প্রায় প্রতিবছর বকরিদের আগে কিছু পোস্টার দেখা যায় বিশেষ কয়েকটি অঞ্চলে। সম্প্রতি বজবজ লোকালের কামরায় দেখা গেল এরকম চারটে পোস্টার। ‘গরু আমাদের মা, গরু হত্যা রাষ্ট্রীয় অপরাধ’, ‘গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করতে হবে’ ইত্যাদি। হঠাৎ গরু হত্যা কেন? যে কোনো হত্যাই তো অপরাধ। আর যদি সাফ সাফ বকরিদে গরুর কোরবানি নিয়ে কথা বলা হয়, তাহলে বলতে হয়, গরু, ছাগল বা মুরগি, যেগুলো আমরা মানুষেরা খাই, কোনোটাই তো নৃশংসতার বিচারে কম নয়। তখন আসবে ‘গরু আমাদের মা’ — মাকে হত্যার প্রশ্ন। মা নয় এরকম কাউকে হত্যা করা কী কম অপরাধ? আসলে এইসময়ে এইসব প্রসঙ্গ তোলার মধ্যে এক ধরনের বিদ্বেষকে খুঁচিয়ে তোলার উদ্দেশ্য রয়েছে। কোনো নৈতিক বিচার-বিবেচনার প্রশ্ন এতে নেই।
নৈতিক বিচারের প্রশ্ন অবশ্যই রয়েছে। সেটা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। আমাদের পড়শি বলতে যদি আমরা আমদের চারপাশের প্রকৃতি জগৎ মনে করি, তখন গাছপালা, পায়ের নিচের দুর্বোঘাস, পোকামাকড়, পাখি, জীবজন্তু এবং মানুষ সকলেই আমাদের পড়শি। এটা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারলে আমাদের ভিতরের হিংস্রভাবটা একটু প্রশমিত হতে পারে। সবসময় নিজেকে বা নিজের জাত-ধর্মকে শ্রেষ্ঠ ভাবার রোগটা প্রশ্রয় পায় না। একটা দুষমণ খাঁড়া করে নেওয়ার অভ্যাসটাও প্রশ্রয় পায় না। সব ছেড়ে ‘গরু’ নিয়ে তেড়ে যাওয়ার মনটার পালে বাতাস যতই দেওয়া হোক, নিজেকে একটু সংযত করার চেষ্টা করা যায়।
‘গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করতে হবে’ পোস্টারটা দেখে একজন নিত্যযাত্রী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেই ফেললেন, মানুষ থাকতে গরু কেন?
Leave a Reply