সূত্র http://www.bradleymanning.org, অনুবাদ শমীক সরকার, ২২ আগস্ট#
২০১০ সালে আমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তার পেছনে ছিল আমার দেশ এবং যে পৃথিবীতে আমি বাস করি তার প্রতি আমার উদ্বেগ। ৯/১১-র দুঃখজনক ঘটনাবলীর পর আমাদের দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। আমরা এমন এক শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ নেমেছি যা চিরাচরিত কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে চায় না। সেই জন্য আমাদের জীবনধারণের ওপর নেমে আসা ঝুঁকির মোকাবিলায় আমাদেরও যুদ্ধের কায়দা বদলাতে হয়েছে।
আমি প্রথমদিকে এই কায়দাগুলোর সঙ্গে একমত হয়েছিলাম এবং আমার দেশের সুরক্ষায় সাহায্য করতে স্বেচ্ছায় নেমেছিলাম। ইরাকে গিয়ে প্রতিদিনের গোপন মিলিটারি রিপোর্টগুলি পড়তে পড়তে, আমরা যে কাজ করছি তার নৈতিকতা নিয়ে আমার মনে প্রথম প্রশ্ন জাগতে শুরু করে। এই সময়েই আমি উপলদ্ধি করি, আমাদের ওপর নেমে আসা ঝুঁকির মোকাবিলায় আমরা মানবিকতা ভুলেছি। আমরা ইরাক এবং আফগানিস্তানের মানুষের জীবনকে ধারাবাহিকভাবে মূল্যহীন করে তুলেছি। শত্রু বলে মনে করে মোকাবিলা করতে গিয়ে আমরা কখনও কখনও নিরীহ মানুষ মেরে ফেলেছি। যখনই আমরা নিরীহ মানুষ মেরেছি, তার দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোপনীয় তথ্যের ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছি, জবাব দেবার দায় এড়াতে।
শত্রু নিকেশ করার উল্লাসে আমরা নিজেদের মধ্যে অত্যাচারের সংজ্ঞা নিয়ে তর্ক করেছি। আমরা মানুষকে গুয়ান্তানামোতে রেখে দিয়েছি বছরের পর বছর, কোনও পদ্ধতি না মেনেই। আমরা ইরাকি সরকারের অত্যাচার এবং খতমগুলোর প্রতি দৃকপাত করিনি, এবং একাজের কোনও ব্যাখ্যা নেই। সন্ত্রাসের সঙ্গে যুদ্ধের নামে আমরা এরকম অগুনতি কাজ হজম করে ফেলেছি।
যারা ক্ষমতায় আছে, তারা যখন কোনও অনৈতিক কাজ করার পক্ষে সওয়াল করে, তখন দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে তা করা হয়। যখন এই দেশপ্রেমের ধুয়ো যুক্তিকে ছাপিয়ে যায়, তখন আমেরিকান সৈন্যকেই সাধারণত দেওয়া হয় কোনও খারাপ কাজের ভার।
গণতন্ত্রের গুণের জন্য এইধরনের খারাপ সময় আগেও এসেছে আমাদের দেশে — দি ট্রায়াল অব টিয়ার্স, দ্য ড্রেড স্কট ডিসিশন, ম্যাকার্থিজম, এবং জাপানিজ-আমেরিকান ইন্টারনমেন্ট ক্যাম্প তার কিছু উদাহরণ। আমি নিশ্চিত, ৯/১১-র পরের অনেক কাজকেই এই আলোকেই দেখবে ভবিষ্যত।
প্রয়াত হাওয়ার্ড জিন একসময় বলেছিলেন, ‘নিরীহ মানুষ খুনের লজ্জা ঢাকা দেওয়ার মতো বড়ো পতাকা হয় না।’
আমি বুঝি, আমার কাজ আইন মানেনি। আমার কাজের জন্য যদি কেউ আহত হন, বা তা যদি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করে থাকে তাহলে আমি দুঃখিত। আমি কাউকে আঘাত করার জন্য একাজ করিনি। আমি শুধু মানুষকে সাহায্য করতে চেয়েছি। আমি যখন গোপন নথি ফাঁস করার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং অন্যদের প্রতি কর্তব্যবোধই আমার মধ্যে কাজ করেছে।
যদি আপনি আমার ক্ষমাপ্রার্থনা ফিরিয়ে দেন, তাহলে আমি শাস্তিভোগ করব, শুধু এটুকু জেনে যে একটি মুক্ত সমাজে বাস করার চড়া মাশুল দিতে হয় কখনও কখনও। আমি সেই মাশুল দিতে হাসিমুখে প্রস্তুত আছি, যদি তার মানে দাঁড়ায়, এর মাধ্যমেই আমরা পেতে পারি একটি দেশ যা সত্যিকারের স্বাধীনতার ধারনার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং যেখানে সমস্ত মহিলা ও পুরুষ সমান হিসেবেই জন্মায়।
jitennandi says
হেডিংটা ভালো হত
পঁয়ত্রিশ বছর কারাবাসের শাস্তি ঘোষণার পর ওবামাকে ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের চিঠি