রাতে যখন কাজ শুরু হয়, তখন যতটা পরিমাণ ঢালাই মশলা ঢালার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ঢেলেছিল। তারপর যখন ঢালাই-এর চাপে নাট-বোল্ট কেটে যেতে থাকে, তখন কর্তব্যরত ইঞ্জিনিয়ার কাজটি সেদিনকার মতো স্থগিত রেখেছিল। পরদিন সকালে কাজটি আবার শুরু করবে বলে। পরদিন সকালে, অর্থাৎ ৩১ তারিখে ইঞ্জিনিয়াররা কেটে যাওয়া নাট-বোল্টের জায়গাগুলি ঝালাই করে আবার কাজ শুরু করে। শ্রমিকরা বারণ করেছিল শুনলাম। শ্রমিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে করা হয়। ৩১ মার্চ সকালে ১০টা নাগাদ কাজ শেষ হয়ে যায়। দুপুর ১২ টা নাগাদ ব্রিজটি ভেঙে পড়ে।

প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, কলাম, বিম ও গার্ডার, সবই ইস্পাতের তৈরি। এবং সেগুলো জোড়া দেওয়া ছিল স্লাইস প্লেট ও নাট-বোল্টের সাহায্যে। ঢালাই ছিল শুধুমাত্র ওপরের স্ল্যাবটি।

সাধারণ নাগরিক হিসেবে কিছু প্রশ্ন উঠে যায় আমাদের মনে। যেমন, কেএমডিএ-র অধীনে হওয়া এই প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে নিশ্চয়ই কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়াররা ছিলেন (থাকার কথা, সেটি বাধ্যতামূলক), তারা এরকম পদক্ষেপ নিতে বাধা দিলেন না কেন?

যদিবা রিপেয়ারটি প্রথা মেনে হয়ে থাকে তবে বিপদের আশঙ্কা থাকতে পারে, এটা ধরে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হলো না কেন? প্রশাসন যদি তৎক্ষণাৎ এলাকাটি কর্ডনিং করে দিত, তাহলে ব্রিজ ভেঙে পড়লেও কোনো মানুষের প্রাণ যেত না।

সুতরাং, উড়ালপুল বিপর্যয়ের জন্য কোনো সংস্থার কয়েকজন পদাধিকারী কর্তাব্যক্তিই শুধু দায়ী নয়। দায়ী অনেকেই। কেএমডিএ, প্রশাসন …।

 ফ্লাইওভারের বাকি অংশটুকুও কি নিরাপদ?
ফ্লাইওভারের বাকি অংশটুকুও কি নিরাপদ?

দুর্ঘটনার দশদিন পর ১০ এপ্রিল দু-জন বন্ধু মিলে আমরা আবার গেলাম সেই এলাকায়। শুনলাম, এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা সকালে মিছিল করেছে। বিভিন্ন মিডিয়াও এসেছিল। মিছিলের অন্যতম দাবি ছিল — উড়ালপুলটা পুরোটা ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা উড়ালপুলটি পর্যবেক্ষণ করতে তার তলা দিয়ে গিরিশ পার্ক থেকে পোস্তা পর্যন্ত হাঁটলাম। কথা বললাম বহু মানুষের সাথে। জানলাম অনেক কিছু। যেমন,

>> সরকার লাশের যে সংখ্যাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে, আসলে সংখ্যাটি তার চেয়ে অনেক বেশি। স্থানীয় মানুষেরা কেউ বলছে ১৫০-২০০। কেউ বলছে ৩০০। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, বাড়তি লাশগুলো তাহলে কোথায় গেল? বলল, হয়ত গুম হয়ে গেছে।

মৃত মাত্র পঁচিশ!
মৃত মাত্র পঁচিশ!

>> উড়ালপুলের কাঠামোর নক্সায় কোনো সামঞ্জস্য নেই। যেখানে যেইরকম নক্সার প্রয়োজন হয়েছে দিয়ে দিয়েছে। খুব প্রযুক্তিগতবিদ্যা মেপে হয়েছে এরকম নয়। পর পর দুটি কলাম এবং বিমের মধ্যেও অমিল রয়েছে। অমিল রয়েছে গার্ডারের বেসের মধ্যেও। কাঁচামালের গুণমান, সেতো অনেক ভেতরের ব্যাপার। কিন্তু বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যায় নক্সায় অনেক গড়মিল রয়েছে।

vive13
পোস্তার দিকের অংশে একটি শৌচালয়ের ওপরে যেখানে উঠে গেছে উড়ালপুলটা, সেখানে দুটি কলাম সাপোর্টিং বিমদুটোর মাঝামাঝি নেই। এই জায়গাটায় আনুভূমিক ধনুকের মতো বেঁকেও গেছে। মাঝখানের জোড়ের (স্প্লাইস) জায়গাটায় ব্যাপক চাপ পড়ছে। বাঁদিকের ক্যান্টিলিভার অংশটি প্রায় তিনটি গার্ডার ধরে আছে।

 

এখানে আবার কলাম, বিম -এর অন্য ডিজাইন। মাঝখানের বিমটা জোড়া দেওয়া। অন্তত তিনরকম বিম-কলাম ডিজাইন চোখে পড়ল।
এখানে আবার কলাম, বিম -এর অন্য ডিজাইন। মাঝখানের বিমটা জোড়া দেওয়া (অ্যাঙ্কার চেয়ার)। অন্তত তিনরকম বিম-কলাম ডিজাইন চোখে পড়ল।

>> হাঁটতে হাঁটতে আমরা মানুষদের জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, এই ব্রিজটা শুনছি নাকি ভাঙা হবে? আপনাদের দাবি কী? কেউ বললেন, ‘আমাদের দাবি থাকলেই তো আর হবে না। সরকার কি আর ভাঙতে দেবে?’ কেউ বললেন, ‘আমি কিছু জানিনা’। একজন বললেন, ‘চারপাঁচ বছর আগে এলাকার বাসিন্দারা হাইকোর্টে কেস করেছিল। কিন্তু হেরে গেছে। ছ-মাস কাজ বন্ধ থাকার পর আবার কাজ শুরু হয়। এলাকার লোক অসহায় হয়ে মৃত্যুর সাথে দিন কাটাচ্ছে।’ একজন বললেন, যেখানে ভেঙেছে, সেখান থেকে পোস্তার দিকে পাবলিক শৌচালয় অবধি ভেঙে আবার গড়বে।

দুটি অংশ যেখানে পৃথক হয়েছে, সেখানে সাপোর্ট গার্ডার ভীষণভাবে অবিন্যস্ত।
দুটি অংশ যেখানে পৃথক হয়েছে, সেখানে সাপোর্ট গার্ডার ভীষণভাবে অবিন্যস্ত।

 

একেক জায়গায় একেকরকম চওড়া উড়ালপুল। কেন? আশেপাশের বাড়িগুলির সঙ্গে জোর করে ঠেকিয়ে দেবার প্রচেষ্টায় নয়ত? আর এই অসম প্রস্থ সামলাতে গার্ডার বেসামাল।
একেক জায়গায় একেকরকম চওড়া উড়ালপুল। কেন? আশেপাশের বাড়িগুলির সঙ্গে জোর করে ঠেকিয়ে দেবার প্রচেষ্টায় নয়ত? আর এই অসম প্রস্থ সামলাতে বিম-কলাম-গার্ডার বেসামাল। একটা একটা কলাম আর বিমের মাঝখানে ফাঁক, সম্ভবত ইস্পাতের তাপমাত্রাগত বাড়বৃদ্ধি সামাল দিতে। কিন্তু অন্য কোথাও নেই। কেন নেই?

>> উড়ালপুল এলাকাটি ব্যাপকতর বৈচিত্র্যে ভরা। চায়ের দোকান, ছোটো বড়ো নানারকম ব্যবসা বাণিজ্য। ব্যাঙ্ক, বড়ো বড়ো বাড়ি, দু-পা অন্তর অন্তর মন্দির। একটি মন্দির তো একেবারে উড়ালপুলের তলাতেই।

>> উড়ালপুলটির প্রায় প্রায় সর্বত্রই ফুটপাতের ওপর উঠে এসেছে। বিমের অংশ কোথাও ঢুকে গেছে কারো বারান্দা কারও বা বাড়ির মধ্যে।

সর্বত্র ফুটপাতের ওপর উঠে গেছে উড়ালপুল।
সর্বত্র ফুটপাতের ওপর উঠে গেছে উড়ালপুল।

>> গণেশ টকিজের মোড় থেকে যত গিরিশ পার্কের দিকে আসা যায়, ততই উড়ালপুলটি চওড়া হতে থাকে। চওড়া হতে হতে একসময় দুটি ভাগ হয়ে যায়। এই দুটি ভাগের বেশির ভাগ অংশ দু-পাশের বাড়ির গা ঘেঁষে গেছে। যা মর্মান্তিক। মুরারি সেক্সেরিয়া নামের এক ভদ্রলোক তো আমাদের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে দেখালেন তার করুণ অবস্থা। বললেন, দ্যাখো, আমি আজ কয়েক বছর হলো ঘরের জানলা পুরোপুরি খুলতে পারি না। ব্রিজের স্ল্যাবে গিয়ে আটকে যায়। আমার ঘরে কোনো বাতাস ঢুকতে পারে না। আমি তো ঘর থেকে জানলা টপকে মাঝে মাঝে ব্রিজে উঠি। আজ সকালে আমরা মিছিল করলাম। মিডিয়ায় বাইট দিলাম। কিন্তু কী হবে। চারবছর আগে তো কেসে তো আমরা হেরে গেছি। … আমরা আবার কেস করব।

এখানে দুটি কলাম ও বিমের ওপর আটটি গার্ডার!
এখানে দুটি কলাম ও বিমের ওপর ছটি নয়, আটটি গার্ডার!

>> উড়ালপুলটি ভেঙে পড়েছিল বলে আমরা সেখানে দেখতে গেছি। কিন্তু ব্রিজটি যদি ভেঙে নাও পড়ত, তাহলেও ব্রিজটি একটি মৃত্যুফাঁদ, মর্মান্তিক, এলাকার মানুষের কাছে নরক যন্ত্রণার সমান। ব্রিজটির যে অংশ এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে তা দেখলে যেকোনো সংবেদনশীল মানুষের কান্না পাবে। কী নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ব্রিজটি তৈরি হয়েছে কেউ না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবে না।

বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছে উড়ালপুল।
বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছে উড়ালপুল।

 

গিরিশ পার্কের কাছে উড়ালপুলটি দু-ভাগ হয়ে গেছে। মাঝখানে ফাঁকা। আর পাশগুলিকে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে আশেপাশের বাড়ির সাথে।
গিরিশ পার্কের কাছে উড়ালপুলটি দু-ভাগ হয়ে গেছে। মাঝখানে ফাঁকা। আর পাশগুলিকে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে আশেপাশের বাড়ির সাথে।

দিন কয়েক আগে রবীন্দ্রসদনের কাছে মিন্টো পার্কে গেছিলাম। তখন ওপর দিয়ে যাওয়া উড়ালপুলটির দিকে তাকালাম এবং লক্ষ্য করলাম, ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুলের সাথে তার গঠনগত পার্থক্য। প্রযুক্তিগত হিসেবে নিকেশ তো অনেক দূরের ব্যাপার কিন্তু গঠনগত পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। ক্যান্টিলিভার বিম যথেষ্ট পরিমাণ ক্যাম্বার দেওয়া আছে। ইস্পাতের চাদরটি অনেক মোটা, এবং সর্বোপরি ক্যামাক স্ট্রিট-এর ক্রসিং যেখানে দুটি কলামের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি (বিবেকানন্দ সেতুর গণেশ টকিজের মোড়ের ভেঙে যাওয়া অংশের মতো) সেখানে গার্ডারের (ISMB) বদলে দেওয়া আছে বক্স গার্ডার। অর্থাৎ কলাম-এর ওপর বসানো বিমের ওপর যে ছয়খানা গার্ডার বসানো থাকে তার পরিবর্তে বক্স বিম বসালে একজায়গায় জমাট বাঁধা ওজন বা পয়েন্ট লোড-এর পরিবর্তে ছড়ানো ওজন বা ডিসট্রিবিউটেড লোড পড়বে, তাতে বিপদের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

এই উড়ালপুল নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপান উতোর থাকবে। অনেক বিশিষ্ট মানুষেরা অনেক কিছু বলবেন। তৈরি হবে অনেক গল্পগাথা। কিন্তু আজ এই সবের ওপরে উঠে আমাদের সবাইকে একসাথে বলতে হবে — এই বিপজ্জনক উড়ালপুলটি অবিলম্বে ভেঙে ফেলা হোক। মানুষের কল্যাণের স্বার্থে। বেঁচে থাকার স্বার্থে। আর ভবিষ্যতেও যেন কোনো সরকার প্রগতির দোহাই দিয়ে, উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে কারো মৃতদেহের ওপর দিয়ে কোথাও এইরকম অনাদরের উড়ালপুল তৈরির কথা না ভাবে। বন্ধ হোক মৃত্যুফাঁদ।

মানবাধিকার গণেশ টকিজ, গিরিশ পার্ক মেট্রো, ডিজাইন, নক্সা, পোস্তা, ফ্লাইওভার, বিবেকাননদ উড়ালপুল, মন্দির

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in