• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

হাবলু চলে গেল

December 22, 2014 admin Leave a Comment

১৪ ডিসেম্বর, অমিতা নন্দী, রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা#

hablu
হাবলু-র ছবি তুলেছেন জিতেন নন্দী।

আমাদের ‘হাবলু’ ওরফে পাড়ার ‘ভলু’ চলে গেল, গত মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর দুপুরে, বেহালা সরশুনার এক পশু-চিকিৎসালয়ে স্যালাইন নিতে নিতে। আমাদের সবার মন খুব খারাপ, যারা ওকে ভালোবাসতাম। শুনলাম ডাক্তার বলেছেন, ওর যে রোগটা হয়েছিল তার নাম ডিস্টেম্পার। আগে থেকে ভ্যাকসিন দিলেই নাকি একমাত্র রেহাই, নাহলে বাঁচানো যায় না। আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না এ রোগ সম্পর্কে। জানতে পারলাম, যখন ওর জীবনটা শেষ হয়ে গেল কী অসহায়ভাবে।
আমাদের পাড়ায় যে কুকুরগুলো থাকে আগে তাদের সম্পর্কে তেমন খোঁজখবর রাখিনি কখনো। আমাদের ছেলে তাতাই যখন চাকরিসূত্রে প্রথমে মেদিনীপুরে গেল, সপ্তাহান্তে বাড়ি এলেই মাংস খাওয়াতে হবে এই বায়না ছিল। একদিন ওর পাড়ার বন্ধুদের খাওয়ানো হল, এত মাংসের হাড় — ময়লার বালতিতে না ফেলে রাস্তার ধারে ফেলা হল যাতে অন্য প্রাণীরা (কুকুর, বিড়াল কিংবা ভাম) খেতে পারে। দেখা গেল দু-তিনটে কুকুর এসে চেটেপুটে খাচ্ছে। তারপর থেকে ক্রমশ ওদের সাথে তাতাইয়ের এত ভাব হয়ে গেল যে মাংস কিনতে গেলেই তাতাই ওদের জন্য আলাদা করে কিছু হাড়-মেটে ইত্যাদি কিনে আনত। আমাকে বলত রান্না করে দিতে। প্রথম প্রথম আমি আদা-পেঁয়াজ দিয়ে একটু কষে প্রায় বিরিয়ানি-টাইপের বানিয়ে দিতাম। পরে অবশ্য তেল-নুন না দিয়ে শুধু চাল আর হাড় হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে দিতাম। কী সুন্দর তৃপ্তি করে খেত বিশেষত এই নাদুসনুদুস কুকুরটি। ছেলে ওর নাম দিল ‘হাবলু’, ওর একটু রোগা ভাইটার নাম দিল ‘খোকন’। অচিরেই ওদের মা এসে এই নৈশ ভোজনে যোগ দিল, তার নাম দেওয়া হল ‘চম্পা’। আর পাশের গলির যে বাড়িতে ওদের তার আগে ছোটোবেলাটা কেটেছে, সেই পীযূষ-প্রদ্যুৎরা ওদের মা-ছেলেকে ডাকে লাউ-ভুলু বলে। ওদের মা দু-বেলা কী সুন্দর স্নেহভরে খেতে ডাকেন — সেই ডাক শুনেই ওরা খেতে দৌড়োত। আস্তে আস্তে আমাদেরও নিয়মিত অভ্যাস হয়ে গেল রাতে ওদের জন্য খাবার গরম করে খেতে ডাকা। আয়-আয়-আয় ডাক শুনেই যে যেখানে থাকে পাঁচিল টপকে লাফ দিয়ে খেতে চলে আসে। তবে হাবলুর প্রতি আমাদের সবারই একটু বিশেষ দুর্বলতা তৈরি হয়। যাই দেওয়া হোক না কেন ও সুন্দর চেটেপুটে খেত। আর ভীষণ আদর-কাড়া ছিল। খাবার নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যে একটা রেষারেষি ছিল। নিয়ম ছিল প্রথমে আর শেষে হাবলুকে দিতে হবে, তারপর খোকনকে, তারপর ওদের মা চম্পাকে। নাহলে অনর্থ কাণ্ড বেধে যাবে। একটা লাল জলের মগ নিয়ে গেলেই ঝগড়া থেমে যেত।
আগে আমাদের পাড়ায় প্রায়ই চুরি হচ্ছিল — ছোটো বড়ো নানারকম। ধীরে ধীরে লক্ষ্য করলাম, পাড়ায় বা আমাদের বাড়িগুলোতে অচেনা কেউ এলেই ওরা এমন চিৎকার জুড়ে দিত যে অনেকে ভয় পেত। এমনকী আমাদের বন্ধুদেরও কাউকে কাউকে এমন তেড়ে যেত — তারা এখানে এলে আগে ফোন করে দিত, আমরা মোড় থেকে তাদের গার্ড করে নিয়ে আসতাম। তবে সবাইকে দেখে কিন্তু চেঁচাত না। বিশেষত বাচ্চা আর মহিলাদের কিছু বলত না। পাঞ্জাবি বা টুপি পরা কিংবা কাঁধে ঝোলা ব্যাগওয়ালা লোক দেখলে ওরা ভীষণ চেঁচাত, আসলে ভয়ে, তবে সেই মানুষরাও খুব ভয় পেত। আমাদের যে ছেলেটি আগে খবরের কাগজ দিতে আসত সে তো প্রথমেই একটা ইট ছুঁড়ে মারত। ওর এই গলিতে আসাই বন্ধ হয়ে গেল।
হাবলুকে আমার ছেলে খুব আদর করত, খোকনকেও। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে প্রায়ই ওদের ক্ষত হত, তখন ওষুধ কিনে খাওয়ানো হত, অথবা গায়ে লাগানো হত। ভালো হয়ে যেত। তবে ওদের কোনো ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবিওনি। একবার পাড়ার একটা বাচ্চা ছেলে ওদের তাড়া খেয়ে ভয় পেয়ে এমন একটা আধলা ইট ছূঁড়েছিল যে হাবলুর মাথা ফেটে প্রচুর রক্তপাত হয়েছিল। তখন পাড়ার ভট্টাচার্যবাবুদের নাতিরা খুব কাঁদতে কাঁদতে এসে আমার ছেলেকে খবর দেয়। ও ওই রক্ত দেখে মাথা গরম করে সেই পাড়ার ছেলেটাকে এক চড় মেরেছিল, তাই নিয়ে তার বাবা-জ্যাঠাদের সঙ্গে ওর খুব মন কষাকষি হয়। সেবার সবাই মিলে ওর সেবা শুশ্রূষা করে ইনজেকশন দিয়ে আর পীযূষদের বাড়িতে রেখে ওকে সারিয়ে তোলা হয়।
আমরা নভেম্বরে ১৫-১৬ দিনের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। ওদের যাতে খাওয়া কম না হয় সেজন্য ভট্টাচার্যবাবুদের বলে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি হাবলু খুব রোগা আর নিস্তেজ হয়ে গেছে, আমরা কেউ বাড়িতে থাকলে ও এসে দরজায় ধাক্কা মারত মনে হত যেন কোনো মানুষ এসেছে। ওর দাবি হয়ে গিয়েছিল আমাদের দরজার কাছে সিঁড়ির নিচে শুতে দিতে হবে — দিনের বেলা আর বৃষ্টির সময়। এবারও আমরা ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলতে না খুলতেই আমাদের আগে ঢুকে পড়ল। রাতে খেতে ডাকলে বাইরে যেত, তারপর শুতে চলে যেত অন্যত্র। তবে রাতের বেলায় ওরা দল বেঁধে গোটা পাড়ায় টহল দিত। একদিন রাতে ও খেয়ে এসে আবার শুয়ে পড়ল, কিছুতেই বেরোল না। তখন সিঁড়িতে লাইট জ্বালিয়ে রেখে আমরা ওপরে শুতে চলে গেলাম। মাঝরাতে ওর যখন বাইরে প্রাকৃতিক কাজে যাওয়ার দরকার হল ও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠে দরজায় শব্দ করল। ঘুম ভেঙে উঠে দরজা খুলে দিতেই বাইরে চলে গেল। কোনোদিন বাড়ির মধ্যে টয়লেট করত না, নোংরা করত না।
সকালবেলা ভট্টাচার্যবাবুদের বাড়ির সামনে শুয়ে ওরা রোদ পোহাত। আমি একদিন হাঁটতে গিয়ে ওর কাছে দাঁড়িয়েছি, ওঁরা বললেন, ওর বয়স হয়ে গেছে, চোখেও আর দেখতে পাচ্ছে না। এবার আর বাঁচবে না। তাই শুনে আমি ভাবলাম, কিছুই কি চেষ্টা করা যায় না? তাতাই এখন দিল্লিতে। ওকে ফোনে বললাম পাশের পাড়ায় ওর যে বুবাইদা কুকুরদের খুব দেখাশোনা করে তার সাথে পরামর্শ করে একটা হাসপাতালের খোঁজ দিতে। রাতে ও একজন ডাক্তারের ফোন নম্বর দিল আর বারবার মিনতি করল যাতে এখনই আমরা চেষ্টা করি। সেই ডাক্তার ফোনে কিছু ওষুধ আর পথ্যর কথা বললেন। ওঁর কোমরে চোট লেগেছে বলে আসতে পারবেন না জানালেন। পরের দু-দিন আমরা সেইসব ওষুধ এবং মাছ-ভাত খাওয়ালাম। তারপর আর ওর পাত্তা নেই।

খুঁজে খুঁজে তৃতীয়দিন রাতে আবিষ্কার করলাম পীযূষদের বাড়ির পাশের চাতালে শুয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে কাঁপছে। ওরা বলল, সেইদিন মাঝরাতে ভট্টাচার্যবাবুদের গেট পেরোতে না পেরে ওদের জলের চৌবাচ্চায় পড়ে কাঁদছিল। সেই শুনে ওরা দুই ভাই পাঁচিল টপকে গিয়ে ওকে উদ্ধার করে, রাতে গরম দুধ আর কিছু ওষুধ খাওয়ায়। যে ডাক্তারের সঙ্গে আমি পরামর্শ করেছিলাম ওরাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইনজেকশন স্যালাইনের ব্যবস্থা করেছে। আমরা কিছুটা ভরসা পেলাম। কিন্তু ওরা ভেবেছিল কৃমি হয়েছে, তাই কৃমির ওষুধ দিয়েছিল। মাঝে ওদের ছোটো ভাইয়ের বিয়ে হল। কয়দিন ওরা একটু ব্যস্ত ছিল। ইতিমধ্যে হাবলুর অবস্থার আরও অবনতি হল। অবশেষে শনিবার দুপুরে পীযূষ একটা অটো বুক করে একাই ওকে ভর্তি করে এল সেই ‘মাদার্স হাট’ নামক পশু চিকিৎসালয়ে ওই ডাক্তারের অধীনে। ওরা বলল, অনেক দেরি হয়ে গেছে। তবু স্যালাইন দেওয়া শুরু হল, কিন্তু এমন একটা রোগ ধরেছিল যে আর কিছু লাভ হল না। ও চলে গেল মঙ্গলবার দুপুরে।
বৃহস্পতিবার রাতেই পাড়ায় আবার চোর এসেছিল — কয়েকটা বাড়ি থেকে বেশ কয়েক জোড়া জুতো চুরি গেছে। খোকন একা পুকুরপারে গিয়ে খুব চিৎকার করেছিল, কিন্তু চোরেরা ওকে বোকা বানিয়েছে।
পীযূষ আর বুবাইরা ঠিক করেছে, আমরা যারা ওদের ভালোবাসি তারা সবাই একটা ফান্ড তৈরি করব আর সবাই মিলে চেষ্টা করব বাকি কুকুরগুলোকে সুস্থ রাখতে।

সংস্কৃতি কুকুর, পশু-চিকিৎসালয়, পাড়ার কুকুর

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in