১৯ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল
নিমগ্ন বিশ্বাস। শান্তিপুর। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০।#
পড়ন্ত বিকেল। বার্ষিক সাধারণ সভার পর অতিথিদের বিদায় জানাতে এগিয়ে এসেছে শ্রমজীবী হাসপাতাল পরিবারের অনেকেই। সেই সময় হাসপাতালের এক কর্মী এসে খবর দিল একটা বাচ্চাকে বোধ হয় সাপে কামড়েছে, অমনি ছুটলেন অভিজ্ঞ এক প্রতিনিধি। কিছু আগেই ১৯ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সেই প্রতিনিধিই বলছিলেন, জেলিয়াখালি অঞ্চলে কয়েকদিন আগে এক পরিবারের ৪ জনকে বিষধর সাপে কামড়েছিল। ৩ জনকে বাঁচানো গেলেও সময় মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় একজনকে বাঁচানো যায়নি। আর এজন্যই প্রয়োজন দ্বীপের গ্রামগুলিতে নিজেদের উদ্যোগে মেডিকেল ইউনিট গড়ে তোলা। এই ইউনিটগুলি গড়ে উঠবে সাধারণ মানুষদের উৎসাহে। তাদের নির্বাচিত আগ্রহী তরুণ তরুণীদের আমরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চাই। প্রশিক্ষণের পর এরা ফিরে গিয়ে নিজ নিজ এলাকায় মানুষের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নেবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষক ডাক্তারবাবুদের কাছ থেকে ফোনে পরামর্শ নিতে পারবে। আমাদের বিশ্বাস এই ব্যবস্থায় ৮০ শতাংশ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া এই ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা ও এলাকার আয় বাড়ানোর কাজেও অংশ নেবে। আর ঐ সব এলাকার মানুষজন ঐ ছেলেমেয়েদের/তরুণ-তরুণীদের আর্থিক দায়িত্ব বহন করবে। এভাবেই তৈরি হবে মানুষের জন্য, মানুষের সাহায্যে, মানুষের দ্বারা গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা। সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল এভাবেই বিগত দু’দশক ধরে কাজ করে চলেছে, যাদের অঙ্গীকার আমাদের স্বাস্থ্য আমরাই গড়ব।
সংগঠনের সম্পাদক নবিরুল নাইয়া বলছিলেন, অন্যান্য খাতের তুলনায় সরকার জি.ডি.পি. এর একটা ছোট অংশই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করছে। তাই একদিকে যেমন এই ব্যয় বাড়ানোর দাবী রাখতে হবে এবং তা আদায় করার চেষ্টা করতে হবে, অন্যদিকে নিজেদের প্রচেষ্টায় রাষ্ট্র ব্যবস্থার পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সমান্তরাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। তিনি বলছিলেন, বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রায় ৩০০ জন মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। আশেপাশের অনেক গ্রাম থেকে যেমন মানুষ এসেছেন, তেমনি এসেছেন ব্যারাকপুর, কলকাতা অথবা শান্তিপুর থেকেও। খসড়া প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য রেখেছেন ৩৬ জন। এইসব মানুষের অনেকেই যখন তাদের সমস্যার কথা অথবা এই প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসার কথা বলছিলেন, তাতে মিশেছিল মাটির গন্ধ। কোভিডের আবহে মানুষ যখন আরো বেশি একা, সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল তখন যূথবদ্ধতায় বিশ্বাসী। আর এই বিশ্বাসেই সকলের কাছে নবিরুলদের আবেদন, আসুন সকলে দায়িত্ব নিয়ে এই কর্মকান্ডে ঝাঁপিয়ে পড়ি। অন্যদেরও সামিল করার দায়িত্ব নিই। সম্মিলিতভাবে বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানমনস্ক এক সমাজ গড়ার কাজে হাত লাগাই। সফল আমরা হবোই।
Leave a Reply