পার্থ কয়াল, ফলতা, ১ এপ্রিল, একটি পরীক্ষাকেন্দ্রের ছবি লেখকের#
৩১ তারিখ প্রাইমারি শিক্ষকের পরীক্ষা। সারা রাজ্যে নাকি ৪৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী। ট্রেনে যেতে যেতে মাঝেরহাটে শিয়ালদার দিকের আপ ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, প্রচণ্ড ভিড়। লেডিস কম্পার্টমেন্টেও ছেলেরা উঠে পড়েছে। প্লাটফর্মে রয়ে গেছে আরও অনেকে — তাদের তারস্বরে চিৎকার। ট্রেন চলতে শুরু করে থামল। আবার কিছু লোক উঠল।
বজবজ যাচ্ছি। সহযাত্রী দুটি অল্পবয়সী ছেলে জিজ্ঞেস করল, বুড়ুল যাব কী করে? আমি জবাব দেওয়ার আগেই আরেক বয়স্ক লোক লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বললেন, আমিও যাব। আমি ণ্ণএসডি ৩০ বাস যাবে’ বলার আগেই বয়স্ক লোকটি বললেন, অটো করে তারপর ট্রেকার ধরে যেতে হবে, নাহলে দেরি হবে। ছেলেগুলো এসেছে ডায়মণ্ড হারবার থেকে। এরাও পরীক্ষা দেবে।
এসডি ৩০ বাসে উঠে দেখি স্বামী-স্ত্রী, পাশে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে, কোথায় যাবেন। পাশের ভদ্রলোক বারবার জিজ্ঞেস করছেন, আলমপুর চালকল যাব নামিয়ে দেবে। স্বামী স্ত্রীও সেখানে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন, দুজনের একই জায়গায় সিট? হেসে উত্তর : হ্যাঁ। কপাল ভালো। তা আপনাদের কত পরীক্ষার্থী টোটাল? ৪৫ লাখ? হ্যাঁ। দেখুন দু-জনে যাচ্ছেন যান। কার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন একজন, কবে পাশ? ২০০৬-এ গ্র্যাজুয়েট। এখন মনে আছে কিছু? ওই যা মনে আছে — হেসে ফেললেন মহিলা। লোকটি বললেন, স্টেশনারি দোকান চালাই। কার্ডের রিচার্জ করি। একটা বই কিনেছি। ওই তাতে যা হবার হবে।
পাশের জন বললেন, এই যে সবাই একসঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে। যারা ফ্রেসার্স, যে দশ বছর আগে পাশ করেছে আর যে পাঁচ বাচ্চার মা সবাই দিচ্ছে। পাবে কে? ফ্রেসার্স। আমাদের বেলায় ফ্রায়ার ব্রিগেডে রিক্রুটমেন্টে ৫৮ লাখ পরীক্ষা দিয়েছিল। আপনাদের ৩৫ হাজার নেবে, পরীক্ষা দিচ্ছে ৪৫ লাখ। তারপর কোর্ট কেস আছে। সব মিলিয়ে হয়ত ২০ হাজার নেবে। কোনো পার্সেনটেজে আসে? স্বামী-স্ত্রী হাসল। চেষ্টা তো করে যেতে হবে। তা ঠিক.
পরীক্ষার্থীদের সিট নিয়ে আরেক দফা মশকরা। ব্যারাকপুরের পরীক্ষার্থী, কম্পিটিশন কম হবে বলে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সেন্টার চেয়েছে, সিট পড়েছে সন্দেশখালি। আজ আরেক গুজব শুনলাম, ফর্ম ফিলাপ করেনি, কেবল ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়েছে, তারও পরীক্ষার সেন্টার চলে এসেছে।
পয়লা তারিখ সকালে শুনলাম প্রাইভেটে কাজ করা দু-জনের কথোপকথন। একজন আরেকজনকে বলছে, কি কাল কেমন পরীক্ষা দিলে? আরেকজন নিরুত্তর। পরীক্ষা ভালো হল? উত্তর, দা-রু-ণ। তারপর আর এটা নিয়ে কোনো কথা নেই।
একইরকম বাক্যালাপ আরেক জায়গায়। প্রাইভেটে কাজ করে। কাল পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছিলে? না বেরোইনি। একদিন ছুটি। আর যেতে ইচ্ছে করল না।
গতকাল পরীক্ষা কেন্দ্রে অনেক ছেলেকেই দেখা গেল, ওএমআর নাম্বার ঠিক করে লিখতে পারছে না, অভিজ্ঞতা নেই। ভুল ওএমআর নম্বর লিখে সাদা কালি দিয়ে মুছছে। গার্ডরা কিছু বলছে না, কারণ গার্ডদের নির্দেশ দেওয়া আছে এব্যাপারে সাহায্য না করতে। ষাট মিনিটের মধ্যে একশো নম্বর উত্তর করতে হবে, প্রথম পনেরো কুড়ি মিনিট ধরে নাম আর সই এত জায়গায় (৬ জায়গায়) করতে হচ্ছে যে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।
Leave a Reply