সম্রাট সরকার, মদনপুর, নদীয়া, ২৫ এপ্রিল#
কাজটা শুরু করেছিলাম গত বছর বর্ষার শেষে। আমার বন্ধু অরুণের সঙ্গে। পাখি নিয়ে কৌতুহল খুব বেড়ে গেছিলো। আমার পুত্রের জন্য একটা পাখির বই কেনার পর থেকে। তারপর ভাবলাম দেখি না মানুষ তো সারা দুনিয়া জুড়ে পাখি নিয়ে পড়ে থাকে। আমাদের গ্রামটায় কতরকমের পাখি আছে! অফিসের ফাঁকে ফাঁকে ছুটির দিনে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম আমাদের বয়সার বিলের মধ্যে। প্রথমে সবাই হাসাহাসি করত। আমি প্রায় প্রত্যেকবার আমার পুত্রকে নিয়ে যেতাম। তারপর প্রথম প্রথম যা হয় আর কি। চেনা পাখি গুলো কে spot করা শুরু করলাম। খুব ভয়ে ভয়ে ফটো তুলতাম। যদি উড়ে যায়। দূর থেকে যা দেখা যায় তাই সই।
পরে আস্তে আস্তে সাহস বাড়লো। বলা যায় একটা জায়গায় বেড়িয়ে আসার পর। সেই জায়গাটা হল ভরতপুরের কেওলাদেও ঘানা জাতিয় উদ্যান। ওখানকার এক রিক্সাওয়ালা আমাকে পাখি দেখা, চেনা, ছবি তোলা অনেকটা শিখিয়ে দিয়েছে। শিখিয়েছে কি ভাবে ধৈর্য্য ধরে আপেক্ষা করতে হয় ঠিক সময়ের জন্য। ওখানে গিয়ে আমার একটা নেশা ধরে গেছিলো পাখি দেখার। ফিরে এসে অরুণ কে সব বললাম। আমাদের গ্রাম ঘোরার ভুত মাথায় জোরালো ভাবে চেপে বসল। কখনো ছেলের জলখাবার কোমরে বেঁধে পাখি দেখতে বেড়িয়েছি। অনেক বার বিলের কাদায় আমি, আমার স্ত্রী, অরুন আর আমার পুত্র একেবারে মাখামাখি হয়ে বাড়ি ফিরেছি। বাড়ির সব্বাই বকাবকি করেছে। বিলে সবসময় সাপের ভয়। এভাবে আস্তে আস্তে একটু খোজাখুঁজির পর আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনি কখন পাখির সংখ্যাটা ৮০ ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের গ্রামের অনেকে অনেক ভাবে সাহায্য করেছে আর এখনো করে। অনেকে কোনো পাখির স্থানীয় নাম বলে দিয়েছে। একজন ভাইয়ের কথা বলব, আমাকে ফোন করে বলেছে দাদা বিলে এখনি এস একটা বড় ময়ূরের মত পাখি দেখেছি। সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দেখি Black Ibis-এর একটা জোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনোদিন ভোরবেলা বেরিয়েছি একজন বলল নলা গাছের দিকে নীল রঙের ডাহুক আছে। গিয়ে দেখি purple swamphen। এখন আর আমাদের এলোপাথারি গ্রামের মাঠেঘাটে, বিলের কাদায় সময়-অসময়ে ঘুরে বেড়াতে দেখলে কেউ অবাক হয় না। উপরন্তু সাহায্য করে কোথাও কোনো পাখি দেখলে। তবে এখানেও এয়ারগান দিয়ে শামুকখোল মারার লোক আছে। আমরা বুঝিয়ে চেষ্টা করি এসব না করার। তবু মনে হয় সচেতনতা অনেক বাড়াতে হবে।
আমাদের কাঁচা হাতে একবছর চেষ্টা করার পর একটা blog খুলেছি, আমাদের কাজটার মূল্যায়নের জন্য। www.boisabirds.wordpress.com। যেহেতু আমাদের বিল-টার নাম বয়সা। আমরা তো সবে আট মাস হল পাখি spot করা শুরু করেছি। অনেক পাখি ছবি তুলে চিহ্নিত করেছি। আরও অনেক পাখি দেখেছি তবে ছবি তুলতে পারিনি। ভালো ক্যামেরার অভাব আর ছবি তোলার হাত কাচা হওয়ার জন্য। বিলের অনেক জায়গায় আমরা এখনো জল থাকা অবস্থায় যেতে পারিনি। আশা করি সময়ের সাথে সেগুলো কেটে যাবে। তখন কিন্তু আমাদের গ্রামটাকে একটা ছোটখাটো পখিরালয় বলা যেতেই পারে!
Leave a Reply