অশোক সাকসেরিয়া, কলকাতা, ১৫ জুন#
সমাজবাদী জন পরিষদের সম্পাদক সুনীল ২১ এপ্রিল মারা গেলেন।
সুনীল গুপ্ত উনি নিজের জীবনের প্রথমের দিকেই নিজের উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। অর্থশাস্ত্রে বি এ পাশ করে ১৯৮০ সালে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জে এন ইউ) ভর্তি হন সুনীল। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইংরেজির খুব প্রভুত্ব ছিল। সুনীল আসার পর সেখানে ইংরেজির প্রভুত্ব কমতে লাগলো। উনি মাতৃভাষা মাধ্যমে পড়ে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ নম্বর পান। তিনি সবসময় হিন্দিতে কথা বলতেন, ইংরেজি বোলচাল ঝাড়াদের আধিপত্যে কোণঠাসা সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা সুনীলের জন্য সাহস পায়।
ছাত্র রাজনীতিতে সমাজবাদী জনসভার হয়ে লড়লেন প্রথমবার এবং এস এফ আই কে হারালেন। সে সময় দিল্লির ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এস এফ আই-এর আধিপত্য ছিল চরম। বলা হোতো, চারটে জায়গায় সিপিএম-এর ক্ষমতা রয়েছে, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও জে এন ইউ। ১৯৮৩ তে ণ্ণসমতা এরা’ বলে একটা ইংরেজি মাসিক পত্রিকা আরম্ভ করলেন। তার পরেই ওই বছরেই আসামে ছাত্রদের সমর্থনে দিল্লি থেকে গুহায়াটি পর্যন্ত একটি ণ্ণসাইকেল যাত্রা’ সংগঠিত করেন। ১৯৮৪ দিল্লি থেকে অমৃতসর ণ্ণপদযাত্রা’ — পাঞ্জাবে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক রেকর্ড ছিল সুনীল। পিএইচডি করার সময় গবেষণার কাজ ছেড়ে মধ্যপ্রদেশে চলে গেলেন আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করতে। ১৯৮৫ থেকে ছ-সাত বার জেল গেছেন, মার খেয়েছেন।
আদিবাসীদের মধ্যে তিনি একটা বড়ো কাজ করেছিলেন — মধ্যেপ্রদেশ তাওয়া নদীর ড্যামের কারণে উচ্ছেদ হওয়া আদিবাসীদের জীবিকার সংস্থানে সহায়তা করা। ওই ড্যাম বানানোর জন্য অনেক জলাশয় ও বড়ো পুকুর জন্ম নিয়েছিল। ওই জলাশয়গুলোতে আদিবাসীদের মাছ ধরার শিক্ষা দিয়ে এবং বোট দিয়ে সমবায় গঠনে সুনীল ভূমিকা নেন। সেই সমবায়টি সফল হলো। কলকাতা অন্ধ্রপ্রদেশে মাছ পাঠাতে আরম্ভ করল তারা, যারা একটুও মাছ ধরতেও জানতো না। এই কাজের জন্য দেশের দু-জন লোক — গজানন্দ সাধু
(আপনা বাজার, মুম্বই-এর) এবং বাদারাম তুলতুলে (বোম্বের টেক্সটাইল শিল্পের পুনরুজ্জীবনে যুক্ত) — এদের সাহায্য নিলেন। এটা সফল হলে মধ্যপ্রদেশ সরকার বলল, তাওয়া গঞ্জের জলাশয়গুলো সাতপুরা টাইগার রিজার্ভের মধ্যে পড়ে। তাই মাছ ধরা হবে না। আদিবাসী সংগঠনদের তছনছ করল, আন্দোলনটা শেষ করে দিল, সমবায়কে ধ্বংস করে দিল সরকার।
সুনীল প্রথম থেকেই সমাজতন্ত্রী মতামতের লোক ছিলেন। জন আন্দোলনগুলির কো-অর্ডিনেশন থেকে সমাজবাদী জনপরিষদ তৈরি হলো ১৯৯৫ সালে। প্রথম থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট, মারা গেলেন যখন তখন সেক্রেটারি। ণ্ণসাময়িক বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদনা করছিলেন।
সম্প্রতি তিনি খুব মানসিক আঘাত পান, যখন সমাজবাদী জন পরিষদের বেশ কিছু লোক আম আদমি পার্টিতে যোগ দেয়।
সুনীলের স্ত্রী স্মিতা বাঙালী। এক ছেলে এক মেয়ে আদিবাসীদের সঙ্গেই পড়াশুনা করেছে। মারা যাওয়ার সময় ৫৪ বছর বয়স হয়েছিল সুনীলের। অর্থনীতি নিয়ে কুড়ি পঁচিশটা জনবোধ্য পুস্তিকা লিখেছেন সুনীল। নয়া উদারনীতির বিরুদ্ধে তিনি সবসময় ণ্ণকম ভোগকারী’ বা ণ্ণলো কনজাম্পশন’ সমাজের কল্পনা করতেন, এই কাজেই সুনীল নিজের মেধা ও কর্মদক্ষতা সমর্পন করেছিলেন।
Leave a Reply