হকারদের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে এল রাজ্য সরকার। এখন যারা কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে হকারি করছে, তাদের স্বীকৃতি দেবে সরকার; ট্রেড লাইসেন্স দেবে এবং বসার জন্য শেড করে দেওয়া হবে সরকার ও ব্যক্তি হকারের যৌথ উদ্যোগে। কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে নয়, সরাসরি হকারকেই এর জন্য আবেদন করতে হবে।
আমাদের মনে আছে, বাম সরকারের আমলে ‘অপারেশন সানশাইন’ কর্মসূচির মাধ্যমে নির্মম হকার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল তৎকালীন সরকার। তখন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিরোধের ভূমিকায় দেখেছিলাম আমরা। তারপর অবশ্য বিভিন্ন নির্বাচনের আগে বাম সরকারও কিছুটা সতর্ক হয়ে এগোনোর চেষ্টা করেছে। কারণ হকারি আমাদের চারপাশের এক বাস্তব চিত্র। বেকার কর্মক্ষম মানুষের সৎভাবে উপার্জনের একটা রাস্তা হকারি। তাই আজ সরকারি হিসেবেই এরাজ্যে ১৬ লক্ষ হকার। কলকাতায় সংখ্যাটা প্রায় পৌনে তিন লক্ষ। বাস্তবে হকারের সংখ্যা আরও বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই এই বাস্তবতার একটা স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের হকার নীতির মাধ্যমে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এখনকার পদক্ষেপেও বেশ অভিনবত্ব রয়েছে।
কিন্তু যে কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার ভালোদিকের পাশাপাশি কিছু চিন্তার বিষয় থাকে। আমরা এটাও জানি হকারদের মধ্যে যেমন স্থায়ী বা পুরোনো মানুষ রয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিদিন নতুন কিছু মানুষ এই সারিতে এসে যোগ দেয়। পুরোনো কিছু হকার ভালো রোজগারের অন্য উপায় পেয়ে সরেও যায়। সরকার বা রাষ্ট্রের নথিভুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে দুটো আশঙ্কা থাকেই। এক, লাইন বিক্রির যে প্রথা আছে, সেটা আরও জোরদার হবে। অর্থাৎ আমার হকারির জায়গা আমি বেশি টাকায় আর একজন বেকার মানুষকে ভাড়া দিয়ে বা বিক্রি করে আরও জোরালোভাবে শোষণ করব। দুই, নতুন লোক, যার এখনই পথের পাশে বসে কিছু বিক্রি করে জীবনধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে, তাকে বেআইনি এবং ‘অস্বীকৃত’ আখ্যা দিয়ে হটিয়ে দেব আইনসঙ্গতভাবেই। এগুলো সম্বন্ধে রাষ্ট্র বা তার আইন কী পদক্ষেপ নেবে, জানি না। কিন্তু নাগরিক সমাজ এবং হকারদের অবশ্যই এব্যাপারে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে।
Leave a Reply