দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা পৌর এলাকার নঙ্গী অঞ্চলের নঙ্গী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কাছে সমীক্ষা করা হয়েছে। সাতশোর বেশি ছাত্রীসংখ্যার এই স্কুলটিতে অধিকাংশ ছাত্রীই আশপাশের এলাকা থেকে পড়তে আসে। এতে অংশ নিয়েছে কিসমৎ নঙ্গীর কথা মাইতি, বাটানগর পারবাংলার প্রিয়া ঘোষ, বাটানগর চ্যাটার্জিপাড়ার সেঁজুতি নাহা, বলরামপুর বরকনতলার কাবেরি দাস, বাটানগর হায়েৎপুর দশমপল্লির সোনালী ঘোষ। এরা সকলেই একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। এছাড়া পারবাংলার সাগ্নিক সেন (সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র), পারবাংলা পশ্চিমপাড়ার রিমা সামন্ত (অষ্টম শ্রেণী) এবং দৌলতপুর পূর্বপাড়ার স্বাগতালক্ষী সাহা (দশম শ্রেণী)। মে মাসের গোড়ায় এদের কাছে যাওয়া হয়েছিল। সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছেন শোভা ধনী।
নঙ্গী অঞ্চলে জল সরবরাহ করে মহেশতলা পৌরসভা। সেই জলের জন্য আগে জলকর নিলেও বর্তমানে এই পরিসেবা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। গার্ডেনরীচ ওয়াটার ওয়ার্কস থেকে এই জল আসে। সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টাইমকলে জল সরবরাহ থাকে। এটা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে সব পাড়ায় সব বাড়িতে নিজেদের টাইমকল নেই। তারা বাইরের টাইমকল থেকে জল ধরে আনে। অনেকে স্নান, কাপড় কাচা, শৌচকর্মের জন্য নলকূপ বা পাতকুয়োর জলও ব্যবহার করে। ছাদের ট্যাঙ্কে ভরে রাখলে সেই জলে বাসন মাজা, ঘর মোছার কাজও হয়।
নঙ্গী বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আলাদা শৌচাগার রয়েছে। সেখানে পৌরসভার জলের ব্যবস্থাও রয়েছে। বর্ষার সময় সেই জল কমবেশি দূষিত হয়। জলে পোকাও দেখা গেছে। ছাত্রীরা সেটাই পান করে। শিক্ষিকাদের জন্য ফিল্টারের ব্যবস্থা রয়েছে বটে, তবে সেটা যথাযথ অবস্থায় নেই। পারবাংলার বাসিন্দা সাগ্নিক সেন জানিয়েছে যে সেখানকার বাংলা মাধ্যম স্কুলে জলের ব্যবস্থা নেই। তবে কেজি স্কুলগুলোতে পাম্পের জলের ব্যবস্থা রয়েছে। পারবাংলা পশ্চিমপাড়ার রিমা সামন্ত জানিয়েছে যে তাদের এলাকার একমাত্র স্কুলে জল এবং শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই।
পাড়ার বারোয়ারি কাজের জন্য পৌরসভা থেকে টাইমকলের ব্যবস্থা করা আছে এবং বেশি প্রয়োজনে পৌরসভা থেকে জলের গাড়িও পাঠানো হয়ে থাকে। এই বারোয়ারি জল কতটা অপচয় হয়, এই প্রশ্নে দুরকম উত্তর পাওয়া গেছে। তবে রিমা সামন্ত লিখেছে, ‘আগে জলের অপচয় খুব বেশি হত। বর্তমানে জলের বেগ কম থাকায় ও ঠিক সময় মতো জল সরবরাহ না হওয়ায় জলের অপচয় বন্ধ হয়েছে।’
নঙ্গী অঞ্চলের বিভিন্ন পাড়ায় বেশ কিছু পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। এগুলো বেশিরভাগই অপরিষ্কার। এই জল পান করার পক্ষে একেবারেই অযোগ্য। এগুলোতে কোথাও কোথাও গৃহস্থালির কাজ এবং স্নানও করা হয়। কাছেই গঙ্গা, সেই জলে মলমূত্র ত্যাগ এবং মৃত পশু ফেলে দূষিত করা হয়েছে।
বজবজ-শিয়ালদহ লাইনে নঙ্গী রেলস্টেশনে পুরুষদের শৌচাগার রয়েছে। তা প্রায়ই অপরিষ্কার থাকে। মেয়েদের শৌচাগার তালা বন্ধ থাকে। ব্যবহার করতে গেলে স্টেশনমাস্টারের কাছ থেকে চাবি নিতে হয়। তবে সম্প্রতি মেয়েদের জন্য পয়সা দিয়ে ব্যবহার করার জন্য পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট করা হয়েছে।
এই সমীক্ষায় কয়েকজন ছাত্রী কিছু নিজস্ব মন্তব্য প্রকাশ করেছে। যেমন, কিসমৎ নঙ্গীর কথা মাইতি বলেছে, ‘আমাদের গ্রামে জলের সুব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় জল নেওয়ার জন্য বিশাল লাইন পড়ে। ফলে অনেকে জল পায় না।’ একমাত্র ছাত্র সাগ্নিক সেন বলেছে, ‘পৌরসভা কর্তৃক নিকাশি ব্যবস্থা নিয়মিত হলে জল দূষণের সম্ভাবনা অনেকাংশে রোধ করা হয়তো সম্ভব হত। এছাড়া রাস্তার কলগুলির আশপাশের কিছুটা জায়গা বাঁধানো হলে ভালো হত। রাস্তাঘাটগুলি পিচ ঢালাই করা হলেও রাস্তায় জল দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কমত। যে পুকুর ও জলাশয়গুলি বহুদিন সংস্কার করা হয়নি, সেগুলি পৌরসভা থেকে সংস্কার করার ব্যবস্থা হলে সেগুলিও ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠত।’ ছাত্রছাত্রীদের এইসব পরামর্শগুলো অবশ্যই বিবেচনার যোগ্য।
Leave a Reply